পুজো আসতে বাকি নেই বেশি। খড়্গপুরের ইন্দায় এভাবেই ফাঁকা পড়ে হোর্ডিং পোস্ট। নিজস্ব চিত্র
শহরের পথের ধারে বিশাল লোহার ফ্রেমে বিজ্ঞাপনের ফ্লেক্স। সেখানে একটি ঠান্ডা পানীয়ের বোতলের ছবির সঙ্গে সঙ্গে ডাকের সাজে প্রতিমার উজ্বল মুখ। নীচে লেখা ‘এ বার জমবে মজা’! পাশেই আরেকটি হোর্ডিংয়ে বনেদি বাড়ির প্রতিমাকে আরতির দৃশ্য। সঙ্গে একটি নারকেল তেলের টিনের কৌটো। নীচে লেখা রয়েছে, ‘আনন্দে উৎসবে বাংলার ঘরে-ঘরে...’
দেবী পক্ষের সূচনার মাস দেড়েক আগেই জেলার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ধার ছেয়ে যেত এমনই নানা বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংয়ে। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি আলাদা। অন্তত হোর্ডিং দেখে সেভাবে বোঝার কোনও উপায় নেই যে দুর্গাপুজোর আর মাসখানেক বাকি। রাস্তার ধারে সারি দিয়ে ফাঁকা পড়ে রয়েছে লোহার ফ্রেম। অন্য বছর এই সময় থেকেই পুজো কমিটিগুলোর প্রচার শুরু হয়ে যেত। কে কী থিম করছে সব জানা যেত তাদের ফ্রেক্স দেখে। অনেক পুজোর তোরণও তৈরি হয়ে যেত। এ বার সে সব এখনও পর্যন্ত নেই বললেই চলে। এই ‘নিউ নর্মাল’ পরিস্থিতিতে মুখ ভার বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলিও।
করোনার জেরে আর্থিক মন্দা থাকলেও পুজোর আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশা করেছিলেন অনেকে। তবে তা হয়নি। তাই বিজ্ঞাপনদাতারাও এ বার বিজ্ঞাপন দিতে চাইছেন না। খড়্গপুর শহরের মালঞ্চর বাসিন্দা জেলার একটি হোর্ডিং সংস্থার কর্ণধার অভিনব দাশগুপ্ত বলেন, “অন্য বছরে পুজোর আগে বিজ্ঞাপনের এত চাপ থাকে যে অন্য হোর্ডিংও ভাড়ায় নিতে হয়। এপ্রিলের পর থেকেই বিজ্ঞাপন আসতে শুরু করে। পুজোর জন্য অগস্ট থেকে বুকিং হয়। কিন্তু এ বার এখনও কোনও বিজ্ঞাপন পাইনি।” ঘটনায় এই পেশার সঙ্গে যুক্ত ফিটার ও ছাপাখানার কর্মীরাও এ বার সমস্যায়। খড়্গপুরের সুভাষপল্লির একটি ছাপাখানার মালিক আশিস মাইতির আক্ষেপ, “করোনার জেরে সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেল। এই সময়ে প্রতিবার পুজো কেন্দ্রিক বিজ্ঞাপনের ফ্লেক্স ছাপানোর কাজ প্রায় শেষ হয়ে যায়। সেখানে এ বার কোনও কাজ নেই। ”
ঝাড়গ্রামেও ছবিটা প্রায় এক। এবার সেখানেও এখনও বিজ্ঞাপনের অর্ডার আসেনি বললেই চলে। ঝাড়গ্রামের একটি অফসেট প্রেসের সংস্থার কর্ণধার মনোজ দাস ও পঙ্কজ দাস জানালেন, গত বছর মহালয়ার আগে ঝাড়গ্রাম জেলা ও পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড মিলিয়ে ৬৮টি পুজো কমিটির ফ্লেক্স-ব্যানার বানিয়েছিলেন তাঁরা। এবার এখনও পর্যন্ত ঝাড়গ্রাম জেলার তিনটি পুজো কমিটি ফ্লেক্স-ব্যানার তৈরি করতে দিয়েছে। চাঁদার বিল বই ছাপানোও কমেছে। যে পুজো কমিটি গতবার দু’হাজার চাঁদার রসিদ ছাপিয়েছিল, তাঁরা এবার পাঁচশোটি রসিদ বই ছাপতে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে যে সব সংস্থার নিজস্ব হোর্ডিং রয়েছে তারা পুরসভাকে জমি ভাড়ার টাকা কী ভাবে দেবে তা ভেবে পাচ্ছে না। মেদিনীপুরের একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্ণধার বিকাশ সিদ্ধান্তের দাবি, “গোটা জেলায় আমার ছোট-বড় মিলিয়ে ৭০টি হোর্ডিং রয়েছে। শুধু মেদিনীপুর শহরে রয়েছে ২৫টি হোর্ডিং। পুজোর সময়ে সেখানে প্রচুর বিজ্ঞাপন আসে। শুধু পুজোতেই বাড়তি ৩ লক্ষ টাকার কাজ হয়। কিন্তু এ বার কিছুই হচ্ছে না। পুরসভার ভাড়ার টাকা কীভাবে দেব সেটাই ভাবছি।” সমস্যার কথা মানলে বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলির ভাড়ার টাকা মুকুব নিয়ে পুরসভাগুলি এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। যেমন খড়্গপুর পুরসভার পুরপ্রশাসক তথা বিধায়ক প্রদীপ সরকার বলছেন, “এটা ঠিক যে হোর্ডিংয়ের ব্যবসা ধাক্কা খাচ্ছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে পুরসভারও আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ। এমন পরিস্থিতিতে হোর্ডিং ভাড়ার টাকা মুকুব করা যাবে না। তবে দাবি এলে বিবেচনা করব।”
(তথ্য সহায়তা : দেবমাল্য বাগচী ও কিংশুক গুপ্ত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy