Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
মৎস্যজীবীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে বেনফিশ

বেহুন্দি প্রকল্পে ফের ‘দুর্নীতি’

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:২৭
Share: Save:

কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বেহুন্দি’ এবং ‘ইন্টিগ্রেটেড মেরিন ফিশারম্যান ডেভলপমেন্ট’ (আই এমএফডি) প্রকল্পে ঋণ ও ভর্তুকি নিয়ে একাধিক কো-অপারেটিভ সোসাইটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়েছিলেন মৎস্যজীবীরা। একই ভাবে সমিতির সদস্যদের না জানিয়ে ঋণ এবং ভর্তুকি বাবদ টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠল দেশপ্রাণ ব্লকের ‘ভোগপুর মেরিন কো-অপারেটিভ ফিশারমেন’-এর বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে ওই সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক সহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন সমিতির মৎস্যজীবীরা। সুষেণ মান্না নামে ওই সমিতির এক সদস্যের অভিযোগ, মৎস্যজীবী নয় এমন ব্যক্তিকেও সদস্যপদ পাইয়ে দিয়ে লঞ্চ কেনার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া অধিকাংশ সদস্যের কাছ থেকে সাদা কাগজে সই করিয়ে শুধুমাত্র ভর্তুকি বাবদ সামান্য টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য জাল কেনা বাবদ ‘বেহুন্দি’ এবং ইঞ্জিন চালিত লঞ্চ কেনার জন্য ‘আইএমএফডি’ প্রকল্পে মৎস্যজীবীদের ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে কেন্দ্রের। শর্ত, ঋণ পরিশোধ করার পর ওই পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি পাবেন সংশ্লিষ্ট মৎস্যজীবী। ইতিমধ্যেই রামনগর-২ ব্লকের দাদনপাত্রবাড় ও জলধা মেরিন কো-অপারেটিভ সোসাইটি বিরুদ্ধে এই দুই প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতি করা হয়েছে বলে জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে সেখানকার মৎস্যজীবীদের। এ বার একই অভিযোগ তুললেন ভোগপুর মেরিন কো-অপারেটিভ সোসাইটির সদস্য মৎস্যজীবীরা।

কী বাবে এই দুই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে?

ধরা যাক, এক মৎস্যজীবী জাল এবং ইঞ্জিন চালিত লঞ্চ কেনার জন্য ঋণ নেননি। অথচ মেরিন কো-অপারেটিভ সোসাইটির মারফত ভর্তুকির টাকা তিনি পেয়ে গিয়েছেন। অথচ ওই প্রাপক জানতে পারলেন না তাঁর নামে কত টাকা ঋণ বরাদ্দ হয়েছিল এবং কত টাকাই বা ভর্তুকি হিসেবে এসেছে। মূলত এমন কয়েকজন ভুয়ো মৎস্যজীবীর নথি ভোগপুর মেরিন কো-অপারেটিভ সোসাইটি বেনফিশকে পাঠিয়ে দিয়েছিল। তার ভিত্তিতে ভর্তুকি বাবদ টাকা ওই সোসাইটিকে পাঠিয়ে দেয় বেনফিশ। অভিযোগ, ২০১৬-’১৭ ও ২০১৭-‘১৮ সালে অভিযুক্ত সোসাইটি বেহুন্দি প্রকল্পে যথাক্রমে ১১ লক্ষ ৯০ হাজার এবং ২৮ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা পেয়েছিল। আইএমএফডি প্রকল্পে ওই সোসাইটিকে ১৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা দেওয়া হয় বলে বেনফিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু নথির সত্যতা যাচাই না করে কী ভাবে বেনফিশ এ ভাবে ভর্তুকির টাকা দিল, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

ঘটনাটি জানার পর মৎস্য দফতরকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন জেলাশাসক। কিন্তু তাঁরা তদন্ত করতে পারবেন না বলে গত ১১ নভেম্বর জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন সহ-মৎস্য অধিকর্তা (মেরিন) সুরজিৎ বাগ। তাঁর দাবি, রাজ্য সরকার বেনফিশ-এর মাধ্যমে এই প্রকল্প কার্যকর করেছিল। তাই এ ব্যাপারে মৎস্য দফতর কিছু করতে পারবে না।

এ ভাবে বারবার একাধিক ‘মেরিন কো-অপারেটিভ সোসাইটি’-র বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও প্রশাসন নীরব থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে মৎস্যজীবী সংগঠনগুলি। কাঁথি মহকুমা খটি মৎস্যজীবী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত খুটিয়া বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পের টাকা কী ভাবে নয়ছয় করা হচ্ছে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এরপরেও প্রশাসন কেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে না, তা রহস্যজনক।’’ পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরামের নেতা শ্রীকান্ত দাসের দাবি, ‘‘প্রমাণ সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে ভেবেছিলাম। কিন্তু অভিযুক্তরা বহাল তবিয়তেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। উল্টে সাধারণ মৎস্যজীবী যাঁরা অভিযোগ জানিয়েছিলেন তাঁরাই এখন ভয়ে লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন।’’

অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে ভোগপুর মেরিন কো-অপারেটিভ সোসাইটির সভাপতি হৃষিকেশ জানা বলেন, ‘‘সমিতির কোন কোন সদস্য এই প্রকল্পে টাকা পাবেন সে ব্যাপারে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু মৎস্যজীবী নয় এমন কাউকে সদস্য করার বিষয়টি আমাদের আড়ালে রেখেই করা হয়েছে।’’

জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘মৎস্য দফতর কেন এই ঘটনার তদন্ত করবে না সে বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Benfish Behundi Contai
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy