প্রতীকী ছবি।
প্রতিবেশীদের ডেকেছিলেন। সাড়া মেলেনি।
আত্মীয়দের ফোন করেছিলেন। কেউ আসেননি।
অ্যাম্বুল্যান্স, নিদেনপক্ষে ছোটগাড়ির খোঁজ করেছিলেন। আসেনি।
স্থানীয় ব্যানার্জিডাঙা হাইস্কুলের কর্মী স্বামী বিচ্ছিন্না আরতি পাল মেয়ে পাপড়িকে নিয়ে গড়বেতা ১ ব্লকের আমলাগোড়া অঞ্চলের রাউলিয়া গ্রামে একাই থাকতেন। পাপড়ি ওরফে পূজা পাল (২৫) রক্তাল্পতায় ভুগছিলেন। মানসিক অবসাদও ছিল। মঙ্গলবার দুপুর ২টো নাগাদ মেয়েকে খাবার দিতে গিয়ে কোনও সাড়া পাননি তিনি। মায়ের মন বুঝেছিল, কোনও অঘটন ঘটে গিয়েছে। বাইরে বেরিয়ে প্রতিবেশীদের ডাকাডাকি করেন। পাশের গ্রামেই তাঁর বাপের বাড়ি। খবর পাঠান সেখানেও। অ্যাম্বুল্যান্স অথবা গাড়ির জন্য ছোটাছুটি করেন। কিন্তু কেউই আসেনি। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ স্থানীয় বিডিও ও থানার ওসি মিলে পুলিশের কাজে ব্যবহৃত শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করেন। গ্রামে যান স্থানীয় উপপ্রধান বিকাশ নাগ ও পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ফারুখ মহম্মদ। তাঁরাও ডাকেন পড়শিদের। তবে বন্ধ দরজা খোলেনি। বাইরে তখন প্রবল বৃষ্টি। তাঁরা দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই পাপড়িকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। তবে তাঁর অ্যান্টিজেন টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।
আরতি জানান, কাউকে না পেয়ে মেয়ের দেহ বাড়িতে তালা দিয়ে রেখে স্থানীয় আমলাগোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়েছিলেন তিনি। দুর্যোগ পরিস্থিতির জন্য পঞ্চায়েত তখনও খোলা ছিল। উপপ্রধান বিষয়টি জেনে পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষকে জানান। কিন্তু তাঁরাও কোনও অ্যাম্বুল্যান্স বা ছোটগাড়িকে রাজি করাতে পারেননি। শেষে গড়বেতা ১ এর বিডিও শেখ ওয়াসিম রেজা ও গড়বেতা থানার ওসি দেবাশিস দাস দেহ উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন। অ্যান্টিজেন রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরে দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। বিডিও বলেন, ‘‘ওই মহিলা করোনায় মারা গিয়েছে এই আতঙ্কে কেউ দেহ তুলছিল না। পরে দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে এনে অ্যান্টিজেন টেস্টে জানা গিয়েছে ওই মহিলা নেগেটিভ ছিলেন। কিন্তু করোনার আতঙ্কে কেউই এগিয়ে আসেননি।’’
গড়বেতার এই ঘটনা অবশ্য ব্যতিক্রম নয়। করোনা আতঙ্কে রাস্তায় কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে তাঁকে ছুঁয়েও দেখছেন না কেউ—এরকম ঘটনা আগেও সামনে এসেছে। মেয়েকে হারানোর পরে আরতি শুধু বলছেন, ‘‘সঠিক সময়ে মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হয়তো বেঁচেও যেত। প্রশাসন তো ৬ ফুটের দূরত্ব রাখতে বলছে। সেই দূরত্ব রেখেও তো পাশে দাঁড়ানো যায়! আসলে করোনা কালে সামাজিক কর্তব্যের তাগিদটুকুই হারিয়ে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy