এই অ্যাম্বুল্যান্সেই করোনা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন রাজু। নিজস্ব চিত্র
মেচগ্রামের বড়মা কোভিড হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসার সময় দুর্ঘটনায় মারা গেলেন অ্যাম্বুল্যান্সের চালক ও এক করোনা আক্রান্ত। হাসপাতালে ভর্তি আহত আরও এক করোনা আক্রান্ত। মৃত ও আহত সকলেরই বাড়ি কোলাঘাটে।
কোলাঘাট ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, শনিবার রাতে কোলাঘাট ব্লকের বৈষ্ণবচক ও গোপালনগর এলাকার দু’জন পরিযায়ী শ্রমিকের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। রিপোর্ট হাতে পেয়ে ওই দু’জন করোনা আক্রন্তকে হাসপাতালে ভর্তি করার তোড়জোড় শুরু হয়। রবিবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ ওই রোগীদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বড়মা হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হন অ্যাম্বুল্যান্স চালক রাজু মণ্ডল (৩২)। সকাল সওয়া ৭টা নাগাদ বড়মা হাসপাতালের অদূরে মেচগ্রাম আন্ডারপাসের কাছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি লরির পিছনে সজোরে ধাক্কা মারে অ্যাম্বুল্যান্সটি। ধাক্কার চোটে অ্যাম্বুল্যান্সের সামনের বেশ কিছুটা অংশ ঢুকে যায় লরির তলায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রাজুর। সেই সময় ওই এলাকায় প্রাতর্ভ্রমণ করছিলেন পাঁশকুড়া থানার অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর আমিনুল ইসলাম। তিনি ফোন করে খবর দেন পাঁশকুড়া থানায়। পুলিশের সঙ্গে উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রাও। কিন্তু গ্যাস কাটার না মেলায় উদ্ধার কাজে দেরি হয়। শেষ পর্যম্ত একটি জেসিবি মেশিন এনে গাড়িটিকে লরির নীচ থেকে টেনে বের করা হয়। মৃত চালকের দেহ পাঠানো হয় তমলুক হাসপাতালের মর্গে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দু’জন করোনা আক্রান্তকে ভর্তি করা হয় বড়মা হাসপাতালের আইসিইউতে। ঘণ্টাখানেক পরে মারা যান এক আক্রান্ত।
কোলাঘাটের বৈষ্ণবচক গ্রাম পঞ্চায়েচের কাশিগোড়ি গ্রামে ইটের দেওয়ালের ছোট্ট বাড়িতে থাকেন মা, ঠাকুমা, স্ত্রী ও বছর তিনেকের মেয়েকে নিয়ে ছিল আক্রান্তের পরিবার। তিনি। নিজের জমি বলতে কিছুই নেই। তাই সংসার চালাতে দিল্লিতে ফুলের কাজ করতে চলে গিয়েছিলেন। লকডাউন শুরু হলে দিল্লিতেই আটকে পড়েন তিনি। দিন তেরো আগে বাড়িতে ফেরার পরে কাশিগোড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিভৃতবাসে চলে যান। শনিবার রাতে তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। চিকিৎসার জন্য রবিবার ভোরে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সে তাঁকে পাঁশকুড়ায় বড়মা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু হাসপাতালের পৌঁছনোর আগেই দুর্ঘটনার কবলে তাঁদের পড়ে অ্যাম্বুল্যান্স। মাথায় গুরুতর চোট পান তিনি। শেষ পর্যন্ত বড়মায় ভর্তি করা হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। মারা যান তিনি।
এলাকার ছেলের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা গ্রাম। ছেলের খবর শুনে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন মা। পরিবারের অন্যরা জানান, লকডাউনের জেরে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন তাঁরা। তার উপর পরিবারের একমাত্র রোজগেরে করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় আরও চিন্তায় পড়ে যান সবাই। এ দিন চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় আশা ছিল সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। কিন্তু তার আগেই যে এ ভাবে পরিবারের উপর বিপদ নেমে আসবে তা কেউ ভাবতে পারেননি। মৃতের স্ত্রীর কথায়, ‘‘বড়মা হাসপাতাল থেকে করোনা রোগীদের অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ভেবেছিলাম স্বামীও কয়েকদিন পরেই সুস্থ হয়ে ফিরবেন। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। এখন আমাদের চলবে কী করে?’’
কোলাঘাট ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক শিবশঙ্কর খান বলেন, ‘‘খুবই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। অ্যাম্বুল্যান্স চালক-সহ একজন করোনা আক্রান্ত প্রাণ হারিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy