শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
হাতছাড়া হল জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘরের পঞ্চায়েত সমিতি। সভাপতির বদলে শুধু সহ-সভাপতি পদে দলীয় প্রার্থীকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হল শাসকদলকে। তবে পড়শি খেজুরিতে গেরুয়া শিবিরে ভাঙন ধরিয়ে সেখানের একটি পঞ্চায়েত সমিতিতে দাপট দেখিয়েছে তারা।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলায় নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির ভাগ্য নির্ধারণ ছিল সোমবার। ত্রিশঙ্কু ওই সমিতির বোর্ড গঠন ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়ছিল। ওই পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৫টি আসন তৃণমূল এবং ১৫টি আসন বিজেপির দখলে ছিল। তবে বোর্ড গঠনে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই ইঙ্গিত মিলেছিল খোদ শুভেন্দুর মন্তব্যে। দিনকয়েক আগে তিনি মন্তব্য করেছিলেন ‘মালের দায়িত্ব আরোহীর’। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, এই মন্তব্যের মাধ্যমে নন্দীগ্রামের বিধায়ক তৃণমূলের জয়ী সদস্যদের সামলে রাখা সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন।
সোমবার নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনের সভায় সভাপতি জন্য তৃণমূলের তরফে শেখ শাহাবুদ্দিন এবং বিজেপি তরফে শ্যামল কুমার সাহুর নাম প্রস্তাব করা হয়। ব্যালট ভোটে দেখা যায় শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই ১৫টি করে ভোট পেয়েছে। এর ফলে ব্লক প্রশাসনের তরফে লটারির আয়োজন করা হয়। সভাপতি দৌড়ে যে দুজন ছিলেন, তাঁদের নাম কাগজে লিখে একটা বাক্সে ফেলা হয়। ব্লক অফিসে আগত এক শিশুকে দিয়ে একটি চিরকুট তোলানো হয়। তাতে দেখা যায়, সভাপতি হিসাবে বিজেপির শ্যামল কুমার সাহুর নাম এসেছে। আর সহ-সভাপতি লটারিতে নাম ওঠে তৃণমূলের জয়ন্তী মণ্ডলের।
বিকালে পঞ্চায়েত সমিতির অফিসে যান নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। সদ্য নির্বাচিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং সহ-সভাপতিকে পুষ্পস্তবক দিয়ে সংবর্ধনা জানান। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলেন, ‘‘আগামী দিনে উন্নয়নের স্বার্থে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাব।’’ তৃণমূলের নন্দীগ্রাম নেতা তথা জেলা পরিষদের সদস্য শেখ সামসুল ইসলাম বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে বিধায়ক যে ফাঁকা আওয়াজ দেন। ভাগ্যের জোরে আমরা সভাপতিপদ পাইনি।’’
অন্যদিকে, বিজেপির জয়ী সদস্যদের দলে এনে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় থাকা গেরুয়া শিবিরের একটি পঞ্চায়েত সমিতিতে নিজেদের সভাপতি নির্বাচন করল তৃণমূল। খেজুরির দু’টি ব্লকে ভাল ফল করেছে বিজেপি। পাঁচটির মধ্যে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত তারা আগেই দখল করেছে। খেজুরি-২ পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৫টি আসনের মধ্যে ন’টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে গেরুয়া শিবিরের বোর্ড গঠন করার কথা। তবে রবিবার বিকালে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে চলে যান পঞ্চায়েত সমিতির দুই জয়ী সদস্য উদয়শঙ্কর মাইতি এবং পিপাসা দাস।তারপরেই রাজনৈতিক সমীকরণটা বদলাতে শুরু করে সেখানে। রাতারাতি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের স্বীকৃতি পেয়ে যায় শাসকদল। এদিন জেলা প্রশাসনের নির্দেশিকা মেনে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং সহ-সভাপতি নির্বাচনের জন্য বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে ৮-৭ ভোটের ব্যবধানে সভাপতি হন উদয় আর সহ-সভাপতি হন তনুশ্রী।
বিজেপি সূত্রের খবর, খেজুরি-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদে একাধিক দাবিদার ছিলেন। একদিকে ছিলেন একাধিকবার মণ্ডল সভাপতির দায়িত্ব সামলানো উদয়শঙ্কর এবং অন্যদিকে ছিলেন জেলা কমিটির সদস্য পবিত্র দাস। তবে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার আশঙ্কায় শেষ মুহূর্তে দলবদল করেছিলেন উদয়। বিজেপির অন্দরে আদি-নব্য দ্বন্দ্বের ঘটনা হামেশাই সামনে আসে। এখন আদি বিজেপি নেতা উদয়ের দলবদল ওই দ্বন্দ্বরই বহিঃপ্রকাশ বলে অনুমান রাজনৈতিক মহলের। যদিও বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার দোলুই বলেন, ‘‘অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের দলের দুজন জয়ী সদস্যকে তৃণমূলে যোগ করানো হয়েছে।’’
জেলার আরেক ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েত সমিতি এগরা-২ নিয়েও উত্তেজনা ছিল। এখানে লটারিতে সভাপতি পদে তৃণমূলের শাহানাজ বেগমের নামে আসে। সহ-সভাপতি হিসেবে বিজেপির সীতাংশু জানা জয়ী হন। তবে লটারিতে চিরকুট তুলেন খোদ রিটার্ন আধিকারিক বিডিও কৌশিক রায়। এ নিয়ে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক বিজেপির জেলা সম্পাদক তন্ময় হাজার বলেন, ‘‘লটারিতে বিডিও নিজেই চিরকুট তোলা নিয়ে আপত্তি রয়েছে। এক নিরপেক্ষ ব্যক্তির দাবি জানালেও বিডিও তাঅগ্রাহ্য করেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy