স্বাস্থ্যবিধি: করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতা নেওয়া হয়েছে সংশোধনাগারে। নিজস্ব চিত্র
গত শনিবারের ঘটনা। দমদম সংশোধনাগারে বন্দিরা ভাঙচুর চালাতে শুরু করে। আগুন লাগিয়ে দেয় জেলের অফিসে। একটি সূত্রের খবর, জেলের গন্ডগোলে একজনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কেন এই গন্ডগোল? প্রাথমিক সূত্রে খবর, করোনাভাইরাস আতঙ্কে আদালতে থমকে গিয়েছে জামিনের শুনানি। সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে বন্দিদের সঙ্গে পরিবারের লোকজনের সাক্ষাৎ বন্ধ করে দিয়েছে।
দমদম সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন। কারণ সংশোধনাগারে বন্দিদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা একটু বেশি। সংক্রমণের প্রথম নথিভুক্ত ঘটনা ১৯১৮ সালের। ইনফ্লুয়েঞ্জা অতিমারী হয়েছিল তখন। আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়ার সান কোয়েনন্টিন জেলে। নতুন বন্দি জেলে এসেছিল। আর তারাই অন্যদের বন্দিদের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ছড়িয়ে দেয়। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ও তাইল্যান্ডের জেলে ইনফ্লুয়েঞ্জা ছড়িয়েছিল। সংশোধনাগারে বহু মানুষ একসঙ্গে থাকে। সংস্পর্শে আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। স্বাস্থ্য পরিষেবাতেও ঘাটতি থাকে। জেলার বন্দিশালাগুলোর অবস্থা দেখা যেতে পারে।
মেদিনীপুরে কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার রয়েছে। জেল সূত্রের দাবি, করোনা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার নেওয়া হয়েছে। নতুন বন্দি এলে শুরুতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেই সংশ্লিষ্ট বন্দিকে সংশোধনাগারে ঢোকানো হচ্ছে। না হলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চিকিৎসক দেখানো হচ্ছে। কারা বিভাগের নির্দেশ মেনে বন্দিদের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের লোকজনদের সাক্ষাৎও বন্ধ করা হয়েছে। মেদিনীপুর জেলের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, করোনা সতর্কতার জেরে, বিভাগীয় নির্দেশেই পরিবারের লোকেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ বন্ধ করা হয়েছে। মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে প্রায় ১,৫০০ বন্দি থাকেন। এই সংশোধনাগারে ৫২টি সেল রয়েছে। সেলের দু’টি কাঠামো। একটি কাঠামো ‘বত্রিশ সেল’ নামে পরিচিত। এখানে ৩২টি সেল রয়েছে। ‘বিশ সেল’এ ২০টি সেল রয়েছে। কোনও সেলে একজন বন্দি রয়েছেন। কোনও সেলে দু’জনের বেশি বন্দি রয়েছেন। আর এখানে ওয়ার্ড রয়েছে ১২টি। ওয়ার্ডগুলোতে ঠাসাঠাসি করে বন্দিরা থাকেন। সূত্রের খবর, ১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ১৪০ জন বন্দি রয়েছেন, ২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ১৬০ জন। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ১৮০ জন বন্দি রয়েছেন। জেল সূত্রের দাবি, বন্দিদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হচ্ছে।
এই সময়ে একই ওয়ার্ডে এতজন বন্দির থাকা কি ঠিক? মেদিনীপুর জেলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আগের থেকে এখন আবাসিকের সংখ্যা বেড়েছে। বিচারাধীন আবাসিকেরা ওয়ার্ডেই থাকেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘করোনা সংক্রমণ এড়াতে যে যে পদক্ষেপ করার প্রয়োজন সবই করা হচ্ছে। সংশোধনাগার চত্বর স্যানিটাইজ করা হচ্ছে।’’ জ্বরে আক্রান্ত বন্দিদের চিকিৎসায় এখন বাড়তি নজর দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
কাঁথি এবং হলদিয়া মহকুমা সংশোধনাগারে নতুন কয়েদি ভিতরে ঢোকানোর আগে করোনা ভাইরাস রয়েছে কিনা, তা যাচাই করে দেখার জন্য প্রাথমিক ভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তার পর তাদের হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত পা ভাল ভাবে পরিষ্কার করা হচ্ছে। পরে ডেটল ও সাবান দিয়ে স্নান করিয়ে সংশোধনাগারের পোশাক পরানো হচ্ছে। এর পর নতুন করে তিনদিন আইসোলেশনে রাখা হয়। বন্দিদের জ্বর, সর্দি ,কাশি হচ্ছে কিনা পর্যবেক্ষণ করার পর পৃথক ওয়ার্ডে রাখা হয়। নতুন এবং পুরনো কয়েদিদের সঙ্গে পরিবারের লোকেদের দেখা করা এই মুহূর্তে বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলের কর্মীদেরও ক্ষেত্রে একই নিয়ম। কাঁথি এবং হলদিয়া মহকুমা সংশোধনাগারে ভিন রাজ্যের কয়েদি নেই।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক ঘাটাল উপসংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। বাড়তি সতর্কতা হিসাবে শনিবার সকালে এখান থেকে ৩০ জন বিচারাধীন বন্দিকে মেদিনীপুর জেলে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বাকি ২৪ জন বিচারাধীন বন্দিকে কড়া সতর্কতায় রাখা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির পর থেকেই উপসংশোধনাগারে একটি আইসোলেশন সেল খোলা হয়েছিল। ঘাটাল আদালত থেকে নতুন বিচারাধীন বন্দি এলে তাদের ওই সেলে রেখে পরীক্ষা করা হচ্ছে। জেলে ঢোকার পরই নিজস্ব চিকিৎসক এবং ফার্মাসিস্ট প্রাথমিক পরীক্ষা করছেন। তার পর আইসোলেশন সেলে। তিনদিন পরীক্ষার পর মূল সেলে রাখা হচ্ছে।
ঘাটাল জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ঘাটালে ২২ জন বিচারাধীন বন্দি থাকার মতো পরিকাঠামো রয়েছে। ভিড় কমাতে ৩০ জন বন্দিকে মেদিনীপুরে পঠিয়ে দেওয়া হয়। করোনার সময়ে এখন বন্দির সংখ্যাও তুলনায় কম। নিয়ম করেই জেল কর্তৃপক্ষ সচেতনামূলক প্রচার করছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি স্যানিটাইজ়ার দিয়ে হাত পরিষ্কার করাতেও অভ্যস্ত করা বিচারাধীন বন্দিদের খোঁজ নিতে জেল পরিদর্শন করছেন ঘাটালের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক, ঘাটালের এসিজেএম। মহকুমা শাসক অসীম পাল নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছেন। মহকুমা পুলিশ অফিসার অগ্নীশ্বর চৌধুরী ও জেলে গিয়ে বিচারাধীন বন্দিদের খোঁজ খবর রেখে চলেছেন।ঘাটাল থানার পক্ষ থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিলি করা হচ্ছে। ঘাটাল জেল সুপার মুকেশ লায়েক বলেন, “বিচারাধীন বন্দিদের নিয়ম করেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে। আলাদা সেল খোলা হয়েছে। নতুন বন্দির স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর সেলে ঢোকানো হচ্ছে।”
তমলুকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা উপ-সংশোধানাগারে এখন ১৫১ জন বিচারাধানী বন্দি রয়েছে। এদের ন’জন মহিলা। গত তিনদিন ধরে নতুন বন্দি ঢোকানোর ক্ষেত্রে করোনা সতর্কতা বিধি মেনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে স্যানিটাইজার, সাবান রাখা হয়েছে। বেশ কিছু কয়েদিকে মাস্ক দেওয়া হয়েছে। সাব-জেলার সুদীপ দাস বলেন, ‘‘গত তিনদিনে চারজন নতুন বিচারাধীন আসামি এসেছেন। রবিবার দু’জন নতুন বিচারাধীন এসেছেন। নতুন আসামীদের সংশোধানাগারে ঢোকানোর সময় স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে ও স্নান করানো হচ্ছে। তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর আলাদা করে সেলে রাখা হচ্ছে। সমস্ত বন্দিদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হচ্ছে।’’ সাব-জেলার জানান, বন্দিদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের দেখা করার সময় নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা ও কথা বলার সময় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দেখা করতে নিষেধ করা হচ্ছে। সংশোধানাগারের কর্মীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে বলা হয়েছে।
তথ্য সহায়তা: কেশব মান্না, বরুণ দে, অভিজিৎ চক্রবর্তী, আনন্দ মণ্ডল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy