ফাইল চিত্র
করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্কিত না হতে সরকারিভাবে প্রচার করা হচ্ছে রাজ্য জুড়ে। সংক্রমণ রুখতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য দফতর ও চিকিৎসকরা। অনেকে ‘এন-৯৫’ মাস্ক বা সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করছেন।
কিন্তু হঠাৎই অ্যালকোহল যুক্ত স্যানিটাইজার ও মাস্কের চাহিদা প্রচুর বেড়ে যাওয়ায় জেলা জুড়েই তার আকাল দেখা দিয়েছে। জোগান কম থাকায় তা পেতে নাকাল হচ্ছেন মানুষ। ওষুধের দোকান ও স্টেশনারি দোকানে গিয়ে খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। আরও অভিযোগ, ‘এন-৯৫’ মাস্ক দূরের কথা, সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্কও মিলছে না। তা ছাড়া সাধারণ মাস্কও চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
তবে মাস্ক নিয়ে সাধারণ মানুষের এমন চাহিদা প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘করোনা নিয়ে অকারণে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যাঁরা সংক্রমিত রোগী ও করোনা উপসর্গ রয়েছে এমন রোগীর চিকিৎসা করবেন কিংবা কাছাকাছি থাকবেন তাঁরাই মাস্ক ব্যবহার করবেন। সাধারণের মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে অ্যালকোহল যুক্ত স্যানিটাইজার ব্যবহার করা ও ঘনঘন হাত ধোয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’’
জেলা সদর তমলুক শহর ছাড়াও শিল্পশহর হলদিয়া ও কাঁথি, এগরা মহকুমা এলাকায় স্যানিটাইজার ও মাস্কের চাহিদা বাড়লেও ব্যবসায়ীরা তা জোগান দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে অনেকেই অ্যালকোহল যুক্ত স্যানিটাইজারের বদলে হাত ধোয়ার জন্য সাধারণ ‘হ্যান্ডওয়াশ’ কিনছেন। রবিবার তমলুক শহরের হাসপাতাল মোড়ের কাছে নামি স্টেশনারি দোকানে স্যানিটাইজার কিনতে গিয়েছিলেন তাপস শেঠ। কিন্তু দোকানদার জানালেন স্যানিটাইজার নেই। শেষে হ্যান্ডওয়াশ কিন্ই ফিরতে হল তাঁকে। তাপস বলেন, ‘‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অথচ শহরের একাধিক ওষুধ দোকান ও স্টেশনারি দোকানে অ্যালকোহল যুক্ত স্যানিটাইজার পাওয়া যাচ্ছে না। তাই হাত ধুতে হ্যান্ডওয়াশই কিনে নিয়ে যাচ্ছি।’’ একই অভিজ্ঞতা শহরের শঙ্করআড়ার বাসিন্দা অশোক কুইলার। অশোক বলেন, ‘‘শহরে গোটা দশেক দোকানে ঘুরেও অ্যালকোহল যুক্ত স্যানিটাইজার পেলাম না। সাধারণ হ্যান্ডওয়াশ দিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে।’’ স্টেশনারি ব্যবসায়ী রাজীব দত্ত বলেন, ‘‘সপ্তাহ তিনেক আগেও দোকানে ৪৮টি অ্যালকোহল যুক্ত স্যানিটাইজার মজুদ ছিল। খুবই কম বিক্রি হত। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে প্রচারের পরে আচমকা সব স্যানিটাইজার বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু তারপরে কলকাতা থেকে স্যানিটাইজার আনতে গেলেও পাওয়া যায়নি। এখন প্রতিদিন প্রায় ২০-২৫ জন দোকানে এসে স্যানিটাইজার চাইছেন। কিন্তু জোগান না থাকায় তাঁদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। বিকল্প হিসেবে অনেকে হ্যান্ডওয়াশ কিনছেন।
তমলুকের হাসপাতালমোড় এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ সামন্ত বলেন, ‘‘আমার দোকানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সার্জিক্যাল মাস্ক বিক্রি করা হয়। কিন্তু পাঁচ-ছ’দিন আগে সব শেষ গিয়েছে। সরবরাহ না থাকায় এখন অনেকে চাইলেও দিতে পারছি না।’’
স্যানিটাইজার ও মাস্কের জোগানের সমস্যা মেনে নিয়ে বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক বিমল ভৌমিক বলেন, ‘‘জেলায় প্রায় তিন হাজার ওষুধ দোকান রয়েছে। অন্য সময় স্যানিটাইজার বা মাস্ক সেভাবে বিক্রি হয় না। তাই অধিকাংশ ওষুধ দোকানে এই সব সামগ্রী কম থাকে। হঠাৎই স্যানিটাইজার ও মাস্কের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। স্যানিটাইজার ও মাস্কের চাহিদা মেটাতে আমরা সংগঠনিকভাবে কলকাতার সরবরাহকারীদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করেছি। প্রয়োজন অনুযায়ী এই সব সামগ্রী আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy