সেই ট্যাপ কল। নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যের ৩১৫টি মহকুমা, সুপার স্পেশালিটি, গ্রামীণ হাসপাতালের মধ্যে ২৯৪ নম্বরে রয়েছে কেশিয়াড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল। এমনই তথ্য উঠে এসেছে ‘সুশ্রী’ (কায়াকল্প) প্রকল্পের রিপোর্টে। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় অবস্থিত এই হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেল পিছিয়ে থাকার নানা কারণ। তবে হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্সেরা দাবি করলেন আগের থেকে নাকি পরিস্থিতি অনেক বদলেছে।
এই হাসপাতালটির অন্তর্বিভাগে মোট ৩০টি শয্যা। তার মধ্যে বৃহস্পতিবার মহিলা বিভাগে ৭-৮ জন ভর্তি ছিলেন। যাঁদের বেশিরভাগই অন্তঃসত্ত্বা। পুরুষ বিভাগে ভর্তি ছিলেন দু’জন। পুরুষ বিভাগে ১৫টি শয্যা। তার মধ্যে দু’টি ভাঙা। বেশ কয়েকটির বিছানা ছেঁড়া। দু’টি বিভাগেই ডাস্টবিন চোখে পড়েনি। বিশুদ্ধ পানীয় জলের মেশিন থাকলেও সেটা হাসপাতালের কর্মীরাই ব্যবহার করেন। হাসপাতালের কর্মীদের দাবি, এলাকার মানুষ বিশুদ্ধ পানীয় জলের মেশিন ব্যবহার করতে জানেন না। তাই বাইরে থেকেই জল আনেন তাঁরা। বিপিন বাস্কে নামে ভর্তি থাকা এক রোগী বললেন, ‘‘জল ও ডাস্টবিনের সমস্যা আছে। যাই হোক করে কাটিয়ে দিতে পারলেই হল।’’ ডাস্টবিন নেই কেন? এক নার্স বললেন, ‘‘আগে রাখা হত। এখন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী কম। ডাস্টবিন এত নোংরা হত যে তা যে পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই রাখা হয় না।’’
একতলা হাসপাতালের মাথায় কংক্রিটের ছাদ নেই। টিনের ছাউনি। জায়গাও বেশি বড় নয়। অন্তর্বিভাগ মোটের উপরে পরিষ্কার হলেও হাসপাতাল চত্বরে যত্রতত্র আবর্জনা জমেছে। রোগীর পরিজনদের জন্য শৌচালয়ের ব্যবস্থা নেই। হাসপাতাল চত্বরে পানীয় জলের উৎস বলতে একটি সজল ধারার ট্যাপ কল। দিনে দু’বার নির্দিষ্ট সময়ে জল আসে সেখানে। রোগী ও রোগীর পরিজনেরা সেখান থেকে জল নেন। সেই ট্যাপকলের পাশে এদিক ওদিক পড়ে রয়েছে খাবারের উচ্ছিষ্ট। হাসপাতালের সামনের নিকাশি নালা নোংরায় অবরুদ্ধ। তাতে মশার লার্ভা কিলবিল করছে। গরু, ছাগল, কুকুরের আনাগোনা তো আছেই।
বহির্বিভাগ প্রতিদিন সকাল নটা থেকে দুটো পর্যন্তই খোলা থাকে। এদিন দশটা পঞ্চাশ নাগাদ বহির্বিভাগের সামনে তিন চারজন অপেক্ষা করলেও চিকিৎসক ছিলেন না। জানা গেল, চিকিৎসক কয়েকজন রোগী দেখার পরে বাইরে গিয়েছেন। অপেক্ষারত রোগী দেবব্রত কুণ্ডু, সুজিত মল্লিকেরা বললেন, ‘‘দশ মিনিট পরে চিকিৎসক আসবেন জানালেও আধ ঘণ্টা ধরে বসে আছি।’’ পরে অবশ্য চিকিৎসক আসেন। বুধবারই স্ত্রীকে ভর্তি করেছেন কেশিয়াড়ির বেলুট এলাকার বাসিন্দা সনাতন টুডু। তিনি বললেন, ‘‘চিকিৎসা তো হচ্ছে দেখছি। তবে রোগীর আত্মীয়দের থাকার কোনও ভাল বন্দোবস্ত নেই। পানীয় জল ও শৌচাগারও নেই।’’ কেশিয়াড়ির আমড়াতলিয়ার ধনী হাঁসদা তাঁর এক আত্মীয়াকে ভর্তি করেছেন। জল, ডাস্টবিনের অসুবিধার কথা জানালেন তিনিও।
কেশিয়াড়ি ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের ভরসা এই হাসপাতাল। সেখানে এখন রয়েছেন ১১ জন নার্স, ৪ জন চিকিৎসক। একজন স্থায়ী ও দু’জন চুক্তিভিত্তিক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী আছেন। ‘সুশ্রী’তে খারাপ মূল্যায়ন নিয়ে এক নার্সের দাবি, ‘‘অগস্ট মাসে পরিদর্শন হয়েছিল। তখন করোনা বেশি ছিল। বিএমওএইচ নিজে করোনা আক্রান্ত ছিলেন। তাই হয়তো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে পারেননি তিনি।’’ তিনি জুড়ছেন, ‘‘এখন আগের থেকে হাসপাতাল অনেকটাই পরিষ্কার। যতটা সম্ভব মানিয়ে নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি।’’ জানা গেল, করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের সময়ে রোগীর আত্মীয়দের থাকার একটি জায়গায় অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা হয়েছিল। সেই ঘর এখনও বন্ধ। ‘সুশ্রী’র মূল্যায়ন নিয়ে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তরণীকুমার শীট বলেন, ‘‘শেষের দিকে নাম থাকলেও নম্বর খুব খারাপ হয়নি। আগের থেকে পরিষেবা ও পরিকাঠামোতে ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। চেষ্টা চলবে।’’
এর আগে রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক পরেশ মুর্মু। এবারও তিনিই জিতেছেন। তবে নতুন করে আর সেই কমিটি গঠন হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালের নতুন ভবন দরকার। শয্যাও বাড়ানো প্রয়োজন। দিন দিন রোগীর চাপ বাড়ছে। প্রশাসনের উচ্চস্তরে আবেদন জানানো হয়েছে। আগামীদিনে পরিকাঠামো ও পরিষেবা বৃদ্ধি পাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy