চেম্বারে রোগী দেখছেন যোগেন বেরা। নিজস্ব চিত্র
করোনার সঙ্কট কালে অধিকাংশ ডাক্তারবাবু যখন চেম্বারের ঝাঁপ ফেলেছেন, তখন নিরুপায় রোগীর সহায় তিনি। বয়স ৭৬ ছুঁয়েছে। তবে সবের পরোয়া না করেই বেলদার গ্রামীণ চিকিৎসক যোগেন বেরা পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
দীর্ঘ চল্লিশ বছর তিনি চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৮০ সাল নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমাজ কল্যাণ দফতরের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জনসংযোগ বিভাগের আধিকারিক হয়ে বেলদা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসেছিলেন। অবসর নেন ২০০৪ সালে। ডিএমএস ও ডিএইচই, ডি ফার্ম ডিগ্রি রয়েছে তাঁর। কলেরার প্রাদুর্ভাবের সময় ডেবরায় স্বাস্থ্য বিভাগে থেকে কাজ করেছেন। দাঁতনের খণ্ডরুই ও কেশিয়াড়ি হাসপাতালেও কাজ করেছেন। আর অবসরের পরে নিজের চেম্বারে নিয়মিত রোগী দেখছেন। ভিজিট দু’টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে পঞ্চাশ। এলাকায় হাড়জোড়া ডাক্তার বলে পরিচিত বৃদ্ধ যোগেন বলছেন, ‘‘এখন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হয়েছে। আগে তো সব ধরনের চিকিৎসাই করেছি আমরা।’’
নিজের প্রতি সেই আস্থার জোরেই এই বয়সেও রোগী দেখে যাচ্ছেন তিনি। এই করোনা বিপর্যয়ের মুহূর্তে অন্য রোগীরা যখন বঞ্চিত হচ্ছেন, তখন বেলদা ও আশেপাশের এলাকায় যোগেন ডাক্তারই ভরসা। তিনি বলছেন, ‘‘যতটা সম্ভব সচেতনতা নিয়েই কাজ করছি। মরলে মরব। বয়স তো হল। তবে অন্যদের মতো হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারব না। যতদিন জীবন আছে ততদিন দায়িত্ব থেকে কী করে মুখ ফিরিয়ে রাখি।"
তাই সকাল, বিকেল চলছে রোগী দেখা। অনেকটাই চাপ সামলাতে হচ্ছে। হাসি মুখেই সব সামলাচ্ছেন তিনি। প্রতিদিন শতাধিক রোগী। মুখে রুমাল বেঁধে আর হাতে গ্লাভস পরে রোগী দেখছেন তিনি। দাঁতন, আসন্দা, খাকুড়দা-সহ আশেপাশের অঞ্চলের মানুষ আসছেন তাঁর কাছে। শুধু কি রোগী দেখা—লকডাউনে কে সমস্যায় পড়েছেন, কারা খেতে পাচ্ছেন না, সে সব দেখতেও ছুটছেন। ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন।
বেলদা, খাকুড়দা, কেশিয়াড়ি, দাঁতন, নারায়ণগড়ে প্রায় সব চিকিৎসকের চেম্বারই এখন বন্ধ। দু’-একজন অনলাইনে রোগী দেখার চেষ্টা করছেন। সেখানে একমাত্রা ত্রাতা 'যোগেন ডাক্তার'। দাঁতনের পালষণ্ডপুরের গৌতম শীট, বেলদার খাকুড়দার রঞ্জন দাস, অসীমা দাসেরা এলাকায় চিকিৎসক না পেয়ে যোগেনের কাছে এসেছিলেন। শিশু থেকে বয়স্ক, সবাইকে যত্ন করে দেখে দিচ্ছেন এই গ্রামীণ চিকিৎসক। বেলদার এক ওষুধ দোকানি সঞ্জীব জৈনের কথায়, ‘‘ওড়িশা, কলকাতা, দুই মেদিনীপুরের বহু চিকিৎসক বেলদায় চেম্বার করেন। তাঁরা আসছেন না। মানুষ নাজেহাল হচ্ছেন। যাঁরা এঅ দুঃসময়ে রোগী দেখে মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, তাঁদের অসংখ্য ধন্যবাদ দিতেই হয়।’’ বেলদার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রদীপ দাসও বলছেন, ‘‘কোনও অসুখ হলে কোথাও যাওয়ার জো নেই। যাঁরা এতদিন চেম্বার করলেন, তাঁরা কঠিন সময়ে থাকলেন না কেন? অথচ এই বয়সেও রোগী দেখছেন যোগেনবাবু। তাকে কুর্নিশ জানাতেই হয়।’’
করোনার আঁধার কাটা নিয়ে প্রত্যয়ী যোগেন ডাক্তার। বলছেন,, ‘‘এই পরিস্থিতি একদিন কেটে যাবে। কিন্তু মানুষকে তো বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’’ তাই অন্য চিকিৎসকেদের কাছে তাঁর আর্জি, ‘‘প্রয়োজনীয় সুরক্ষা নিয়ে রোগী দেখুন। কঠিন সময়ে মানুষের পাশে থাকাই তো আমাদের কর্তব্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy