ফাইল চিত্র।
মন্ত্রিসভায় রদবদল করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে রদবদলের অভিঘাত ভালই পড়ল দু’জেলায়। স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত এক প্রতিমন্ত্রী পদ হারালেন। এক পূর্ণমন্ত্রীর দফতর বাড়ল। এক প্রতিমন্ত্রী পেলেন স্বাধীন দায়িত্ব। দফতর বদল হল আরেক প্রতিমন্ত্রীরও।
এই রদবদলে পদ হারিয়েছেন হুমায়ুন কবীর। কারিগরি শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ওই দফতর এ বার থেকে সামলাবেন ইন্দ্রনীল সেন। মানস ভুঁইয়া জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। সেই সঙ্গে তাঁকে দেওয়া হয়েছে পরিবেশ দফতর। তবে সাধন পাণ্ডের মৃত্যুর পর ক্রেতা সুরক্ষা দফতরও সামলাতে হত তাঁকে। সে দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যদিও দফতরটি থাকছে পশ্চিম মেদিনীপুরেরই এক মন্ত্রীর হাতে। তিনি শ্রীকান্ত মাহাতো। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এতদিন তিনি সামলাতেন ক্ষুদ্রশিল্প। এ বার তার বদলে ক্রেতা সুরক্ষার দায়িত্ব পাচ্ছেন। এই পরিবর্তনে অন্যতম উল্লেখযোগ্য মুখ হিসেবে উঠে এসেছেন বিরবাহা হাঁসদা। স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন বিরবাহা। তিনি বন দফতর এবং ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ক্রেতা সুরক্ষা দফতর বিরবাহার থাকে না থাকলেও বন দফতরের প্রতিমন্ত্রী থাকছেন তিনি।
২০২১ সালের ৩ মার্চ। কলকাতায় তৎকালীন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত থেকে দলের পতাকা নিয়েছিলেন বিরবাহা (বিরবাহা নামের অর্থ বনফুল)। নেহাতই ঘটনাচক্র। এক বছরের মধ্যেই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে পার্থ যখন জেলে তখনই রদবদল হল মন্ত্রিসভার। আরও বিকশিত হল ‘বনফুল’। বুধবার সাঁওতালি ভাষায় শপথ নিয়েছেন বিরবাহা। যার রাজনৈতিক অর্থ— মন্ত্রিসভায় আদিবাসী সমাজের অন্যতম মুখ হয়ে উঠতে চলেছেন সাঁওতালি সিনেমার মহানায়িকা বিরবাহা। যে পার্থের হাত থেকে পতাকা নিয়েছিলেন মন্ত্রী হওয়ার পর অবশ্য তাঁর থেকে দূরত্ব রাখতে শুরু করেছিলেন বিরবাহা। আগে মায়ের দল ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর সম্পাদক ছিলেন বিরবাহা। বিভিন্ন সময়ে বিধানসভা, পুরসভা ও লোকসভা ভোটে মায়ের দলের প্রার্থী হয়ে তিনবার হেরেছিলেন। আর তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে গত বছর বিধানসভা ভোটে বিপুল ভোটে জিতে সমালোচকদের মুখবন্ধ করে দেন ‘বনফুল’। ঝাড়গ্রামে যখন ‘পার্থ যুগ’ (ঝাড়গ্রামের দায়িত্বে ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়) চলছে তখন সে ভাবে গুরুত্ব না পেলেও এমন কিছু কাণ্ড ঘটাননি যা দলের পক্ষে অস্বস্তির কারণ হতে পারে। কারণ তিনি ভালই জানতেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের তিনি। সবুর ধরে মেওয়া পেলেন বনফুল। এ দিন শপথ নেওয়ার পর বললেন, ‘‘ওই দফতরে অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে। জঙ্গলমহলের আদিবাসী-মূলবাসী ও পিছিয়ে পড়া মহিলাদের স্বনির্ভর করার কর্মসূচিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করব।’’
ডেবরার বিধায়ক প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুনকে কেন মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার স্পষ্ট ব্যখ্যা পাওয়া যায়নি। মন্ত্রিত্ব হারানোর পরে এ দিন হুমায়ুনের ফোন সুইচড অফ ছিল। তবে তৃণমূলের একটি সূত্র বলছে, গত কয়েকমাস ধরেই হুমায়ুনের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর অসন্তোষ ধরা পড়ছিল। হুমায়ুন পরপর যে চাকরি মেলা করছিলেন তা মেনে নিতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। মাসকয়েক আগে নেতাজি ইন্ডোরে একটি সভায় মুখ্যমন্ত্রী ওই চাকরি মেলা বন্ধ করার নির্দেশও দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গেই সামনে চলে এসেছিল ডেবরার এক তরুণীকে কারিগরি শিক্ষা দফতরে চাকরি দেওয়ার নামে নিজের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করানোর অভিযোগ। যদিও তার পরে মুখ্যমন্ত্রী জেলায় এলেও হুমায়ুনের প্রতি তেমন কোনও শব্দ খরচ করেননি। কিন্তু এ বার মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়লেন হুমায়ুন। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের জেলা আহ্বায়ক অজিত মাইতি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী কী কারণে হুমায়ুন কবীরকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিয়েছেন সেটা আমার পক্ষে জানা খুব কঠিন।”
জন্মদিনেই মন্ত্রী হিসাবে বাড়তি দায়িত্ব পেয়েছেন মানস। মূলত বর্ষীয়ান এই বিধায়কের সঙ্গে এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুসম্পর্ক এমন বাড়তি দায়িত্বের নেপথ্যে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এ দিন ছিল মানসের জন্মদিন। সকাল থেকেই শুভেচ্ছার মাঝে বাড়তি দায়িত্ব পেয়ে মানস বলেন, “খুব ভাল লাগছে। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া সমস্ত দায়িত্ব আমার কাছে উপহার। জলসম্পদের উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। আশা করছি আমি দুই দফতরের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করব।”
প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। তবে দফতর বদল হয়েছে শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্তের। তিনি ছিলেন ক্ষুদ্রশিল্প প্রতিমন্ত্রী। এ দিনের রদবদলের পরে হয়েছেন ক্রেতা সুরক্ষা প্রতিমন্ত্রী। শ্রীকান্ত বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ভরসা রেখেছেন। নতুন দফতর। দায়িত্ব ভাল ভাবে পালন করার সব রকম চেষ্টা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy