শুভেন্দু অধিকারী।—ফাইল চিত্র।
মুখে বলছেন দলের প্রতি আস্থার কথা। তবে রেলশহরের বিধানসভা উপ-নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে দলের উপর ভরসা হারাচ্ছেন শাসকদলের একাংশ।
তৃণমূলের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় দীনেশ ত্রিবেদীর নাম সামনে আসতেই শোরগোল পড়েছে। শহরের পুরপ্রধানকে প্রার্থী করতে ১৯জন কাউন্সিলর রীতিমতো সই করে দাবিপত্র পাঠিয়েছেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীকে।
উপ-নির্বাচনে শহরের বাইরের প্রার্থী না-পসন্দ জানিয়ে ওই দাবিপত্রে সই করছেন তৃণমূলের ২৬জন কাউন্সিলরের ১৯জন। সেই সঙ্গে স্থানীয় কাউকে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার তাঁদের প্রথম পছন্দ বলেও জানিয়েছেন ওই কাউন্সিলরেরা।
অবশ্য ২৬জন কাউন্সিলরের মধ্যে প্রদীপ সরকার বাদে বাকি ৬জন কাউন্সিলর সই না করায় মিলেছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ইঙ্গিত। গভীর রাতে বাড়িতে এসে জোর করে দাবিপত্রে সই করানো হয়েছে, এমন অভিযোগও শুভেন্দুকে জানিয়েছেন একাংশ কাউন্সিলর। সব মিলিয়ে উপ-নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণার আগেই প্রার্থী বাছাই নিয়ে তৃণমূলের অন্দরের সংঘাতের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে।
তৃণমূলের জেলা নেতা তথা রেলশহরের কাউন্সিলর দেবাশিস চৌধুরী ও পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কারও অজানা নয়। তৃণমূলের সূত্রে খবর, এখন দেবাশিসের সঙ্গে রয়েছেন তৃণমূলের শহর সভাপতি রবিশঙ্কর পাণ্ডে। আর প্রদীপের সঙ্গে প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পাল ও উপ-পুরপ্রধান শেখ হানিফ। সব মিলিয়ে দুই গোষ্ঠীর পাঁচ ‘মাথা’ নিয়ে ঘোর বিড়ম্বনায় তৃণমূল। বারবার শহরে এসে শুভেন্দুও একযোগে এই পাঁচ নেতার নাম করে একসঙ্গে কাজ করার বার্তা দিচ্ছেন। তবে পাঁচ নেতার মধ্যে কোনও একজনকে প্রার্থী করলে দল ভাঙার আশঙ্কাও রয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের। তাই রেলশহরের বাইরে থেকে কাউকে প্রার্থী করার ভাবনা ছিল। আর সেক্ষেত্রে উঠে এসেছিল প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী ও প্রাক্তন সাংসদ রত্না দে নাগের নাম। যদিও রত্না আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি প্রার্থী হবেন না।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন দীনেশের নাম সামনে আসতেই বৃহস্পতিবার রাতে উপ-পুরপ্রধান শেখ হানিফের ডাকা নৈশভোজে দাবিপত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। বয়ান লেখেন জহরলাল পাল। পরে সেখানে উপস্থিত কয়েকজন কাউন্সিলরের পাশাপাশি বাড়ি-বাড়ি গিয়ে মোট ১৯জন কাউন্সিলরের সই নেওয়া হয়। উপ-পুরপ্রধান শেখ হানিফ মানছেন, “বাইরের কেউ প্রার্থী হলে সমস্যা হবে। আমরা তাই শহরের মধ্যে থেকে পছন্দের প্রার্থী হিসাবে প্রদীপ সরকারের নাম দাবিপত্রে লিখেছি। ১৯জন কাউন্সিলর সই করেছেন। হোয়াটস অ্যাপে জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীকে সেই দাবিপত্র পাঠিয়েছি।” কিন্তু বাকি ৬জন কাউন্সিলর সই করেননি কেন? হানিফের সাফ জবাব, “আমাদের যাঁরা পছন্দের কাউন্সিলর তাঁদের ডেকেছিলাম। তাঁরাই সই করেছেন।”
প্রদীপ-বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা দেবাশিস চৌধুরী পাল্টা বলছেন, “এই বিষয়টি জানি না। আমি এটুকু জানি, দল ৫জনের একটি কমিটি করে দিয়েছে দল। সেই কমিটি আলোচনা করে সব কিছু করবে।” দাবিপত্রে জোর করে সই করানোর অভিযোগ তুলে ৭নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কল্যাণী ঘোষের আবার বক্তব্য, “রাতদুপুরে বাড়িতে এসে আমাকে চাপ দিয়ে ওই দাবিপত্রে সই করানো হয়েছে। আমি শুভেন্দু অধিকারীকে সব জানিয়েছি।”
গোটা ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের আঁচ থাকায় বিঁধতে ছাড়ছে না বিজেপি। দর জেলা সহ-সভাপতি গৌতম ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূলনেত্রীর উপর মানুষের পাশাপাশি দলের নেতা-কাউন্সিলরদের আস্থা নেই বলেই এমন দাবিপত্র পাঠাচ্ছে। তাছাড়া তৃণমূলের ২৬জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৯জন সই করায় গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব স্পষ্ট। এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই ধুয়ে-মুছে যাবে তৃণমূল।”
যাঁকে প্রার্থী করা ঘিরে এতকিছু, সেই পুরপ্রধান প্রদীপ বলছেন, “২০২০ সালের পুরভোটের দিকে তাকিয়ে এই উপ-নির্বাচনে বাইরের কাউকে প্রার্থী না করতে কাউন্সিলরেরা ওই দাবিপত্র লিখেছে বলে শুনেছি। তবে আমি তাতে সই করিনি। দলনেত্রীর প্রতি আস্থা রয়েছে। তিনি যাঁকেই প্রার্থী করবেন আমরা তাঁর হয়েই লড়াই করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy