তখনও উদ্ধার করা হয়নি। মঙ্গলবার সকালে (বাঁ দিকে)। আহত শিশু ও মহিলারা ভর্তি মেদিনীপুর মেডিক্যালে। নিজস্ব চিত্র
বছর ঘুরলে পঞ্চায়েত ভোট। তার আগেই রক্ত ঝরল কেশপুরে। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল— দফায় দফায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ হল। বেশ কয়েকজন জখম হয়েছেন। জখমেরা কেশপুর গ্রামীণ হাসপাতাল এবং মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সংঘর্ষের খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছয় পুলিশ। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার জানিয়েছেন, কেশপুরের ঘটনায় ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, বাকি জড়িতদের খোঁজে এলাকায় তল্লাশি অভিযান চলছে।
ঘটনাচক্রে, সোমবার বিকেলই কেশপুরে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন তৃণমূলের দাপুটে নেতা মহম্মদ রফিক। তার পরে সোমবার রাত থেকেই উত্তেজনা ছড়ায় শাকপুর, গরগজপোতায়। জানা গিয়েছে, একশো দিনের বকেয়া মেটানোর দাবিতে সোমবার কেশপুরেও মিছিল করেছিল তৃণমূল। মিছিল শেষে বাসস্ট্যান্ডে সভাও হয়। ছিলেন মন্ত্রী তথা বিধায়ক শিউলি সাহা, দলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আশিস হুতাইত প্রমুখ। এই সভায় পুলিশের উদ্দেশে এক মন্তব্য করেন রফিক। যা নিয়ে দলের ভেতরে- বাইরে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। রফিক বলেছিলেন, ‘‘কেশপুরের পুলিশকে বলব, আধ ঘণ্টা আপনারা থানায় থাকুন না। একটু এসি-টেসি খান না। ফ্যানের বাতাস খান না। একটু আমাদের সময় দেন না। খেলা হবে কেশপুরের মাটিতে। সেই খেলা দেখাতে আমাদের আধ ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না!’’ তারপরেই রাতে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ। মঙ্গলবার অবশ্য রফিকের দাবি, ‘‘আমার বক্তৃতার জন্য কিছু হয়নি। কেশপুরের ওই দুই এলাকায় মাঝেমধ্যেই গোলমাল হয়।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, এলাকার নিয়ন্ত্রণ কার দখলে থাকবে, সে নিয়েই গোলমাল হয়। জখম সেতারা বিবি নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘ওরা আমাকেও মেরেছে।’’ ওরা মানে কারা? সেতারা বলেন, ‘‘যারা মারধর করেছে, তারা তৃণমূল করে, আমরাও তৃণমূল করি। দল একটাই। তবু ওরা বিরোধী করছে।’’ তিনি জোড়েন, ‘‘আমরা রাতের বেলায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ওরা এসে দরজায় লাথি মেরেছে। মারামারি করেছে। রাতেই পুলিশ গিয়েছিল। সকালে ওরা পুলিশের সামনেই মারামারি করেছে। পুলিশ কিছুই করতে পারেনি।’’ তাঁর অনুযোগ, ‘‘ পুলিশই ওদের সঙ্গ দিচ্ছে। না হলে পুলিশের সামনে মারে কী করে?’’ রিজা বিবি নামে স্থানীয় এক মহিলার অভিযোগ, ‘‘কাল রাত থেকে একদম টিকতে দিচ্ছে না। ঘুমোতেও দিচ্ছে না। আজ সকাল থেকে আবার আরম্ভ করে দেয় গোলমাল।’’ তিনিও বলেন, ‘‘আমরা তৃণমূল করি, যারা মেরেছে, তারাও তৃণমূল করে। পার্টিতে যেমন গন্ডগোল হয়, তেমন গন্ডগোল হয়েছে।’’ তাঁর আর্জি, ‘‘দিদির (মুখ্যমন্ত্রীর) কাছে আবেদন, আমরা যেন শান্তিতে থাকতে পারি, সেই ব্যবস্থা করুন। দ্বন্দ্ব যেন না হয়।’’
কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহা অবশ্য গোলমালের দায় বিজেপির ঘাড়ে চাপিয়েছেন। তৃণমূলের কেউ যুক্ত নন? বিধায়কের মন্তব্য, ‘‘সর্ষের মধ্যে ভূত তো থাকেই!’’ পুলিশের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘ধরপাকড়ে পুলিশ যেন পক্ষপাত না করে। যারা যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধেই যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বিধানসভা ভোটের সময়েও এই দুই এলাকায় বিজেপির লোকেরা অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছিল।’’ তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি উত্তম ত্রিপাঠীর দাবি, ‘‘দলে কোন্দল নেই। ওটা পারিবারিক বিবাদের জের!’’ তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান অজিত মাইতি বলেন, ‘‘কেশপুরে দু’টো পাড়া নিয়ে একটা সমস্যা হয়েছে। পুলিশ তো কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। এটাকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে চালানোর কোনও মানে আছে বলে আমি মনে করি না।’’ অজিত জুড়েছেন, ‘‘তবে আমি আবারও বলছি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব করেও কেউ বাঁচতে পারবে না। যদি আমাদের কোনও নেতা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব করে, তাকে আমরা দল থেকে বের করে দেবো। কেশপুরকে আমরা অশান্ত হতে দেব না।’’
কেশপুরের এক তৃণমূল নেতার মন্তব্য, ‘‘যাদের নেতৃত্বে এই গন্ডগোলটা হল, তারা গত বিধানসভা ভোটে বিজেপির এজেন্ট হিসেবে বসবে বলে ঠিক করেছিল।’’ সব শুনে বিজেপির রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল এখন সবেতেই বিজেপির ভূত দেখছে।’’ তুষার বলেন, ‘‘ওরা নিজেরাই নিজেদের লোকেদের সঙ্গে মারামারি করছে। মানুষ ওদের উপরে বিরক্ত।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy