Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

ডেঙ্গি রুখতে গিয়ে করোনা

এ বার ঝাড়গ্রাম পুরসভার জনস্বাস্থ্য বিভাগের তিন ঠিকাকর্মীর শরীরে পাওয়া গেল ভয়ের ভাইরাস।

ঝাড়গ্রাম পুরসভায় বাড়তি সতকর্তা। নিজস্ব চিত্র

ঝাড়গ্রাম পুরসভায় বাড়তি সতকর্তা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২০ ০২:৫৩
Share: Save:

বাড়ছে আক্রান্ত, বাড়ছে উদ্বেগ।

এ বার ঝাড়গ্রাম পুরসভার জনস্বাস্থ্য বিভাগের তিন ঠিকাকর্মীর শরীরে পাওয়া গেল ভয়ের ভাইরাস। তাঁরা বাড়ি-বাড়ি মশানাশক স্প্রে করতেন। সোমবার করোনার পজ়িটিভ রিপোর্ট জানার পরে রাতেই তাঁদের পাঁশকুড়ার বড়মা করোনা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

একের পর এক করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিললেও এই ঘটনার পরেও জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। ফোন ধরেননি ঝাড়গ্রাম পুরসভার প্রশাসক সুবর্ণ রায় ও পুরসভার নিবাহী আধিকারিক তুষারকান্তি শতপথী। মেসেজেরও জবাব দেননি তাঁরা। তবে ঝাড়গ্রাম পুর-প্রশাসনিক বোর্ডের রাজ্য সরকার মনোনীত দুই সদস্য দুর্গেশ মল্লদেব ও প্রশান্ত রায় তিন পুর-কর্মীর করোনা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। দুর্গেশ বলেন, ‘‘পুরসভার তিনজন ঠিকা স্প্রে-ম্যান করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁরা মশানাশক স্প্রে করতেন। এই পরিস্থিতিতে শহরবাসীকে আতঙ্কমুক্ত ও সচেতন করা প্রয়োজন।’’ পুর-প্রশাসনিক বোর্ডের অন্যতম সদস্য প্রশান্ত রায়ের কথায়, ‘‘মানুষকে সচেতন করতে যা করণীয়, পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করে তা করা হবে।’’

মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের করোনা বুলেটিনে ঝাড়গ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা বলা হয়েছে তিন। তবে যেখানে আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে, সেই বড়মা হাসপাতালের নোডাল অফিসার শচীন্দ্রনাথ রজক মঙ্গলবার বলেন, ‘‘ঝাড়গ্রাম জেলা থেকে সোমবার রাতে তিনজন করোনা আক্রান্তকে পাঠানো হয়েছে। এই নিয়ে ঝাড়গ্রাম জেলার ৮ জন বড়মায় চিকিৎসাধীন।’’ আক্রান্ত তিন পুরকর্মীর পরিজনেদের গৃহ-নিভৃতবাসে থাকতে বলা হয়েছে। এক আক্রান্তের নাতি বলেন, ‘‘পুলিশ বাড়িতে এসে বলে গিয়েছেস ১৪ দিন বাইরে বেরনো যাবে না।’’ এ দিন পুরভবন জীবাণুমুক্তও করা হয়।

ঝাড়গ্রাম পুরসভা সূত্রে খবর, বছর তিনেক আগে ডেঙ্গি প্রতিরোধে দৈনিক মজুরিতে ৬৬ জন স্প্রে-ম্যানকে কাজে নেওয়া হয়। আক্রান্ত তিন কর্মী গত শুক্রবারও শহরের বাড়ি-বাড়ি মশানাশক স্প্রে করেছেন। তাঁদের দু’জন ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা। একজনের বাড়ি জামবনিতে। ওই কর্মীদের একজন শহরের একটি কারখানাতেও কাজ করতেন বলে সূত্রের খবর। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার পুর-হাসপাতালে পুরসভার ৫৫ জন অস্থায়ী ও ঠিকা কর্মীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। ওই ৫৫ জনের রিপোর্ট আসে সোমবার। তিনজন পজ়িটিভ হন। গত শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত আরও ৮৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেই রিপোর্ট এখনও আসেনি। তবে মঙ্গলবার পুরসভার হাসপাতালে টেকনিশিয়ান অনুপস্থিত থাকায় এ দিন নমুনা সংগ্রহ হয়নি।

গত মাসে এগরা যোগ থাকা ঝাড়গ্রামের এক ব্যক্তি প্রথম করোনা আক্রান্ত হন। তিনি সুস্থ হয়ে বড়মা থেকে ছাড়া পেয়েছেন। এরপরে কলকাতার রেস্তরাঁ-কর্মী নয়াগ্রামের দুই তরুণ করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তাঁদের বড়মা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তারপরে জামবনির এক শিশু, ঝাড়গ্রাম শহরের জুবিলি বাজারের এক দোকান কর্মী এবং ওড়িশা ফেরত এক তরুণ করোনা আক্রান্ত হয়ে বড়মায় ভর্তি হন। এত সবের পরেও জেলার করোনা আক্রান্তদের সম্পর্কে একেবারে চুপ জেলাশাসক আয়েষা রানি ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা। তবে রবিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে প্রথমবার ঝাড়গ্রাম জেলায় তিন করোনা আক্রান্তের তথ্য দেওয়া হয় (জামবনির শিশু, মুদি দোকানের কর্মী ও ওড়িশা ফেরত তরুণ)। পশ্চিম মেদিনীপুরের উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস পাল জানিয়েছেন, জামবনির শিশুকন্যার সংস্পর্শে আসায় খড়্গপুরের কলাইকুন্ডায় তার মামাবাড়ির ১৬ জনকে নিভৃতবাসে পাঠানো হয়েছে।

এ দিকে, প্রশাসন চুপ থাকায় ঝাড়গ্রামবাসী বিভ্রান্ত। তাঁদের বক্তব্য, প্রশাসন সঠিক তথ্য প্রকাশ করলে মানুষ সচেতন হতে পারবেন। কিন্তু তা না করে খাতায়-কলমে ঝাড়গ্রামকে সবুজ দেখাতে অতিরিক্ত দোকানপাট খুলতে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবারও ঝাড়গ্রাম শহর ও জেলার অন্যত্র সেলুন, ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জামের দোকান, জামাকাপড়ের দোকান খোলা ছিল। শহরে টোটোও চলেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy