Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫

দলের তহবিলে ১১ লক্ষ দান সিপিএম নেতার

রাজ্য জুড়ে কাটমানির এমন আবহে গরমে এক ঝলক ঠান্ডা বাতাসের মতোই উঠে এল সম্পূর্ণ ভিন্ন ছবি।

বিমান বসুর হাতে চেক তুলে দিচ্ছেন নিরঞ্জন সিহি। নিজস্ব চিত্র

বিমান বসুর হাতে চেক তুলে দিচ্ছেন নিরঞ্জন সিহি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৯ ০০:০২
Share: Save:

সরকারি প্রকল্প কিংবা চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগ তুলে পোস্টার, বিক্ষোভের ঘটনার বিরাম নেই। যাতে নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের একাধিক নেতা-কর্মীর। বাদ যায়নি বিজেপিও। রাজ্য জুড়ে কাটমানির এমন আবহে গরমে এক ঝলক ঠান্ডা বাতাসের মতোই উঠে এল সম্পূর্ণ ভিন্ন ছবি। যে ছবি তুলে ধরলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের সম্পাদক তথা জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি নিরঞ্জন সিহি।

রাজ্যে বামপন্থী আন্দোলনে যখন অনেকটাই ভাটা, বিরোধী হিসাবে পায়ের তলার মাটি অনেকটাই আলগা সিপিএমের সেই সময় দলের একনিষ্ঠ কর্মী হিসাবে দলের প্রতি নিজের কর্তব্যের তাগিদে দলের তহবিলে ১১ লক্ষ টাকা দান করলেন নিরঞ্জনবাবু। পারিবারিক জমি বিক্রি বাবদ পাওয়া টাকা থেকেই ওই অর্থ দলের হাতে তুলে দিয়েছেন তিনি। যা নিয়ে সিপিএম তো বটেই, জেলার রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে।

এই জেলাতেই একদা সিপিএমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা ছিলেন লক্ষ্মণ শেঠ। প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণের সম্পত্তি নিয়ে বার বার প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। শেষ পর্যন্ত দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে দল বহিষ্কার করে। আবার মুর্শিদাবাদের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ তথা দলের রাজ্য কমিটির সদস্য মইনুল হাসানের বিরুদ্ধে দলকে গোপন করে সম্পত্তি বৃদ্ধির অভিযোগ উঠেছিল। দলীয়ভাবে তদন্ত করার মাঝেই দল ছাড়ার কথা জানিয়েছিলেন মইনুল। তাঁকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। এই সব ঘটনা আর শাসক দলের বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিরঞ্জনবাবুর এমন কাজকে ব্যতিক্রমী হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক মহল।

পাঁশকুড়ার রাতুলিয়া এলাকার তিলাগেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা নিরঞ্জনবাবুর রাজনৈতিক হাতেখড়ি ১৯৭৬ সালে সিপিএমের কৃষক সংগঠন কৃষকসভায় যোগদানের মাধ্যমে। পরের বছরেই সিপিএমের পার্টি সদস্যপদ লাভ। হয়ে গেলেন দলের সর্বক্ষণের কর্মী। ৬ বার জেলা পরিষদের সদস্য ও একবার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হন। জেলা ভাগের পর ২০০২ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি হন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন। এর পর দলের জেলা সম্পাদক হন। অকৃতদার ষাটোর্ধ্ব নিরঞ্জনবাবুর দাদা, দুই ভাইঝি, এক দিদি ও এক বোন রয়েছেন।

পারিবারিক জমি বিক্রির টাকা থেকে পাওয়া ১১ লক্ষ টাকা গত মঙ্গলবার কলকাতায় সিপিএমের রাজ্য দফতরে বিমান বসুর হাতে তুলে দেন। এ বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে নিরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘আমি দলের সর্বক্ষণের কর্মী। দলে অনেক নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়ে রয়েছেন। তাই আমি আশাবাদী দলের সংগঠন ফের শক্তিশালী হবে। আমাকে দেখে মানুষ যদি উৎসাহিত হয়, তা হলে আমার এই কাজ সার্থক বলে মনে করব।

বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘কাটমানি আর ব্ল্যাকমানির দূষণের মাঝে বামপন্থীরা ব্যক্তিস্বার্থের উপরে জনস্বার্থে এখনও কাজ করছেন। অতীতেও বহু মানুষ নিজের উপার্জিত টাকা দলের জন্য দান করেছেন। এখনও শহরে-গ্রামে বহু মানুষ অবসরকালীন পাওনাটুকুও দলের তহবিলে দেন। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদকের কাজ সেই রকমই আরও একটি দৃষ্টান্ত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

CPM TMC BJP Bribe
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy