Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Bargabhima

দেবী বর্গভীমাকে নিয়ে নানা কাহিনি, রোজ পুজোয় লাগে শোল মাছ

'তন্ত্রচূড়ামণি' অনুসারে দেবী হলেন কপালিনী। আবার 'শিবচরিত' অনুসারে দেবী হলেন ভীমরূপা। 'পীঠমালাতন্ত্র' অনুসারে কপালিনী ভীমরূপা।

দেবী বর্গভীমা। নিজস্ব চিত্র।

দেবী বর্গভীমা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পূর্ব মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২০ ১৬:০০
Share: Save:

ভক্তি আর ভয়ের মিশেলে অনেক কিংবদন্তি তমলুকের দেবী বর্গভীম মন্দির নিয়ে। তমলুকের দেবী বর্গভীমাকে নিয়ে লোকশ্রুতি বা গবেষণার শেষ নেই।

'তন্ত্রচূড়ামণি' অনুসারে দেবী হলেন কপালিনী। আবার 'শিবচরিত' অনুসারে দেবী হলেন ভীমরূপা। 'পীঠমালাতন্ত্র' অনুসারে কপালিনী ভীমরূপা।

মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, দেবী বর্গভীমা পুজোয় আজও প্রতিদিন শোল মাছ দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, দেবী বর্গভীমা নামের সঙ্গে ধীবর সম্প্রদায়ের সম্পর্ক রয়েছে বলেও মনে করা হয়। অনেকে বলেন, ধীবর সম্প্রদায়ের আরাধ্যা 'ভীমা' দেবীই 'বর্গভীমা'।

মনে করা হয়, বর্গভীমা মন্দিরের প্রতিষ্ঠাকাল একাদশ বা দ্বাদশ শতক। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে দেবী বর্গভীমা তমলুক তথা পূর্ব মেদিনীপুর ও বাংলার মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি তীর্থস্থান। লোকশ্রুতি আছে, দেবীর মন্দিরের পাশে থাকা পুষ্করিণীতে ডুব দিয়ে পাওয়া যে কোনও বস্তু লাল সুতো দিয়ে মন্দিরের পার্শ্ববর্তী গাছে বাঁধলে মনস্কামনা পূর্ণ হয়।

দেবী বর্গভীমা চতুর্ভুজা। নীচে রয়েছে শায়িত শিবের মূর্তি। মায়ের ডানহাতের উপরটিতে রয়েছে খড়্গ আর নীচেরটিতে ত্রিশূল। উপরের বাম হাতে খর্পর আর নীচের হাতে মুণ্ড। বর্গভীমার দু'পাশে শোভা পাচ্ছ দশভূজা মহিষমর্দিনী এবং দ্বিভূজা মহিষমর্দিনী মূর্তি।

লোককথা অনুযায়ী, দেবী বর্গভীমা পূজিত হয়ে আসছেন সেই মহাভারতের সময় থেকে। এখানে তিনি কালীরূপে পূজিতা হন। তাঁকে আবার কখনও দুর্গা বা জগদ্ধাত্রী রূপেও পূজা করা হয়। প্রথা অনুযায়ী, তমলুক শহরে আজও কোনও মণ্ডপে দুর্গাপুজার ঘটস্থাপনের আগে দেবী বর্গভীমা মন্দিরে পুজো দেওয়া হয়।

সাধারণ ভাবে ভক্তরা দেবীর পূর্ণাবয়ব মূর্তির দর্শন লাভ করতে পারেন না। কারণ, সারাদিনই দেবী অনেক অলংকার এবং শাড়ি পরিহিত থাকেন। তবে রাত্রীকালীন ভোগ প্রদর্শনের পর দেবীর বস্ত্র এবং গহনাদি খুলে ফেলা হয়। ভোরবেলা পুজার আগে পুনরায় সেগুলি দেবীকে পরিয়ে দেওয়া হয়।

দেবী বর্গভীমাকে নিয়ে রয়েছে নানা কিংবদন্তি। জনশ্রুতি আছে, দক্ষযজ্ঞের পর দেবাদিদেব যখন পার্বতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে প্রলয় নাচ শুরু করেন তখন তাঁকে নিরস্ত করতে নারায়ণ তাঁর সুদর্শনচক্র দিয়ে দেবীর দেহ খণ্ডবিখণ্ড করেছিলেন। যা ৫১টি টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। সেই সময় তমলুক শহরে দেবীর বাম গুলফ্ পড়েছিল।

মঙ্গলকাব্য অনুসারে, এক সওদাগর সিংহল যাওয়ার পথে তমলুক বন্দরে নোঙর করেন। সেই সময় এক ব্যক্তিকে স্বর্ণকলস নিয়ে যেতে দেখেন তিনি। সওদাগর ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করতে তিনি জানান, এখানেই জঙ্গলের ভেতর একটি কুয়ো রয়েছে যার জলে পিতলের কলস ডোবালেই তা সোনার হয়ে যায়। এই কথা শুনে তিনি অনেক পিতলের কলসি কিনে তা ওই জলে ডুবিয়ে সোনা বানিয়ে তা বিক্রি করে বিপুল লাভবান হয়েছিলেন সওদাগর। তাই ফেরার পথে তিনি কুয়োর পাশেই বর্গভীমা মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।

আবার অন্য এক কাহিনিতে রয়েছে, তাম্রলিপ্তে ময়ূর বংশের দ্বিতীয় রাজা তাম্রধ্বজকে এক মেছুনি জঙ্গল পেরিয়ে মাছ দিতে আসত। সেই সময় মাছগুলোকে সতেজ রাখতে একটি গর্ত থেকে জল নিয়ে ছিটিয়েছিল সে। এর পরেই মাছগুলি আবার জীবন্ত হয়ে যায়। খবর পেয়ে রাজা এসে ওই জায়গায় একটি দেবীমূর্তি দেখতে পান। এবং তিনি মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।

কেউ কেউ আবার বলেন, তাম্রলিপ্তের ময়ূরবংশের রাজা চতুর্থ গরূড়ধ্বজ প্রতিদিন তাজা শোলমাছ খেতেন। কিন্তু ধীবর প্রতিদিন তাজা মাছ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পর ধীবর স্বপ্নাদেশ পান যে, অনেক শোল ধরে সেগুলিকে শুকনো করে রাখতে হবে। পরে জঙ্গলের একটি কুয়োর জল ছিটিয়ে দিলেই সেগুলি আবার জীবন্ত হয়ে উঠবে। এভাবে রাজাকে মাছ সরবরাহ করতে থাকলে রাজার সন্দেহ হয় এবং তিনি ধীবরকে তাজা মাছের রহস্য জানতে চাইলে সেই কুয়োর কথা সবাই জেনে যায়। রাজা এসে দেখেন, ওই কুয়োর উপর ভেসে রয়েছে এক দেবীমূর্তি। তখনই তিনি দেবী বর্গভীমার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে জানা যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Bargabhima Tamluk East Medinipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy