প্রতীকী ছবি।
করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ। ফলে নিষ্ক্রিয় কন্যাশ্রী ক্লাব। যার জেরে লকডাউন থেকে আনলক পর্বে জেলায় বাড়ছে নাবালিকা বিয়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিয়ের খবর পৌঁছচ্ছে না প্রশাসনের কাছে।
নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে আইন তৈরির পাশাপাশি রাজ্য সরকার কন্যাশ্রী ও রূপশ্রী, সবুজ সাথী-সহ একাধিক প্রকল্প চালু করেছে। কিছু ক্ষেত্রে তার সুফলও মিলেছে। মেয়েদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ যেমন বেড়েছে। তেমনই সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে নাবালিকা বিয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রচারেও জোর দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ব্লক থেকে অঞ্চল এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পর্যন্ত আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্কুলে মেয়েদের নিয়ে কন্যাশ্রী ক্লাব তৈরি করা হয়েছে। যাতে নাবালিকা মেয়েদের সুবিধা-অসুবিধা সংক্রান্ত তথ্য সরাসরি জেলা স্তরে আধিকারিকদের কাছে পৌছয়। নাবালিকা বিয়ে বন্ধে সবচেয়ে কার্যকর হয়েছিল এই কন্যাশ্রী ক্লাবগুলি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল ছুটি থাকায় কন্যাশ্রী ক্লাবগুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে নাবালিকা বিয়ের সব তথ্য জেলা ও ব্লক প্রশাসনের কাছে পৌঁছচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে নাবালিকা বিয়ে নিয়ে জেলায় একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
সূত্রের খবর, জেলায় এগরা মহকুমায় নাবালিকা বিয়ের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া পটাশপুর, মহিষাদল, কোলাঘাট, খেজুরি ও কাঁথি এলাকায় নাবালিকা বিয়ের প্রবণতা রয়েছে। নাবালিকা বিয়ের প্রবণতা বাড়ার কারণ হিসাবে উঠে এসেছে কয়েকটি তথ্য। এক, লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় গ্রামীণ এলাকার বেশিরভাগ ছাত্রীর পড়াশোনার প্রতি অনীহা। দুই, লকডাউনে রোজগার হারিয়ে অর্থসঙ্কটে বহু পরিবার। ফলে সেই পরিবারে নাবালিকা বিয়ের প্রস্তাব এলে অনেকেই রাজি হয়ে যাচ্ছেন। তিন, লকডাউনের কারণে ভিন্ রাজ্য থেকে কাজ হারিয়ে অল্পবয়সী বহু যুবক গ্রামে ফিরেছেন। তাঁদের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দে্ওয়ার প্রস্তাব নিয়ে মেয়ের বাড়িতে হাজির হচ্ছেন পরিচিত লোকজন। চার, কিছু ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়েরা গোপনে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করছে। পরে দুই পরিবারের মধ্যে আলোচনায় তারা ঘরে ফেরার পর মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে চুপ থাকছে তার পরিবার ও প্রতিবেশীরা।
প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্য সরকার যেখানে মেয়েদের পড়াশোনায় সাহায্য করতে ‘কন্যাশ্রী’ (এককালীন ২৫০০০টাকা) এবং মেয়ে সাবালক বলে তাঁর বিয়ের জন্য ‘রূপশ্রী’(এককালীন ২৫০০০ টাকা)প্রকল্প চালু করেছে। তার পরেও নাবালিকা বিয়ের প্রবণতা কেন? মূলত সাংসারিক অভাব এবং সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করেছেন অনেকে। নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন পটাশপুরের এমন এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘দিনমজুরি করে সংসার চলে। মাধ্যমিক দেওয়ার পরেই ভাল পাত্রের সন্ধান আসায় মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা থাকলেও অতদিন পর্যন্ত মেয়েকে রেখে বিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই সুযোগ হাতছাড়া করিনি।’’ পটাশপুরের এক স্কুলশিক্ষক সুকান্ত প্রধান বলেন, ‘‘নাবালিকা বিয়ের খবর পেয়ে পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের সহযোগিতায় একাধিক বিয়ে বন্ধ করেছি। তবে অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছা ও সচেতনতা প্রচারের অভাব এই প্রবণতা বাড়িয়েছে। লকডাউনের জন্য কন্যাশ্রী ক্লাবগুলো ভেঙে যাওয়ায় স্কুলের তরফেও নজরদারি রাখা সম্ভব হচ্ছে না।’’
এগরা মহকুমার এক বিডিও বলেন, ‘‘সচেতনতার অভাব এবং মানসিকতাও অন্যতম প্রধান বাধা। ভাল পাত্র পেলে আর কোনও কিছু না ভেবে কোনও মতে টাকার জোগাড় করে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন বাবা-মা।’’ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অফিসার পূর্ণেন্দু পৌরাণিক বলেন, ‘‘স্কুল বন্ধ থাকায় কন্যশ্রী ক্লাবগুলি নিষ্ক্রিয়। ফলে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে লকডাউনের মধ্যে নাবালিকা বিয়ে বাড়লেও যথাসম্ভব নজর রাখা হচ্ছে।’’ তবে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, নাবালিকা বিয়ে বন্ধে সচেতনতা আরও বাড়ানো জরুরি। তবে সেই সঙ্গে নাবালিকা বিয়ে দিতে গিয়ে ধরা পড়লে শুধু মেয়ের পরিবারের মুচলেকা নয়, নাবালিকা বিয়ের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে আরও কঠোর আইনি পদক্ষেপ করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy