Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

বেশি পড়ে হবেটা কী! বলছে মেয়েরাই

স্মরণ-বরণেই কি বন্দি মনীষী! সিংহশিশুর গ্রামে শিক্ষার হালহকিকত বীরসিংহের বালিকা বিদ্যালয়টির অবস্থা তো শোচনীয়। কিন্তু সেখানে সামগ্রিক ভাবে নারী শিক্ষার হাল কী?

বীরসিংহ বিদ্যাসাগর বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র

বীরসিংহ বিদ্যাসাগর বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ চক্রবর্তী
বীরসিংহ শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

নারী শিক্ষার নিক্তিতে বিচার করলে রাজ্যের আর পাঁচটা গ্রামের সঙ্গে বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান বীরসিংহের কোনও তফাত চোখে পড়বে না!

সমাজে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণের গুরুত্ব বুঝেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। মেয়েরা শিক্ষিত হলে পরিবারও শিক্ষিত হয়। তৈরি হয় স্বনির্ভরতার সুযোগ। বিদ্যাসাগরের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। কিন্তু সে উত্তরাধিকার এখনও বহন করছে বীরসিংহ? বিদ্যাসাগরের জন্মের দু’শো বছর উপলক্ষে যখন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে, তখন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে এই উত্তরাধিকারের প্রসঙ্গ।

বীরসিংহের বালিকা বিদ্যালয়টির অবস্থা তো শোচনীয়। কিন্তু সেখানে সামগ্রিক ভাবে নারী শিক্ষার হাল কী?

গ্রাম ঘুরে, সমাজের নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে যা বোঝা গেল তা হল, এখানে এমন কোনও বিশেষ দিক নেই যা বীরসিংহের সিংহশিশুর গ্রামকে অন্যদের থেকে আলাদা করবে। অর্থাৎ নারী শিক্ষায় এই গ্রামের সাফল্য গড়পরতাই। প্রাথমিকের গণ্ডি টপকানো এখন আর তেমন বড় বিষয় নয় এখানে। কিন্তু যতজন প্রাথমিক পর্যায়ের পড়া শেষ করছে, ততজন বসছে না মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিকে। বীরসিংহের পরিসংখ্যান বলছে, দশজন যদি প্রাথমিকের গণ্ডি টপকায় তাহলে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক তিন-চারজন।

বীরসিংহ তফসিলি জাতি-জনজাতি অধ্যুষিত এলাকা। হাজার তিনেক জনবসতি (২০১১ জনসমীক্ষা)। শিক্ষার হার ৮৭.৩০ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৯২.৫২ শতাংশ, মহিলা ৮১.৪৪ শতাংশ। অর্থাৎ মহিলারা পুরুষদের তুলনায় ১০ শতাংশেরও বেশি পিছিয়ে। উচ্চশিক্ষায় অবস্থাও একই রকম ভাবে করুণ। তবে এ ক্ষেত্রে একটি অন্য দিক রয়েছে। তফসিলি জাতি, জনজাতি পরিবারের মেয়েরা উচ্চ শিক্ষার হারে যতটা পিছিয়ে ততটা খারাপ পরিস্থিতি নয় উচ্চবর্ণের মেয়েদের। ঘাটাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী গোলাপি সরেনের আক্ষেপ, “প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক গ্রামের অনেক মেয়েই পড়ে। তারপরই আর্থিক অভাব ও সহ নানা কারণে পড়া বন্ধ করে দিচ্ছে। আদিবাসী সমাজে কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাওয়ার পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি।”

বীরসিংহ গ্রামের স্কুল-কলেজ মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বেশি দূর পর্যন্ত পড়ে কী হবে— এই আত্মঘাতী প্রবণতাও তৈরি হয়েছে। যা আরও পিছিয়ে দিচ্ছে মেয়েদের। বীরসিংহের বাসিন্দা কলেজ ছাত্রী পাপিয়া মল্লিকের কথায়, “জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চাকরি প্রয়োজন। তার জন্য লেখাপড়া জরুরি। সেই বোধ অন্য অনেক জায়গার মতো বীরসিংহেও তৈরি হয়নি।” বীরসিংহ বিদ্যাসাগর বালিকা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষিকা মীরা রায় বলেন, “সমাজে উন্নতি করতে গেলে মেয়েদের শিক্ষার হার না বাড়ালেই নয়। একই রকম ভাবে বাড়াতে উচ্চ শিক্ষায় যোগদান। তবেই সমাজের সামগ্রিক উন্নতি সম্ভব।”

বেশি দূর পর্যন্ত পড়াশোনা করে কী হবে! নারীশিক্ষায় বীরসিংহের উত্তরাধিকার তবে কি এখন এটাই!

অন্য বিষয়গুলি:

Female Education Birsingha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy