নিজের বাড়িতে নন্দরানি। পাশে ডহরেশ্বর। নিজস্ব চিত্র
২০০১ সাল। কেশপুরে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘কেশপুর, সিপিএমের শেষপুর’। সে বার বিধানসভা ভোটে কেশপুরে সিপিএমের জয়ের ব্যবধান আরও বেড়ে গিয়েছিল! দলের প্রার্থী নন্দরানি ডল জিতেছিলেন প্রায় ১ লক্ষ ৮ হাজার ভোটে। রেকর্ড মার্জিনে। নিন্দুকেরা বলেন, ‘ভূতুড়ে’ ভোটে এমন জয়। আজও মানতে চান না নন্দরানি। বরং সেদিনের জয় নিয়ে তিনি গর্বিতই। তাঁর কথায়, ‘‘১ লাখ ৮ হাজার ভোটে জিতেছিলাম। মানুষ ভোট দিয়েছিলেন। দীর্ঘদিনের লড়াই, সংগ্রামের ফল। এ নিয়ে যাঁরা সমালোচনা করেন,সবদিনই করবেন!’’
বয়স ৮০ পেরিয়েছে। বাড়িতে শয্যাশায়ী। হাই সুগার, ব্রঙ্কো নিউমোনিয়ায় ভুগছেন। গত বছর প্রায় এক মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। কোভিডের সঙ্গেও যুঝেছেন। শনিবার কেশপুরে সভা রয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সংবাদপত্র পড়ে সেটা দিন কয়েক আগেই জেনেছেন। নন্দরানি আশাবাদী, কেশপুরে সিপিএম ঘুরে দাঁড়াবে। তাঁর কথায়, ‘‘কেশপুরে পার্টি ঘুরে দাঁড়াবে। কেশপুরের মানুষ আজও পার্টিকেই ভালবাসে।’’ জুড়েছেন, ‘‘মাঝখানে এসে গন্ডগোল করেছে তৃণমূল। তৃণমূলের জন্মের পরেই গন্ডগোল হয়েছে কেশপুরে। আজও কেশপুরের মানুষ পার্টিকেই ভালবাসে।’’ তৃণমূলকে আরও শক্তপোক্ত করতে অভিষেক আসছেন যে? নন্দরানি বলছিলেন, ‘‘যাবে, আসবে। জোর করে কি সমর্থন আদায় করা যায়? কিছু দিন যায়। বেশি দিন যায় না। কেশপুরের মানুষ আজওপার্টিকেই ভালবাসে।’’
রেকর্ড মার্জিনে জয়ের পরে মন্ত্রী হয়েছিলেন নন্দরানি। তিনি জনশিক্ষা প্রসার মন্ত্রী হয়েছিলেন। বাড়ি মেদিনীপুর শহরের বিধাননগরে। দোতলার এক ঘরেই দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে তাঁর। সঙ্গী মার্কসীয় সাহিত্যের বইপত্র। নিয়মিত বইপত্র পড়েন। নন্দরানি এক সময়ে মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদক ছিলেন। তখন মেদিনীপুর অবিভক্ত। তাঁর স্বামী ডহরেশ্বর সেন সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক ছিলেন। নন্দরানির প্রথম ভোটে দাঁড়ানো ’৬৭ সালে। ঘাটাল থেকে। তখন তিনি ঘাটাল কলেজের ছাত্রী। নন্দরানি বলছিলেন, ‘‘তখন কলেজে পড়ি। কলেজে পড়াকালীনই প্রার্থী হই।’’ ডহরেশ্বর বলছিলেন, ‘‘১৯৬৭ সালে অবিভক্ত মেদিনীপুরে সিপিএমের একমাত্র বিধায়ক হয়েছিল ও। ভোটে প্রার্থী হওয়ার জন্য ওকে বয়স বাড়াতে হয়েছিল। মধ্যশিক্ষা পর্ষদে আবেদন করে বয়স বাড়াতে হয়েছিল।’’ ছাত্র আন্দোলন করার সূত্রেই ডহরেশ্বরের সঙ্গে আলাপ নন্দরানির। ডহরেশ্বর বলছিলেন, ‘‘৬৯ সালে আমি দাসপুরে দলের ইলেকশন ইনচার্জ ছিলাম। দলীয় প্রার্থী ছিলেন মৃগেন ভট্টাচার্য। ও (নন্দরানি) সে বারও ঘাটালে দাঁড়িয়েছিল।’’ তিনবার ঘাটাল থেকে জিতেছিলেন নন্দরানি। পরে চলে আসেন কেশপুরে। কেশপুর থেকেও তিনবার জিতেছেন।
শনিবার আনন্দপুরের মাঠে সভা করবেন অভিষেক। মাঠের অদূরে বড় জলাধার রয়েছে। নন্দরানি বলছিলেন, ‘‘আমার সময়েই ওই জলের ট্যাঙ্ক করেছি। কেশপুর কলেজ আমরা করেছি। সুকুমার সেনগুপ্তের নামে। কেশপুরে অডিটোরিয়াম করেছি। মানুষের জন্য যা কাজ করা সম্ভব করেছি।’’ নন্দরানি বলছিলেন, ‘‘সুকুমার সেনগুপ্ত আমাকে মানুষ করেছেন। আমার মেয়েদের মানুষ করেছেন। আমি এখনও পার্টি মেম্বার। লেভি যা দেওয়ার দিই। এমএলএ পেনশন থেকেও। ডহরেশ্বরও বলছিলেন, ‘‘সুকুমারদাই ওকে মানুষ করেছে ছোট থেকে।’’ কয়েক দিন আগে ডাক্তার দেখাতে বেরিয়ে ঘুরে এসেছেন জেলা পার্টি অফিস থেকেও। নন্দরানি বলছিলেন, ‘‘বয়স হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy