অক্সিজেন সিলিন্ডারের দোকানে হানা। খতিয়ে দেখা হচ্ছে মজুতের পরিমাণ। ধর্মায়। নিজস্ব চিত্র।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় এই মুহূর্তে সঙ্কটজনক পরিস্থিতি কমবেশি সর্বত্রই। পশ্চিম মেদিনীপুরও ব্যতিক্রম নয়। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে জেলায় অক্সিজেনের কালোবাজারি শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। যে অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম ছিল ৬-সাড়ে ৬ হাজার টাকা, এখন ৮-১০ হাজার টাকাতেও তা মিলছে না। অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের একাংশ সিলিন্ডার মজুত করে রাখছেন ও সুযোগ বুঝে খোলাবাজারে চড়া দামে বিক্রি করছেন।
শ্বাসকষ্টের রোগীদের অক্সিজেন লাগে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ শতাংশের নীচে নেমে গেলে। বাড়িতে শ্বাসকষ্টের রোগী রয়েছেন। অক্সিজেন সিলিন্ডারের খোঁজে মেদিনীপুরে এসেছিলেন শালবনির প্রকাশ নন্দী। প্রকাশ বলছিলেন, ‘‘একাধিক দোকানে গিয়েছি। এক জায়গায় বলছে ৮ হাজার, এক জায়গায় ১০ হাজার, অন্য এক জায়গায় আবার ১২-১৫ হাজারও বলেছে। তাও বলছে, দু’দিন পরে পাব।’’ ওই যুবকের কথায়, ‘‘সপ্তাহ কয়েক আগেও ৬ হাজার টাকায় অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি হয়েছে। এখন যে যেমন পারছেন দাম নিচ্ছেন। সরকার থেকে দাম বেঁধে দেওয়া হলে সাধারণ মানুষের সুবিধে হয়।’’
মেদিনীপুরের এক দোকানি প্রকাশকে পরামর্শ দেন, ‘‘যারা ভাড়ায় দেয়, তাদের কাছে পেতে পারেন। আমাদের সব স্টক শেষ।’’ কবে আসবে? দোকানির জবাব, ‘‘মে- র প্রথম সপ্তাহে আসতে পারে।’’ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানি মানছেন, ‘‘আমরা যাদের থেকে সিলিন্ডার আনি, তারা ফাটকাবাজি শুরু করে দিয়েছেন। বলছেন, জোগান কমেছে। তাই দাম বেড়েছে।’’ অক্সিজেনের ব্যবসা করা ওই দোকানির সরল যুক্তি, ‘‘আমাদের বেশি লাভের দরকার নেই। করিও না। আমরা যাদের কাছ থেকে সিলিন্ডার নিয়ে আসব, তারা কী দাম নেবে, তার উপরই নির্ভর করছে আমাদের কী দাম হবে।’’ একাংশ দোকানি গ্রাহকদের ফোন নম্বর নিয়ে রাখছেন। জানাচ্ছেন, ‘সিলিন্ডার এলে আমরাই ফোন করে জানাব।’’
বাড়িতে অনেকে বি- টাইপ সিলিন্ডার রাখেন। এখন সবচেয়ে বেশি চাহিদা বি- টাইপ সিলিন্ডারেরই। এতে ১০.২ লিটার তরল অক্সিজেন থাকে। অন্য সময়ে দাম থাকে ৬-সাড়ে ৬ হাজারের মধ্যেই। এখন তা ১০-১২ হাজারও ছাড়াচ্ছে। অভিযোগ, জেলায় গত বছর সংক্রমণের গোড়ায় মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার নিয়ে যে ধরনের ‘কৃত্রিম সঙ্কট’ তৈরি করা হয়েছিল, এখন সেই প্রবণতা অক্সিজেন সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। এক দোকানি জানাচ্ছেন, রেগুলেটর সেট সমেত সিলিন্ডার পেয়ে যাবেন। ১৪ হাজার টাকা লাগবে।
এক দোকানের কর্মীর বক্তব্য, ‘‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণেই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে সমস্যা শুরু হয়েছে।’’ একাংশ অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবসায়ীরও বক্তব্য, লিক্যুইড অক্সিজেন, অক্সিজেন সিলিন্ডারের উৎপাদনে কোনও সঙ্কট নেই। জোগানেও বড় সমস্যা নেই। তাঁদের যুক্তি, মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে সিলিন্ডার কিনছেন। ফলে সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে সিলিন্ডারের চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। গত বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশে এ নিয়ে তৎপর হয়েছিল জেলা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখা। ধরপাকড় শুরু হয়েছিল। এ বার তাদের সেই তৎপরতা এখনও দেখা যায়নি বলেই অভিযোগ। সিলিন্ডার রিফিলিংয়েও কালোবাজারি চলছে বলে অভিযোগ। কেউ নিচ্ছেন ১৭০ টাকা, কেউ ২২০ টাকা কিংবা তারও বেশি।
পদক্ষেপ নেই জেলা স্বাস্থ্য দফতরেরও। কেন? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডলের দাবি, ‘‘হাসপাতালগুলিতে অক্সিজেনের কোনও সমস্যা নেই। পর্যাপ্ত অক্সিজেন রয়েছে। বাইরে কোন দোকানে, কী দামে বিক্রি হচ্ছে, সেটা আমাদের দেখার কথা নয়। পুলিশ-প্রশাসনের দেখার কথা। তাদের বলব বিষয়টি দেখতে।’’ জেলা প্রশাসনের দাবি, অক্সিজেনের চাহিদা, জোগান এবং বন্টনে নজর রাখা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কালোবাজারি ও অক্সিজেন মজুত করে রাখার ফলে কিছু সমস্যা হতে পারে। তার মোকাবিলা করা হচ্ছে।’’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে কালোবাজারি বাড়তে পারে ভেবে পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখাকে সতর্ক করা হয়েছে। দ্রুত কিছু দোকানে হানা দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy