প্রতীকী ছবি।
করোনা সংক্রমণের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। পরিস্থিতি দেখে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় এ বার প্লাজমা থেরাপি শুরু হতে চলেছে পশ্চিম মেদিনীপুরেও। মেদিনীপুর মেডিক্যালে প্লাজমা ব্যাঙ্ক গড়ে উঠছে। এই সংক্রান্ত রাজ্যের নির্দেশও পৌঁছেছে জেলায়।
রাজ্যে সব মিলিয়ে ২০টি প্লাজমা ব্যাঙ্ক গড়ে উঠছে। এর অন্যতম মেদিনীপুর মেডিক্যালের প্লাজমা ব্যাঙ্কটি। জেলাশাসক তথা করোনা মোকাবিলায় গঠিত জেলাস্তরের টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান রশ্মি কমল মানছেন, ‘‘রাজ্যের নির্দেশ এসেছে। প্লাজমা ব্যাঙ্কের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডলের সঙ্গে একপ্রস্থ কথা হয়েছে জেলাশাসকের। মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডুর সঙ্গেও কথা বলে পরিকাঠামো তৈরির কাজ কেমন চলছে, খোঁজ নিতে পারেন পারেন জেলাশাসক। মেদিনীপুর মেডিক্যালে ব্লাড ব্যাঙ্ক রয়েছে। সেখানেই প্লাজমা ব্যাঙ্ক গড়ে উঠছে। রাজ্যে প্রথম কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তৈরি হয়েছে প্লাজমা ব্যাঙ্ক। প্লাজমা থেরাপির জন্য করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর শরীর থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করতে হয়।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল সূত্রে খবর, করোনা-মুক্ত যে সব ব্যক্তি প্লাজমা দানের জন্য উপযুক্ত, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে প্লাজমা ব্যাঙ্ক। ব্লাড ব্যাঙ্কের নিয়মেই প্লাজমা ব্যাঙ্ক পরিচালিত হয়। তফাৎ শুধু এই যে, প্লাজমা ব্যাঙ্ক গঠিত হয় শুধুমাত্র সেই সব করোনা রোগীর জন্য, যাঁদের চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপির পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। প্লাজমা সংগ্রহ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে এই ব্যাঙ্ক। মেডিক্যালের ওই সূত্র জানাচ্ছে, প্লাজমা থেরাপির মূলে রয়েছে একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে করোনা- মুক্ত ব্যক্তির দেহ থেকে অ্যান্টিবডি-সমৃদ্ধ প্লাজমা নিয়ে করোনা আক্রান্তের দেহে প্রবেশ করানো হয়। এই অ্যান্টিবডি রোগীকে সুস্থ হতে সাহায্য করে। সাধারণত, করোনা-মুক্তির পরে ১৪ দিন কেটে গিয়েছে, এমন ব্যক্তির দেহ থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়। প্লাজমা দাতার বয়স হতে হয় ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। দেহের ওজন হতে হয় ন্যূনতম ৫০ কেজি। ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ অথবা ক্যানসারের মতো অসুখ থাকলে প্লাজমা দেওয়া যায় না। প্লাজমা গ্রহণ কেন্দ্রে ইচ্ছুক দাতাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘করোনা-জয়ীর শরীর থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করে প্লাজমা ব্যাঙ্কে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে রাখা থাকে।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, করোনা আক্রান্তদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়— গুরুতর, মাঝারি এবং অল্প উপসর্গের। যাঁরা মাঝারি উপসর্গের, যাঁদের শ্বাসকষ্ট রয়েছে এবং শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা ৯০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে এবং অক্সিজেন দিতে হচ্ছে, তাঁদেরই প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয়। জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী মানছেন, ‘‘জেনেছি, কলকাতায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভাল মিলেছে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, করোনা আক্রান্তদের প্লাজমা দিয়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করে দিয়েছে আইসিএমআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ)। তা মেনেই চিকিৎসা হবে। প্রত্যেক দাতার প্লাজমা দিয়ে দু’জনের চিকিৎসা হতে পারে। দেহের ওজনের ভিত্তিতে কমবেশি ৫০০ মিলিলিটার প্লাজমা একজন দাতার কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারে প্লাজমা ব্যাঙ্ক। করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিরা প্লাজমা দান করতে ইচ্ছুক হবেন তো? মেডিক্যালের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই হবেন। যাঁরা করোনা সংক্রমণ থেকে সঠিক চিকিৎসায় সেরে উঠেছেন, তাঁদের সকলের কাছেই অনুরোধ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy