Advertisement
১৮ জানুয়ারি ২০২৫
Coronavirus

ভিক্ষা জুটছে না, খাবারের খোঁজেই পথচলা

নিজের ছেলেবেলার কথাও মনে করতে পারেন না চিত্ত। ঝাড়গ্রামের সর্ডিহায় বাড়ি ছিল তাঁর।

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২০ ০২:১৭
Share: Save:

শিরা বের হওয়া শীর্ণ হাতে পাটাতনের দড়ি টানতে টানতে গুনগুন করে প্রৌঢ় গাইছেন— ‘ও দয়াল বিচার করো’। চাকা লাগানো কাঠের পাটাতনের বসে স্বামীর সুরে ক্ষীণ কন্ঠে গলা মেলাচ্ছেন স্ত্রী-ও।

লকডাউনে দিনমজুরি নেই। মিলছে না ভিক্ষা। স্ত্রী চলাফেরাও করতে পারেন না। তাই স্ত্রীকে চাকা লাগানো পাটাতনে বসিয়ে খাবারের সন্ধানে ঘুরছেন ষাট ছুঁই ছুঁই চিত্ত রায়। ভবঘুরে চিত্ত-র সরকারি পরিচয়পত্র নেই, নেই রেশন কার্ডও। সরকারি ত্রাণও সে ভাবে জোটেনি, দাবি তাঁর। চিত্ত বলেন, ‘‘বছর পাঁচেক আগে গীতাকে পেয়েছিলাম গোদাপিয়াশালের মেলায়। গীতার পূর্ব-ইতিহাস জানা নেই। ও হাঁটতে পারে না। তাই সঙ্গিনী করে নিলাম।’’

ছেলেবেলায় বাবা-মাকে হারিয়ে ঠাঁই হয় সম্পর্কিত দাদা-বৌদির সংসারে। সারাদিন গরু চরিয়ে একবেলা খাবার জুটত। কিন্তু দাদা-বৌদির লাঞ্ছনা সইতে না পেরে ১৫ বছরেই ঠাঁইহারা হন। শুরু হয় ভবঘুরে জীবন। কখনও খড়্গপুর, কখনও মেচেদায় ছোটখাটো দিনমজুরি আর স্টেশনে বা গাছতলায় বেঁচে থাকার লড়াই। এক সময় গ্রামে ফিরে দেখেন, পৈত্রিক ভিটেজমি বেচে অন্যত্র চলে গিয়েছেন সম্পর্কিত দাদা-বৌদি। তারপর থেকে সর্ডিহা স্টেশনের কাছে ঝুপড়িতে থাকতেন। এখন দুর্বল শরীরে ভারী কাজ করার ক্ষমতা নেই। তাই ভিক্ষা করেই দিন কাটে।

লকডাউনের আগে অবশ্য চিত্ত-গীতার ঠিকানা ছিল খড়্গপুর স্টেশন চত্বর। ভিক্ষার টাকায় খিদে মিটত। লকডাউনে ভিক্ষা অমিল। স্ত্রীকে নিয়ে দেড় দিন হেঁটে মানিকপাড়ায় আসেন চিত্ত। কিন্তু যে গ্রামেই ভিক্ষা করতে যাচ্ছেন, অচেনা দম্পতিকে দেখে তাড়িয়ে দিচ্ছেন এলাকাবাসী। চিত্ত বলেন, ‘‘এক সময় এই এলাকাতেই ছেলেবেলা কেটেছে। তাই গীতাকে নিয়ে এখানে এসেছি। স্টেশন এলাকায় ঝুপড়ি বানিয়ে থাকছি। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ছাড়া কেউই সাহায্য করছেন না।’’ মানিকপাড়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মহাশিস মাহাতো বলেন, ‘‘খিদেয় কাহিল হয়ে পড়েছিলেন ওঁরা। চিত্তর কাছে ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, আধার কার্ড কিছুই নেই। পঞ্চায়েত অফিসও বন্ধ। তাই চিত্তর কোনও তথ্য আছে কি না, বোঝা যাচ্ছে না। ওঁদের সাতদিনের মতো খাদ্যসামগ্রী দিয়েছি। এই মুহূর্তে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র যেতেও বারণ করেছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy