ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সন্ধান। নন্দীগ্রামে। নিজস্ব চিত্র
ঝড়ের তাণ্ডব শেষ হয়েছে এক দিন আগে। কিন্তু সেই ঝড়ে ক্ষতি সামাল দিতে গিয়ে মাথায় হাত জেলবাসীর। কোথাও ভেঙে পড়া মাটির বাড়ি সারানোর মিস্ত্রি নেই, তো কোথাও গাছ কাটার মেশিন মিলছে না।
ঝড়ে প্রায় আড়াই লক্ষ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে। ঝড়ের একদিন পরে সেই ঘর সারাতে উদ্যোগী হয়েছেন বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু তাতে বাদ সেধেছে বাড়ি মেরামতির সামগ্রী টালি, বাঁশ এবং মিস্ত্রির অভাব। নন্দকুমার ব্লকের পরমানন্দপুর গ্রামে ভেঙে যাওয়া দোতলা মাটির ঘরে ত্রিপল দিন কাটছে কার্তিক সামন্তের পরিবারে। ফের বৃষ্টি হলে বাড়ি ভাঙার আশঙ্কা রয়েছে। তাঁরা চাইছেন দ্রুত বাড়ি মেরামত করতে। কিন্তু মিস্ত্রি নেই।
কার্তিকের কথায়, ‘‘বুধবার প্রতিবেশীর বাড়িতে ছিলাম। গ্রামে অন্তত ৫০টি বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু মেরামতির জন্য এলাকায় মাত্র দু’জন মিস্ত্রি রয়েছেন। তাঁদের দিয়েই সবাই বাড়ি সারাতে চাইছেন। কী করে হবে এতে! এছাড়া বাজারে টালি এবং বাঁশও পাওয়া যাচ্ছে না।’’ আর এক বাসিন্দা মন্টু সামন্ত বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার একজন মিস্ত্রিকে ডেকেছিলাম। চার ঘণ্টা কাজ করে কোনও রকমে বাঁশের কাঠামো করেছে। কিন্তু বাজারে টালি পাওয়া যায়নি।’’
প্রায় একই ছবি জেলার তমলুক ময়না ও শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায়। ময়না পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সুব্রত মালাকার বলেন, ‘‘লকডাউনে টালি, টিনের জোগানে সমস্যা রয়েছে। অনেক জায়গায় মিস্ত্রি অভাবেও বাড়ি মেরামত করা যাচ্ছে। বিষয়টি নজরে এসেছে। প্রশাসনকে জানানো হবে।’’
শিল্প শহর হলদিয়াতে আবার অন্য সমস্যা। সেখানে বুধবারের ঝড়ে কয়েক হাজার গাছ উপড়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই গাছ কাটার যন্ত্রচালিত করাতের কালোবাজারি হচ্ছে বলে অভিযোগ। পেট্রল চালিত ওই করাত দিয়ে মিনিট খানেকের মধ্যেই বড় বড় গাছ দ্রত কেটে ফেলা যায়। কুকড়াহাটি, কালিনগর, রামনগর-সহ একধিক গ্রামে ওই মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। সুতাহাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আঞ্জুমা বিবি জানান, ব্লক অফিস ও আমলাট স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও সুতাহাটার বিডিও আবাসনেই এই মেশিন ব্যবহার করে রাস্তা পরিষ্কার করতে হয়েছে। কিন্তু ওই করতাই এখন পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ।
মহিষাদলের ঘাঘরা গ্রামের বাসিন্দা সন্দীপ গুড়িয়া দিনভর ব্যস্ত ছিলেন গাছ কাটতে। তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ-সাত মিনিটের মধ্যেই একটি বড় গাছের গুঁড়ি কেটে ফেলা যায় এই করাতে। কিন্তু এই করাতের হাহাকার সব জায়গায়। আমি নন্দকুমার থেকে ন’হাজার টাকায় করাত এনেছি।’’ করাতের যে চাহিদা বেড়ে গিয়েছে, তা জানাচ্ছেন মহিষাদলের নামালক্ষ্যার এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘‘এক দিনে ২০টির বেশি এই গাছ কাটার মেশিন বিক্রি করেছি। হলদিয়া, মহিষাদলে থেকে লোক এসে কিনে নিয়ে গিয়েছেন। অনেকে আবার পুরাতন মেশিনের ব্লেড সারাতে আনছেন।’’
যদিও হলদিয়ার পুর পারিষদ আজিজুল রহমান বলেন, ‘‘আমাদের পুরসভার এই মেশিন একাধিক রয়েছে। তা বিভিন্ন ওয়ার্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে যে বিপুল পরিমাণ গাছ পড়েছে, তাতে এই মেশিনে আদৌ সামাল দেওয়া যাবে কি না বলা শক্ত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy