এই সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকেই মেলে বিশ্বজিতের দেহ। নিজস্ব চিত্র
কয়েক দিন ধরেই স্কুলে মেরামতির কাজ চলছে। শনিবার স্কুলের সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে দুর্গন্ধ বেরোতে দেখে মিস্ত্রিরা সহশিক্ষককে জানিয়েছিলেন। সহশিক্ষক সোমবার প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি জানান। খবর দেওয়া হয় থানায়। পুলিশ এসে সেই সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার করে এক ছাত্রের পচাগলা দেহ।
সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি-২ ব্লকের ওয়াশিলচকের অমৃত ভারতী বিদ্যাভবনের এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত বিশ্বজিৎ পাত্র (১৭) ওয়াশিলচকের বাসিন্দা ও দক্ষিণ খেজুরি বাণীমঞ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল। কী ভাবে তার মৃত্যু হল, কী ভাবেই বা দেহ অন্য স্কুলের সেপটিক ট্যাঙ্কে এল, সেই প্রশ্নের জবাব মেলেনি। তালপাটি উপকূল থানার পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। এ দিন পুলিশ দেহ উদ্ধারে গেলে পুলিশ কুকুর এলে তদন্তের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামানো হয় কমব্যাট ফোর্স। শেষে পুলিশের আশ্বাসে বিক্ষোভে দাঁড়ি পড়ে।
পুলিশ ও ছাত্রের পরিবার সূত্রে খবর, গত ৮ জুলাই নিখোঁজ হয়েছিল বিশ্বজিৎ। সে দিন সাইকেল নিয়ে টিউশনের জন্য বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি সে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে ছেলেকে না পেয়ে বিশ্বজিতের বাবা শঙ্কর পাত্র তালপাটি উপকূল থানায় ১০ জুলাই অভিযোগ দায়ের করেন। ইতিমধ্যে অমৃত ভারতী বিদ্যাভবনের গেটের সামনে থেকে একটি সাইকেল পাওয়া যায়। পরিবারের দাবি, খবর পেয়ে গিয়ে সাইকেলটি বিশ্বজিতের পরে শনাক্ত করেন তাঁরা।
মৃত ছাত্রের মা লক্ষ্মীবালা বলেন, “আমার স্বামী কাজের জন্য গ্রামের দু’জনের থেকে ৮ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন। তার মধ্যে দু’লক্ষ টাকা নগদ এবং বাকি ২ লক্ষ টাকার জমি ইতিমধ্যে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি চার লক্ষ টাকা ফেরতের দাবিতে ওই দুই জন হুমকি দিচ্ছিল। ছেলেকেও তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিল।’’ তাঁর সন্দেহ, ছেলেকে খুন করা হয়েছে। আর সেই কাজে ওই দু’জন জড়িত। তাদের নামও তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন।
অমৃত ভারতী বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষক বাণেশ্বর দাস বলেন, ‘‘মিস্ত্রিরা এক সহ শিক্ষককে শনিবার জানান সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। খবর পেয়ে আমি এ দিন স্কুলে যাই এবং পুলিশকে জানাই। পুলিশ এসে ওই ছাত্রের দেহ উদ্ধার করে।’’
স্কুলের চারদিকে সীমানা প্রাচীর রয়েছে। তা হলে বিদ্যালয়ের সেপটিক ট্যাঙ্কে বিশ্বজিতের দেহ এল কী করে? উত্তর খুঁজছে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, বিশ্বজিৎকে বাইরে খুন করে পরে সেপটিক ট্যাঙ্কে দেহ ফেলা হয়েছে। কাঁথির মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সৈয়দ মহম্মদ মামদোদুল হোসেন বলেন, “ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে অনেক প্রশ্নের জবাব মিলবে।’’
ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অনুপ চক্রবর্তীর দাবি, “বিশ্বজিতের বাবা শঙ্কর পাত্র বিজেপির সক্রিয় কর্মী। এর পেছনে তৃণমূলের কোনও চক্রান্ত রয়েছে কিনা পুলিশ খতিয়ে দেখুক।’’ জেলা তৃণমূলের অন্যতম সম্পাদক কণিষ্ক পন্ডা পাল্টা বলেন, “ওই ছাত্রের মৃত্যু বেদনাদায়ক। এটা খুন কি না পুলিশ তদন্ত করুক। তবে এতে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে ফায়দা তোলার নোংরা রাজনীতি করছে বিজেপি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy