—প্রতীকী চিত্র।
শিক্ষাবর্ষ শেষ হতে চলল। এখনও স্কুল পড়ুয়ারা পোশাক না পেলেও পোশাক তৈরির দায়িত্ব বণ্টন নিয়েই বিতর্ক দেখা দিল। ফলে শিক্ষাবর্ষ শেষ হওয়ার আগেই স্কুলপড়ুয়ারা পোশাক পাবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি নিয়ম বহিভূর্ত ভাবে পোশাক তৈরির বরাত দেওয়ায় বড় রকমের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা।
নিয়ম মতো সর্বশিক্ষা মিশন জেলাশাসকের মাধ্যমে স্কুলগুলিতে নিদের্শিকা পাঠায়। স্কুলগুলি সেই মতো স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির জন্য টেন্ডার ডাকে এবং তাদের পোশাক তৈরির অভিজ্ঞতা আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হয়। সেই মতো অভিজ্ঞ স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে বরাত দেওয়া হয়।
কিন্তু এই নিয়ম না মেনে স্কুলগুলির বদলে জেলা পরিষদ পড়ুয়াদের পোশাক তৈরির জন্য সরাসরি নিজেরাই স্বনির্ভর গোষ্ঠী নির্বাচন করে। আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, এক্তিয়ার বহির্ভূতভাবে স্কুলপড়ুয়াদের পোশাক তৈরির বরাত কী ভাবে জেলা পরিষদ দিতে পারে। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ জানিয়েছে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং শিক্ষক মহল। গোটা বিষয়ে তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের ভূমিকায় আর্থিক দুর্নীতির গন্ধ পাচ্ছেন বিরোধীরা।
স্কুল পড়ুয়া
৪,২৫০টি ৩,৯৫,৬২৮ জন
• সমস্যা
জেলার সাড়ে চার হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অধিকাংশই এই কাজ পায়নি। শিক্ষাবর্ষ শেষ হতে চললেও এখনও পড়ুয়ারা পোশাক পায়নি।
• কারা উপকৃত হবে
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ৪,২৫০ টি স্কুলের ৩৯৫৬২৮ জন পড়ুয়া। খরচ করা হচ্ছে ২৩,৭৩,৭৬,৮০৬ টাকা
প্রশাসন সূত্রে খবর, গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্য সর্বশিক্ষা মিশন জেলার ৪ হাজার ২৫০টি স্কুলে পড়ুয়াদের পোশাক দেওয়ার জন্য ২৩ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। জেলার প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্কুলগুলি যাতে এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের কাছ থেকে পোশাক কিনতে পারে তার জন্য জেলাশাসক সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে নির্দেশিকা পাঠায়। সেই মর্মে জেলার ২৫ টি ব্লক এবং ৫টি পুরসভা এলাকার স্কুলে কত পোশাক তৈরি হবে এবং কত টাকা খরচ করা হবে সে ব্যাপারে স্থানীয় স্কুল পরিদর্শকের অফিসে নির্দেশিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তা না মেনে ব্লক পিছু একজন করে স্বনির্ভর গোষ্ঠী চূড়ান্ত করে ফেলে জেলা পরিষদ। তারাই প্রতিটি ব্লকে স্কুলের পোশাক তৈরি করবে এক মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেয় জেলা পরিষদ। তারপর থেকেই বিতর্কের শুরু। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে যে ২৫টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশের এই কাজের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই বলে অভিযোগ অন্যান্য স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং শিক্ষকদের।
মহিষাদল রাজ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার তুঙ্গ বলেন, ‘‘মহিষাদল ব্লকে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠী পোশাক তৈরির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়। তা ছাড়া সর্বশিক্ষা মিশন দফরের নির্দেশিকা মেনে স্কুলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাছ থেকে টেন্ডার সংগ্রহ করেছি। ৪ জন শিক্ষকের নেতৃত্বে ওই সব স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজের মান যাচাই করা হয়েছে। তারপর স্কুলের পক্ষ থেকে উপযুক্ত সংস্থার কাছে পোশাক তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’ জেলা পরিষদের নির্দেশিকা না মেনে স্বতন্ত্রভাবে স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে পোশাক তৈরির বরাত দেওয়ার এমন ঘটনা কয়েকটি স্কুলে ঘটলেও বেশিরভাগ স্কুল কর্তৃপক্ষ জেলা পরিষদকে এড়িয়ে স্বতন্ত্রভাবে পোশাক তৈরির বরাত দেওয়ার ‘সাহস’ পাননি।
গোটা বিষয়ে আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে বলে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। প্রাক্তন জেলা বিজেপি সভাপতি (তমলুক) প্রদীপ দাসের অভিযোগ, ‘‘সরকারি নিয়মে ৫ লক্ষ টাকার বেশি কাজে টেন্ডার ডাকতে হয়। তা ছাড়া যে সংস্থাকে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়, সেই কাজে তাদের অভিজ্ঞতা দেখা হয়। এ ক্ষেত্রে কিছু লোককে টাকা পাইয়ে দিতেই এ সব তথ্য যাচাই করা হয়নি।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির দাবি, ‘‘আসলে কাটমানি ছাড়া তৃণমূল যে কোনও কাজ করতে পারে না, জেলা পরিষদ চালাতে গিয়েও তা তারা প্রমাণ করে দেখাল।’’
বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা সাংসদ শিশির অধিকারীর দাবি, ‘‘স্কুলপড়ুয়াদের পোশাকের মান সঠিক রাখতে জেলা পরিষদ থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই সব স্কুলের পড়ুয়ারা পোশাক পেয়ে যাবে।’’ দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তাঁর সাফাই, ‘‘দুর্নীতি হয়ে থাকলে তদন্ত করে দেখবে প্রশাসন।’’ কোনও দুর্নীতি হয়নি বলে দাবি করেছেন জেলাসভাধিপতি দেবব্রত দাসও। তিনি বলেন, ‘‘নিয়মে স্বচ্ছতা রেখে এবং পড়ুয়ারা যাতে ভাল মানের পোশাক পায় তার জন্য এমন সিদ্ধান্ত। এটা নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করছে বিরোধীরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy