ঝড়ে নুয়ে পড়েছে পাকা ধান। নিজস্ব চিত্র
গোলায় আমন ধান মজুত রয়েছে। অথচ, বিক্রি করতে পারছেন না। ইতিমধ্যেই মাঠে বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে। শীঘ্রই সে ধান কাটার কথা। এখন আগে জমে থাকা ধান কীভাবে বিক্রি করবেন, নতুন ধান কোথায় মজুত করবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না চাষিরা। কারণ সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে আপাতত সহায়কমূল্যে ধান কেনা বন্ধ রয়েছে। কবে শুরু হবে, সে নিশ্চয়তা নেই। ধান বিক্রি করতে না পারায় চাষিদের হাতে নগদ অর্থের জোগানও কমে এসেছে।
কেন ধান কেনা বন্ধ রয়েছে? জেলার খাদ্য নিয়ামক সুকোমল পণ্ডিতের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। এসএমএসেরও জবাব মেলেনি। তবে জেলা খাদ্য দফতরের অন্য এক আধিকারিকের অবশ্য দাবি, ‘‘বন্ধ নেই। লকডাউন চলছে। তাই হয়তো ধান কেনার গতি একটু শ্লথ রয়েছে!’’
যদিও বাস্তব চিত্র সেকথা বলছে না। সমস্যার শুরু হয়েছিল লকডাউনের আগেই। এ বার সহায়কমূল্যে ধান কেনার প্রক্রিয়া চলাকালীনই ইয়েস ব্যাঙ্কের লেনদেনে নিয়ন্ত্রণ আনে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তখন এ জেলার অনেক চাষির চেক আটকে যায়। নতুন চেক এখনও জেলায় আসেনি। সেই থেকেই সহায়কমূল্যে ধান কেনার কাজ কার্যত বন্ধ রয়েছে জেলায়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রমাপ্রসাদ গিরির অবশ্য আশ্বাস, ‘‘ওই চাষিদের অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চেক দেওয়া হবে। চিন্তার কিছু নেই। টাকা মার যাবে না।’’
চাষিদের অবশ্য চিন্তা তাতে কমছে না। কারণ কেন্দ্রের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩ মে পর্যন্ত লকডাউন চলার কথা। এই পরিস্থিতিতে সরকারি উদ্যোগে সময় মতো সহায়কমূল্যে ধান কেনা শুরু হবে কি না সে নিয়েই সংশয়ে রয়েছেন তাঁরা।
জেলা খাদ্য দফতরের এক সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে এ বার সহায়কমূল্যে ২,৫০,০০০ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। সেখানে এখনও পর্যন্ত ১,৫৩,০০০ মেট্রিক টন কেনা সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ, এখনও ৯৭ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনা বাকি রয়েছে। এ বার ধানের সহায়কমূল্য রাখা হয়েছে ১,৮১৫ টাকা। চাষি নিজে সংগ্রহ কেন্দ্রে এসে বিক্রি করলে তাঁকে কুইন্টাল পিছু ২০ টাকা উৎসাহ ভাতা দেওয়ার কথা। সেখানে খোলাবাজারে ইতিউতি এখন ধানের দাম ১,৪২০ থেকে ১,৪৪০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। ফারাকটা খুব কম নয়।
বোরো ধান মাঠ থেকে উঠলে প্রত্যেক বছর সাধারণত মে মাস থেকে সহায়কমূল্যে ধান কেনা শুরু হয়। নতুন ধানের পাশাপাশি চাষিদের একাংশ মজুত আমন ধানও শিবিরে বিক্রি করে থাকেন। কারণ মজুত আমন ধান বিক্রি করতে না পারলে গোলায় নতুন ধানও ঢোকানো যাবে না। অনেকেরই বড় গোলা নেই। ইতিউতি ফেলে রাখলে ধান নষ্ট হবে। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই অভাবি বিক্রি করছেন। মেদিনীপুর গ্রামীণের রেড়াপালের চাষি রবি খাটুয়া বলছিলেন, ‘‘বিঘা চারেক জমিতে আমন ধান চাষ করেছিলাম। এখনও সব ধান বিক্রি করতে পারিনি। এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়েছে। ১,৪৫০ টাকা দরে বিক্রি করে দেব।’’
জেলায় সেন্ট্রাল প্রকিওরমেন্ট সেন্টারগুলি (সিপিসি) এবং নির্দিষ্ট কিছু সমবায়ের মাধ্যমেই সহায়কমূল্যে ধান কেনা হয়। এখন সেই সেন্টারগুলি সুনসান থাকছে। মেদিনীপুর গ্রামীণের এক চাষির আক্ষেপ, ‘‘কবে থেকে আবার ধান কেনা হবে জানতে পারছি না। কারও কাছে সঠিক উত্তরও পাচ্ছি না। সময় মতো ধান কেনা শুরু না হলে ক্ষতির মুখ দেখতে হবে।’’
জেলা খাদ্য দফতরের এক আধিকারিকের অবশ্য আশ্বাস, ‘‘নির্দেশ এলেই ধান কেনায় গতি আনা হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy