ছোট আঙারিয়া গ্রামে বক্তার মণ্ডলের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা। নিজস্ব চিত্র
ছোট আঙারিয়ার সঙ্গে জুড়ে বক্তার মণ্ডলের নাম। বৃহস্পতিবার ছোট আঙারিয়া দিবসে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরার গাড়ি থামল সেই বক্তারের বাড়ি। দুপুর তখন ২টো। অ্য়াসবেসটসের ছাদ, দরজা-জানলাহীন ঘরে সুজয় ঢুকলেন ত্রিপলের ছাউনি সরিয়ে। পৃথিবীর মায়া ছাড়িয়ে অনন্তলোকে পাড়ি দিয়েছেন বক্তার। রেখে গিয়েছেন অনন্ত দারিদ্র। বক্তারের স্ত্রীকে সুজয় প্রতিশ্রুতি দিলেন, অসম্পূর্ণ ঘর সম্পূর্ণ করার। অসুস্থ আনিসা বিবি শুনলেন। মুখ ফুটে বলতে পারলেন না ছোট ছেলেটার কিছু হিল্লে হল না এখন। পেটের টানে সে যে এখন ভিন্ রাজ্যে।
অন্য যা হওয়ার ছিল তা হল রুটিনমাফিক। ছোট আঙারিয়ায় সকাল থেকে তৃণমূলের কর্মসূচি। গ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বিজেপির সভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বাছাই শব্দে শাসক দলকে আক্রমণ। কোন পক্ষে ‘শহিদ পরিবারে’র সদস্যদের ভিড় বেশি, তা নিয়ে দাবি, পাল্টা দাবি। রাজনীতি চলল তার নিজের গতিতে। জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় দাঁড়িয়ে আরও অনেক কিছুর সঙ্গে শুভেন্দু বললেন, ‘‘আমার কুড়মি সমাজ। আপনারা সামাজিক আন্দোলন করতেই পারেন। আপনাদের ওবিসি দিয়েছিল মণ্ডল কমিশন। সেটাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেড়ে নিয়েছেন।" একধাপ এগিয়ে তাঁকে এ-ও বলতে শোনা গেল, ‘‘হিন্দু ওবিসিদের কোনও অস্তিত্ব নেই বাংলায়।’’ থেমে থাকেননি সুজয়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যদি শহিদ পরিবারদের প্রকৃতই শ্রদ্ধা জানাতে চান তাহলে সেই গ্রামে যেতে হত। ওঁরা (শুভেন্দু) বক্তার মণ্ডল বা অন্যান্য শহিদ পরিবারদের কখনও দেখেছে, দেখেনি।’’
বক্তারদের পরিবারের সদস্যদের দেখতে এ দিন তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলেন সুজয়। বক্তারের ৩ ছেলে আর ৪ মেয়ে। স্ত্রী আনিসা অসুস্থ। বড় ছেলে হিমঘরে কাজ করে। মেজো ছেলে মারা গিয়েছেন। আর ছোট ছেলে এখন পরিযায়ী শ্রমিক। চেন্নাইয়ে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন তিনি। দুই ছেলের রোজগারে কোনওরকম দিন কেটে যায়। অভাবের জন্য এক মেয়ের বিয়ে দিতে পারেননি এখনও। আর্থিক সঙ্কটে অসম্পূর্ণ হয়েই রয়েছে ইটের গাঁথনি দেওয়া বাড়ি। বসেনি দরজা, জানলা। ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া ঘরে থাকে বক্তারের পরিবার। তৃণমূলের জেলা সভাপতিকে সামনে পেয়ে বক্তারের স্ত্রী আনিসা আর্থিক অনটনের কথা বলেন। অসম্পূর্ণ বাড়ি দেখিয়ে বলেন, "বৃষ্টি হলে জল পড়ে, ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকা যায় না।" সুজয় হাজরা তাঁদের বাড়ি মেরামত করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে সুজয় বলেন, "আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে বক্তার মণ্ডলের বাড়ির অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করে দেব। ওঁর পরিবারের পাশে আমরা সর্বদা আছি।" এলাকা দখলের লড়াইয়ে ২০০১ এর ৪ জানুয়ারি ছোট আঙারিয়া গ্রামে তৃণমূল কর্মী বক্তার মণ্ডলের বাড়িতে সশস্ত্র হামলা চালানো হয় বলে সিপিএমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। সেই হামলায় পাঁচ জন নিহত হন। সিবিআই তদন্ত হয়। অভিযুক্ত সিপিএম নেতারা ধরা পড়েন। পরে প্রমাণের অভাবে ছাড়াও পান। ২০২২ সালে মৃত্যু হয় বক্তারের।
সুজয় পৌঁছেছিলেন বক্তারের বাড়ি। বক্তারের এক মেয়ে হাজির হয়েছিলেন তৃণমূলের কর্মসূচিতে। সভামঞ্চে জেলা সভাপতি ছাড়াও বিধায়ক উত্তরা সিংহ-সহ তৃণমূলের অন্য নেতৃবৃন্দও শহিদ পরিবারদের পাশে আগের মতোই থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এ দিন স্মরণসভার মঞ্চে শহিদ পরিবারদের সদস্যদের দেখিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব বলেন, এঁরাই প্রকৃত শহিদ পরিবার। বিজেপি যাঁদের শহিদ পরিবার বলছে তাঁরা ওই পরিবারদের কেউ নন। গড়বেতায় বিজেপির সভামঞ্চের পাশেই অস্থায়ী শহিদ বেদিতে মাল্যদান করেন শুভেন্দু। গেরুয়া শিবিরের দাবি, সেখানেই ৩ টি শহিদ পরিবারের ৫ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। শুভেন্দু তাঁদের নাম উল্লেখ করে বলেন, "তৃণমূল এইসব শহিদ পরিবারদের দেখে না।" এ দিনের সভায় বিরোধী দলনেতা বামপন্থীদের মধ্যে ভালো-মন্দের সীমারেখা টেনে বলেন, "সিপিএমের সবাই খারাপ বলব না। আগে প্রমোদ দাশগুপ্ত, সুকুমার সেনগুপ্ত, গীতা মুখোপাধ্যায়রা চালাতেন, এখন দীপক সরকার, সুশান্ত ঘোষেরা চালান।"
ছোট আঙারিয়ায় ‘শহিদ’দের কাছে টানার প্রতিযোগিতা চলছে। ভোটের আশায় যেমনটা চলে নন্দীগ্রাম-সহ অন্য জায়গায়। তারই মধ্যে অলক্ষে থেকে ছোটো জীবনের আরও ছোটো আশা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy