তাঁবুতে কোয়রান্টিন। নিজস্ব চিত্র
নাওয়া-খাওয়া থেকে শুরু করে নিশিযাপন সবই চলছে ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে ঘেরা ছোট তাঁবুতে।
করোনা মোকাবিলায় ক্যানসারেরে চিকিৎসা করিয়ে ফেরার পর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বাড়ি থেকে কয়েক পা দূরে তাঁবুতে দিন কাটাচ্ছেন কাঁথি-৩ ব্লকের মুড়িসাই গ্রামের বাসিন্দা, দেবেন্দ্র গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান সুধাংশু মান্না।
মঙ্গলবারই মুম্বই থেকে ক্যানসারের চিকিৎসা করিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে বাড়ি ফেরেন সুধাংশু এবং তাঁর স্ত্রী ও ছেলে। ভিন রাজ্য থেকে আসায় সুধাংশু এবং তাঁর ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। খবর পেয়ে বাড়িতে যান স্বাস্থ্যকর্মীরা। সুধাংশুর ছেলে বিশ্বজিতের দাবি, ‘‘সরকারি ব্যবস্থাপনায় বাড়ির কাছাকাছি যে কোয়রান্টিন সেন্টার রয়েছে, সেখানে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই বলে জেনেছি। তাই বাড়ির বাকি সদস্যদের অস্থায়ী তাঁবু তৈরি করে রাখতে বলেছিলাম। আপাতত দু’সপ্তাহ ওখানেই বাবা এবং মা-কে নিয়ে থাকব।’’ তাঁবুর ভিতরেই যাবতীয় ব্যবস্থা করে নিয়েছেন তাঁরা। বাবানো হয়েছে অস্থায়ী শৌচালয়ও।
একই অবস্থা আরও এক ক্যানসার আক্রান্তের পরিবারের। দেবকুমার মণ্ডল নামে একই ব্লকের বাঘাদাড়ি গ্রামের ওই বাসিন্দা ক্যানসারের চিকিৎসা করিয়ে মঙ্গলবার সকালে বাড়ি ফেরেন। স্থানীয় আশাকর্মী এবং সিভিক ভলান্টিয়ারদের পরামর্শ মেনে বাড়ি সংলগ্ন পৃথক একটি বাড়িতে কোয়রান্টিনে আছেন তিনি। দেবকুমারের দাদা দীপঙ্করের দাবি, ‘‘সরকারি কোয়রান্টিন সেন্টার রয়েছে ঠিকই। তবে সেখানে কোনও সুযোগ সুবিধে নেই বললেই চলে। তাই করোনা সংক্রমণ আটকাতে আলাদা বাড়িতেই দাদাকে রাখা হয়েছে।’’
ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর , প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ির কয়েক কিলোমিটার দূরে ভাজাচাউলিতে একটি কমিউনিটি সেন্টার এবং ক্যানসারের চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফিরে আসা আরেকজনের বাড়ি থেকেও কয়েক কিলোমিটার দূরে নাচিন্দায় পৃথক কমিউনিটি সেন্টারে সরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে কোয়রান্টিন সেন্টার। এ ছাড়াও ব্লকে আরও একটি কোয়রান্টিন সেন্টার তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে তিন জায়গায় ২০০ জন ভিন রাজ্য থেকে আসা মানুষকে রাখা যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে সিপিএমের মারিশদা এরিয়া কমিটির সম্পাদক কালিপদ শীটের অভিযোগ, ‘‘নামেই কোয়রান্টিন সেন্টার। পানীয় জল থেকে ভিন রাজ্য থেকে আসা সাধারণ মানুষের ঘুমোনোর মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই সেগুলিতে। তাই মানুষ বাড়িতে আলাদ থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।’’
কাঁথি-১ ব্লকের ফতেপুর গ্রামে গত সপ্তাহে বেঙ্গালুরু থেকে চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফিরেছেন একই পরিবারের পাঁচ সদস্য। বাড়িতেই কোয়রান্টিনে থাকবেন বলে তাঁরা স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের জানিয়েছিলেন। যদিও ওই পরিবারের কেউ কেউ এলাকায় ঘোরাঘুরি করছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বিষয়টি জানার পর খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও লিপন তালুকদার।
জেলায় ৪০টি সরকারি কোয়রান্টিন সেন্টার থাকা সত্ত্বেও ভিন রাজ্য থেকে আসা মানুষদের সেখানে না রেখে কেন বাড়িতে থাকতে স্বাস্থ্যকর্মীরা পরামর্শ দিচ্ছেন তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুব্রত কুমার রায় বলেন, ‘‘কোয়রান্টিন সেন্টার মূলত স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে। সেখানকার অব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ ব্লক প্রশাসনের মাধ্যমে যাচাই করা দেখা হচ্ছে। তবে যে হেতু ওঁরা ক্যানসারের চিকিৎসা করিয়ে এসেছেন, তাই সকলের নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারি কোয়রান্টিনে থাকা দরকার। ওই পরিবারগুলিকে বুঝিয়ে কোয়রান্টিন সেন্টারে আনার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের বলা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy