Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Jhargram

মন্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার, শোরগোল ঝাড়গ্রাম মেডিক্যালে

সোমবার বিকেলে জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয়। ঝড়ে অ্যাসবেস্টস ভেঙে গায়ে পড়ায় জখম হন লালগড়ের ছোট পেলিয়া গ্রামের বাসিন্দা মংলি মুর্মু।

ঝাড়গ্রাম মেডিক্যালের সিঁড়িতে ধর্নায় মন্ত্রী বিরবাহা। করজোড়ে মন্ত্রীকে ওঠার অনুরোধ করছেন মেডিক্যাল সুপার। নিজস্ব চিত্র

ঝাড়গ্রাম মেডিক্যালের সিঁড়িতে ধর্নায় মন্ত্রী বিরবাহা। করজোড়ে মন্ত্রীকে ওঠার অনুরোধ করছেন মেডিক্যাল সুপার। নিজস্ব চিত্র kingshuk.gupta@abp.in

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৩ ০৮:০৮
Share: Save:

ঝাড়গ্রাম: মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার সঙ্গে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকের দুর্ব্যবহারের ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে শাসকদলের অন্দরে। এই ঘটনায় ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে বিরবাহার হুঁশিয়ারি, বুধবার বিধানসভায় যাচ্ছেন তিনি। এর বিহিত না হলে বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করবেন।

সোমবার বিকেলে জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয়। ঝড়ে অ্যাসবেস্টস ভেঙে গায়ে পড়ায় জখম হন লালগড়ের ছোট পেলিয়া গ্রামের বাসিন্দা মংলি মুর্মু। লালগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ওই মহিলাকে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। লালগড় এলাকাটি ঝাড়গ্রাম বিধানসভার অধীনে। এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা খবর পেয়ে রাতেই ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান।

ওই সময় জরুরি বিভাগে মংলিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে মংলিকে দেখানো, এক্স- মংলিকে ফিমেল সার্জারি বিভাগে পাঠানো হয়। সেখানেও যান বিরবাহা। অভিযোগ, ওই বিভাগের কর্তব্যরত শল্য চিকিৎসক সৈকত রানা মন্ত্রীর উপস্থিতিতেই মংলির ছেলে বৈদ্যনাথ মুর্মুর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। বৈদ্যনাথ মায়ের আঘাতের জায়গা ওই চিকিৎসককে দেখাতে গেলে তিনি তাঁকে ওয়ার্ড থেকে বার করে দেন বলে অভিযোগ। বিরবাহা ওই চিকিৎসকের নাম জানতে চান। চিকিৎসক বিরবাহাকে জানিয়ে দেন, তিনি কোনও অপরিচিতকে নাম জানাতে বাধ্য নন। অপমানিত বিরবাহা হাসপাতালের সার্জিক্যাল বিভাগের সিঁড়িতে ধর্নায় বসে পড়েন। আসেন হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার গৌতমেশ্বর মজুমদার ও সহকারি সুপার স্নেহাশিস পাত্র। তাঁরা মন্ত্রীকে সিঁড়ি থেকে ওঠার অনুরোধ করেন। সৈকতকে রাতের ডিউটি থেকে অব্যহতি দিয়ে আরেক শল্য চিকিৎসক সুব্রত হাজরাকে ফিমেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। সৈকত জানান, তিনি মন্ত্রীকে চিনতে পারেননি। বিরবাহার কাছে ক্ষমা চান ওই চিকিৎসক। এরপরই রাত ১২টা নাগাদ হাসপাতাল চত্বর ছেড়ে চলে যান মন্ত্রী।

চিকিৎসকদের একাংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসার সময় পুরুষদের থাকার নিয়ম নেই। তাই তিনি ওই রোগিণীর ছেলেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। প্রশ্ন উঠেছে, প্রচুর রোগিণীকে দেখার মাঝে মন্ত্রীকে চিনতে না পারাটা কি দোষের? বিরবাহা অবশ্য বলেন, ‘‘হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে রোগীদের কাছ থেকে বিস্তর অভিযোগ পাই। রোগীদের ও পরিজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয় বলেও শুনি। সেটা স্বচক্ষে দেখলাম। ওই চিকিৎসকের এরকম দুর্ব্যবহারে আমি হতবাক! বুধবার বিধানসভায় যাচ্ছি। বিহিত না হলে বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করব।" সৈকত অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি মন্ত্রীকে চিনতে পারিনি। মন্ত্রী ম্যাডাম আগে পরিচয়ও দেননি। তখন রোগিণীকে দেখছিলাম। আমি রোগিণীর ছেলেকে ওয়ার্ড থেকে বার করেও দিইনি। পুরোটাই ভুল বোঝাবুঝি। মন্ত্রী ম্যাডামের কাছে ক্ষমাও চেয়েছি।’’

হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার গৌতমেশ্বর মজুমদার বলেন, ‘‘ওই চিকিৎসক রাতেই মন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন।’’ তবে হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান রবিন টুডু বলেন, ‘‘রাজ্যের মন্ত্রীকে হাসপাতালের চিকিৎসক চেনেন না এটা জেনে আমি লজ্জিত। মন্ত্রীর সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তার জন্য সমিতির চেয়ারম্যান হিসেবে আরও লজ্জিত।’’ রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে হাসপাতালে রোগী-পরিজনদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করার জন্য বার বার বলা হয়েছে বলেও জানাচ্ছেন রবিন। জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মুও বলেন, ‘‘একজন মন্ত্রীর সঙ্গে যদি এমন দুর্ব্যবহার করা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ হাসপাতালে কেমন ব্যবহার পান সেটা বোঝাই যাচ্ছে।’’ হাসপাতালের শল্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রাজনারায়ণ সরকারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

অন্য বিষয়গুলি:

Jhargram Birbaha Hansda TMC MLA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy