অগত্যা: বারান্দায় বেঞ্চ পেতে চলছে পঠনপাঠন। নিজস্ব চিত্র
বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে সচেতনতা শুরু হয়েছে কলকাতায়। রাস্তার মোড়ে মো়ড়ে ব্যানার লাগানো হয়েছে পুরসভার তরফে। এমন সচেতনতার প্রচার হয় তমলুক পুরসভার তরফেও। কিন্তু প্রাচীন শহরের পুরনো বাড়িগুলির অবস্থা যে কতটা খারাপ এবং তা নিয়ে মানুষের সচেতনতা যে একেবারেই নেই তা প্রমাণ করে দিল তমলুকের হ্যামিল্টন স্কুলের প্রাথমিক বিভাগ।
প্রায় শতবর্ষ প্রাচীন একটি বাড়িতে প্রাথমিক বিভাগের ক্লাস হয়। গত দু’দিনে সে বাড়ির ভিতরে ছাত্রদের ঢুকতে দিতে সাহস পাননি শিক্ষকরা। দ্বিতীয় শ্রেণির পঠনপাঠন চলেছে বাড়ির বারান্দায়। কিন্তু সেই বারান্দার অবস্থাও খুব ভাল নয়।
বেশ কয়েক বছর ধরেই হ্যামিল্টন স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের ক্লাস হয় পলেস্তরা খসে যাওয়া স্যাঁতস্যাঁতে দেওয়ালের বাড়িটিতে। ফাটল ধরা ছাদ চুঁইয়ে নামে বৃষ্টির জল। বেঞ্চে বসে ভিজে যায় খুদে পড়ুয়া। বাড়ি ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় থাকেন অভিভাবকরা।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক যুগল পাল বলেন, ‘‘স্কুল ভবনের বিপজ্জনক অবস্থা আমরা জানি। কিন্তু নিরুপায়। জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা দফতরের কাছে আমরা জানিয়েছি।’’
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হ্যামিল্টন স্কুলের সূচনা ১৮৫২ সালে। ব্রিটিশ রাজত্বে চার্লস হ্যামিল্টনের স্থাপিত স্কুলে চালু হয়েছিল তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণি— মিডল ইংলিশ স্কুল। ১৯০১ সাল নাগাদ এই স্কুলেই ভর্তি হয়েছিলেন বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িত বিপ্লবী অজয় মুখোপাধ্যায়, সুশীল ধাড়াদের স্মৃতি বিজড়িত স্কুলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি চালু হয় ১৯৫০-৫১ সালে। প্রথম দিকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিভাগের ক্লাস একই ভবনে চলত। তবে বেশ কয়েকবছর আগে প্রাথমিকের ক্লাস স্থানান্তরিত হয়ে যায়। প্রথম ও দ্বিতীয় এবং শিশু শ্রেণির ক্লাস শুরু হয় মূল ভবনের পিছনে একটি ভবনে। ওই ভবন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের বাসভবন হিসাবে ব্যবহৃত হত এক সময়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস শুরু হয় স্কুলের সামনে রাস্তার পাশে ক্ষুদিরাম পাঠাগারে। ওই ভবনেই রয়েছে রান্নাঘর। সেখানেই মিড-ডে মিল খেতে রাস্তা পেরিয়ে আসে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়ারা। দু’টি ভবনই এখন ভগ্নপ্রায়।
হ্যামিল্টনের প্রাথমিক বিভাগে এখন পড়ুয়ার সংখ্যা ২২৯ জন। শিক্ষক, শিক্ষিকা আছেন ন’জন। শিক্ষক চিত্তরঞ্জন মাইতি বলেন, ‘‘দ্বিতীয় শ্রণির দু’টি বিভাগ রয়েছে। প্রথম ও চতুর্থ শ্রেণিতেও দু’টি বিভাগের প্রয়োজন। কিন্তু ঘর নেই। তাই একই ঘরে বসাতে হয় পড়ুয়াদের। তার উপর এই ভাঙাচোরা ঘর। যে কোনও সময় বিপদ ঘটে যেতে পারে।’’
স্কুলের এক অভিভাবক কবিতা মণ্ডল বলেন, ‘‘ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলো রাস্তা পেরিয়ে খেতে আসে দুপুরে। সব সময় আতঙ্কে থাকি। তার উপর এই জীর্ণ স্কুল বাড়ি। চাঙড় খসে প়ড়লে কী হবে?’’ স্থানীয় গোপাল জানার ছেলে সুপ্রকাশ পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ক্ষুব্ধ গোপালবাবু এ দিন বলেন, ‘‘দু’দিন ধরে বারান্দায় ক্লাস হচ্ছে। সে বারান্দাও তেমনই। কোনও দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তার দায় কে নেবে।’’
হ্যামিল্টন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সোমনাথ মিশ্র বলেন, ‘‘প্রাথমিক বিভাগের জন্য স্কুলের কাছেই অন্য একটি জায়গা দিতে চেয়েছি। প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।’’
তমলুকের মহকুমাশাসক শুভ্রজ্যোতি ঘোষ বলেন, ‘‘ঐতিহ্যবাহী হ্যামিল্টন স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের দুর্দশার কথা জেনেছি। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। রিপোর্ট পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy