প্রতীকী ছবি
লকডাউন পরিস্থিতির জেরে ‘আয়রন-ফ্রি’ প্যাকড-সেল রক্ত প্রায় অমিল। তাই আয়রন যুক্ত রক্ত নিতেই বাধ্য হচ্ছেন কাঁথি-সহ জেলার কয়েক হাজার থ্যালাসেমিয়া রোগী। ফলে আগামী দিনে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে, অল্পদিনের মধ্যেই রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জেলায় প্রতি মাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক থ্যালাসেমিয়া রোগী রক্ত নিতে আসেন কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে। জানা যাচ্ছে, সেখানে নিয়মিত ৮০০ জন থ্যালাসেমিয়া রোগী রক্ত নেন। হাসপাতালে প্যাকড-সেল রক্ত তৈরির কোনও ইউনিট চালু করা হয়নি বলে অভিযোগ বহু রোগীর পরিবারের। কাঁথি ৩ ব্লকের অন্তর্গত বাহিরি গ্রামের রাজন্যা নন্দ (১৩) নামে এক কিশোরী থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। তাকে প্রতি মাসে দু’বার রক্ত নিতে হয়। রাজন্যার বাবা রাজদুলাল নন্দের দাবি, ‘‘বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে মেয়েকে প্যাকড-সেল রক্ত দিই। তাই মাসে দু’বার কলকাতায় ছুটতে হয়।’’
কাঁথি শহরের বেশ কয়েকজন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর পরিবারের দাবি, লকডাউন পরিস্থিতিতে কলকাতায় গিয়ে রোগীকে রক্ত দিয়ে ফিরিয়ে আনতে প্রায় ২০-২২ হাজার টাকা খরচ। এই বিপুল খরচ যে গরিব পরিবারের পক্ষে কোনওভাবেই সম্ভব নয়, মানছেন স্বাস্থ্য কর্তারাও। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীকে রক্ত দেওয়ার আগে তাঁর শরীরে কতটা আয়রন রয়েছে, তা জানতে ফেরিটিন পরীক্ষা করতে হয়। তারপর রক্তে অন্য কোনও রোগের জীবাণু কিংবা আয়রন রয়েছে কি না, তা যাচাই করে প্যাকড-সেল রক্ত তৈরি করতে হয়। তারপর সেই রক্ত দেওয়া হয় রোগীর শরীরে। এরপর হাসপাতাল থেকে ছাড়ার আগে থ্যালাসেমিয়া রোগীকে আয়রন ট্যাবলেট দিতে হয়। দেশি সংস্থার তৈরি এই ধরনের ট্যাবলেটের দর কিছুটা কম হলেও, বিদেশি সংস্থার তৈরি ট্যাবলেটের দাম ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, তমলুক জেলা সদর হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসার জন্য পৃথক ইউনিট রয়েছে অনেকদিন ধরেই। কিন্তু সেখানেও রোগীর রক্তের উপাদানগুলি আলাদা করার পরিকাঠামো নেই। অনুপস্থিত হেমাটোলজিস্টও। একই ভাবে চিকিৎসা চলে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালেও। হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসার জন্য পৃথক ইউনিট তৈরির কাজ চলছে। তবে আপাতত সাধারণ রক্ত দিয়েই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চলছে।’’
প্রসঙ্গত, কয়েক বছর আগে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল কাঁথি ৩ ব্লকের বিলাসপুর গ্রামের এক কিশোর। কলকাতার এক সরকারি হাসপাতালের সহকারী হেমাটোলজিস্ট মণিকাঞ্চন দাস বলেন, ‘‘আক্রান্ত রোগীর রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ৯’এর নিচে নেমে গেলে, তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৫-৪’এ পৌঁছলে রোগীর প্লীহা বেড়ে যেতে পারে।’’
এ ব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাক্তার নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে জেলা সদর হাসপাতালে রক্তের উপাদান পৃথকীকরণ অধিকাংশ যন্ত্রপাতি চলে এসেছে। পরিকাঠামো সামান্য কিছু কাজ বাকি রয়েছে। লকডাউনের পর সেই কাজ শেষ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy