আস্তানা: এই তাঁবুতেই দিন-রাত থাকছেন সুখদেব সরেন।
ঘন জঙ্গলে রয়েছে হাতির আনাগোনা। রয়েছে বিষধর সাপও। তবু সে সব ভয় এড়িয়ে জঙ্গলের মধ্যেই তাঁবু খাটিয়ে নিভৃতবাস করছেন এক পরিযায়ী শ্রমিক।
গোয়ালতোড় (গড়বেতা ২) ব্লকের গোহালডাঙা অঞ্চলের জঙ্গলে ঘেরা গ্রাম বরশোল। গ্রামের বছর বাইশের যুবক সুখদেব সরেন উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ থেকে ফিরেছেন। রায়গঞ্জে একটি সংস্থায় বিপণনের কাজ করতেন তিনি। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ সুখদেব তার আগে কাজ করতেন হাওড়ার একটি কারখানায়। মা ঠাকুরমণি সরেন জঙ্গলে কেন্দুপাতা তুলে বিক্রি করে রোজগার করেন। বাবা ভীম সরেন দিনমজুর। একমাত্র বোন মাধবীলতা দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। অভাবের সংসারে রোজগারের আশায় সুখদেব চলে গিয়েছিলেন ভিন্ জেলায়। প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় গ্রামে ফিরেছেন কয়েকদিন আগে।
ফেরার আগে সুখদেবের থার্মাল স্ক্রিনিং হলেও অস্বাভাবিকতা কিছু মেলেনি। তবুও ব্লক প্রশাসন থেকে তাঁকে ও তাঁর বাড়ির লোকজনদের গৃহ পর্যবেক্ষণে থাকতে বলা হয়েছে। বাবা, মা, বোন গৃহ পর্যবেক্ষণে। ঝুঁকি না নিয়ে তাঁদের সঙ্গে ঘরে না থেকে সুখদেব সরেন কিছুটা দূরে জঙ্গলের ধারে একাই তাঁবু খাটিয়ে থাকছেন। তাঁবু বলতে জঙ্গলের কাঠে খুঁটি দিয়ে পলিথিনের ত্রিপল টাঙিয়ে ছাউনি। আর শাড়ি, কাপড় দিয়ে চারদিকে ঘেরা। মেঝেতে চাটাইয়ের উপর কাঁথা পাতা। মশারি সরিয়ে সুখদেব বলেন, ‘‘আমি এখন এখানেই থাকছি। বাইরের থেকে এসেছি। টেস্টে নাই বা কিছু থাকল। ঝুঁকি নিতে চাইনি, বাড়ির লোকজনদের থেকে দূরে থাকার জন্য এই জঙ্গলের পাশে তাবু খাটিয়ে থাকছি।’’ জঙ্গলের তাঁবুতে দিনরাত কাটলেও খাবার অবশ্য আসছে বাড়ি থেকেই। মা ঠাকুরমণি বলেন, ‘‘আমি দু’বেলা রান্না করে সব খাবার দূর থেকেই দিয়ে আসছি ছেলেকে।’’
বৃহস্পতিবারই এই গ্রামে গিয়ে সুখদেবদের মাটির বাড়ির দেওয়ালে গৃহ পর্যবেক্ষণে থাকার নোটিস ঝুলিয়ে এসেছেন পঞ্চায়েতের ভিআরপি-রা। জঙ্গলের তাঁবুতে গিয়ে তাঁরা কথা বলে এসেছেন সুখদেবের সঙ্গেও। ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি সুজিত খান, কংগ্রেসের এসটি সেলের ব্লক সভাপতি শ্যামসুন্দর হেমব্রম এ দিন জঙ্গলে গিয়ে সুখদেবের হাতে শুকনো খাবার দিয়ে এসেছেন।
গড়বেতা ২-এর বিডিও সোফিয়া আব্বাস বলেন, ‘‘যাঁরা ভিন্ রাজ্য বা ভিন্ জেলা থেকে ঘরে ফিরছেন তাঁদের পরীক্ষা করে তবেই ঘরে পাঠানো হচ্ছে। তাঁদের গৃহ পর্যবেক্ষণে থাকতে বলা হয়েছে, অনেকে ঘরে জায়গার সঙ্কুলান না হওয়ায় আলাদাভাবে অন্যত্র থাকছেন, সবার ক্ষেত্রেই আমাদের নজরদারি রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy