স্বচ্ছতার লক্ষ্যে চালু হওয়া ই-টেন্ডারেও দুর্নীতির অভিযোগ।
ঘটনাটি মেদিনীপুর সদর ব্লকের। স্থানীয় শিরোমণি গ্রাম পঞ্চায়েতের খাসজঙ্গলে একটি নতুন আবাসিক মডেল স্কুল ও হস্টেলের (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার জন্য টেন্ডার ডাকা হয় গত মাসে। অর্থের পরিমাণ ৯৪ লক্ষ ১৭ হাজার ৬৭০ টাকা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরঞ্জাম কেনার নির্দিষ্ট মাপকাঠি দেয়নি প্রশাসন। তাতে বলা হয়েছে— ‘উন্নত মান’ (গুড কোয়ালিটি) অথবা স্কুলের ‘ইন-চার্জের নির্দেশ’ (অ্যাজ ডিরেকশন বাই ইন-চার্জ) বলে।
কিন্তু এই ‘উন্নত মানে’র বিচার করবে কে? বলা হয়েছে পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা, রসায়ন ও ভূগোলের পরীক্ষাগার, ওয়ার্কশপ ও খেলাধুলোর সরঞ্জাম কেনা হবে স্কুল ইন-চার্জের নির্দেশ মতো। শিক্ষকদের বসার চেয়ার শাল বা সেগুন কাঠের ও টেবিল কেনা হবে রট আয়রনের। কিন্তু মাপ সম্পর্কে কিছু বলা নেই। ওজন বা ঘনত্ব কতটা হবে, তারও উল্লেখ নেই। অনেকেই বলছেন, তবে কি কম দামের যে কোনও মাপের জিনিস কিনেই চালিয়ে দেওয়া হতে পারে? ‘ভাল’ কাঠের বিবরণে বলা হয়েছে স্থানীয় শক্ত কাঠ। কোন জিনিস কত দামের মধ্যে কেনা হবে নেই তার উল্লেখও। ছাত্র ও ছাত্রীদের দু’টি হস্টেলের জন্য ১৯ লক্ষ ১১ হাজার করে মোট ৩৮ লক্ষ ২২ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। হাইস্কুলের জন্য ৪১ লক্ষ ৯১ হাজার ৫৫০ টাকা ও প্রাথমিকের জন্য ১৪ লক্ষ ৪ হাজার ১২০ টাকার সরঞ্জাম কেনা হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ৯৪ লক্ষ টাকার টেন্ডার ডাকা হয়েছে।
যিনি তালিকা তৈরি করেছেন, তিনি চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, ব্লকের স্থায়ী সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার নন। অভিযোগ, স্থায়ী পদে চাকরিরত ইঞ্জিনিয়ার সহজে এমন কাজ করতে রাজি হবেন না ভেবেই এই কৌশল। ২০-২২ লক্ষ টাকার কাজের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ক্রেডেনশিয়াল দেখতে চাওয়াটা নিয়ম। তাও কমিয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসককে অভিযোগ করেছেন সুরেন্দ্রনাথ দত্ত। তাঁর দরপত্র বাতিল হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, নিয়ম মেনে প্রথমে ছ’জন দরপত্র পেশ করেন। তার মধ্যে তিনজনকে অসাধু উপায়ে ‘টেকনিক্যাল বিড’-এ বাতিল করা হ। ২৩ জুন সকাল ১১টার মধ্যে প্রত্যেক ঠিকাদারকে তাঁদের আসল নথি দেখানো, আর্নেস্ট মানি ও টেন্ডার ফর্মের টাকা অফলাইনে জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ সে সব বানচাল করে দেওয়া হয় বলে সুরেন্দ্রনাথবাবু জানিয়েছেন।
সত্যেন্দ্রনাথবাবুর দাবি, ‘‘সকাল ১১টার অনেক আগেই সব নথি নিয়ে বিডিও অফিসে হাজির হই। কিন্তু কেউ নথি দেখতে চাননি। আর্নেস্ট মানির ড্রাফট বা ফর্মের টাকা যে ড্রপ বক্সে দেওয়ার কথা সেটিও খুঁজে পাইনি। বিডিও-র দেখা পাইনি। সব ঠিকঠাক নেই বলে আমার আবেদন বাতিল করা হয়।’’ তাঁর অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অশুভ আঁতাতের জেরেই এই অবস্থা। যে তিন জনের দরপত্র গৃহীত হয়েছে, তাঁদের দু’জনের নথিতে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে বলেও তাঁর অভিযোগ। সত্যেন্দ্রনাথবাবু জেলাশাসককে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, ৫০ লক্ষ টাকার উপর কাজ হলেই ২৫০০ টাকা বৃত্তি কর লাগে। দু’জনের তা ছিল না। ওই দু’জনের ‘ক্রেডেনশিয়াল’ জাল বলেও তিনি অভিযোগ করেছিলেন। লাভ হয়নি। দরপত্র আহ্বানের পদ্ধতিতে ত্রুটি নেই দাবি করেছে প্রশাসন। ৪.২৩ শতাংশ কম দরে সৈয়দ মহম্মদ আহমেদকে কাজের দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিডিও ঋত্বিক হাজরা অবশ্য এর মধ্যে ত্রুটি পাচ্ছেন না। তাঁর দাবি, “অনেক টাকার কাজ। বরাত না পেয়ে কেউ অভিযোগ করতেই পারেন। তবে পদ্ধতিগত কোনও ত্রুটি নেই।” আর জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনার আশ্বাস, “খোঁজ নিয়ে দেখব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy