সুস্থ হওয়ার পর মা আশাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন সঙ্গীতা প্রামানিক। নিজস্ব চিত্র।
একেই বলে ‘রুল অফ হানড্রেড’! বিষধর সাপের ছোবলে অসুস্থ হয়েও প্রাণে বাঁচলেন ঝাড়গ্রাম শহরের পঞ্চাশোর্ধ্ব আশা প্রামানিক। ৩৬ ঘন্টার মধ্যে সুস্থ হয়ে সোমবার সকালে মেয়ের স্কুটিতে চেপে বাড়ি ফিরলেন তিনি। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্তারা জানাচ্ছেন, আশার মেয়ে সঙ্গীতা যে প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে সেই সচেতনতাটাই জরুরি।
আশার বাড়ি ঝাড়গ্রাম শহরের উত্তর বামদায়। মাস খানেক আগে স্বামী প্রয়াত হয়েছেন। আশার মেয়ে সঙ্গীতা জামবনি ব্লকে সদ্য সরকারি নার্সের চাকরি পেয়েছেন। শনিবার রাতে বাড়ির আলনা গোছানোর সময় সেখানে জড়িয়ে থাকা একটি সাপ ফণী তুলে আশার ডান হাতে ছোবল মারে। আশার ছেলে তখন কাজের সূত্রে বাইরে ছিলেন। বাড়িতে ছিলেন আশার মেয়ে, বৌমা আর দু’বছরের নাতনি। সময় নষ্ট করেননি সঙ্গীতা।
তবে রাতে সর্পদষ্ট মাকে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়াটা সহজ ছিল না। ততক্ষণে আশার ঝিমুনি শুরু হয়েছে। ওড়না দিয়ে মাকে তাই নিজের কোমরের সঙ্গে বেঁধে স্কুটি চালিয়ে হাসপাতালে পৌঁছন সঙ্গীতা। তারপর দাদাকে ফোন করেন। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন আশার ডান হাতের বুড়ো আঙুলে সর্প দংশনের দু’টি স্পষ্ট দাগ রয়েছে। বোঝা যায় বিষধর সাপের ছোবল খেয়েছেন আশা। অ্যান্টিভেনাম সিরাম ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় তাঁকে। তারপর পর্ববেক্ষণে রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা হয়। রবিবার চিকিৎসকেরা জানান আশা বিপন্মুক্ত। সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ মাকে স্কুটিতে চাপিয়েই বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন সঙ্গীতা।
সঙ্গীতার কথায়, ‘‘মায়ের চিৎকার শুনে ছুটে গিয়ে দেখি চিতি সাপ আলনা থেকে দ্রুত নেমে যাচ্ছে। সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। ভয়ের কিছু নেই বলে ভরসা দিই মাকে।'’ আশার কথায়, ‘‘আলনায় যে সাপ জড়িয়ে রয়েছে ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি।’’ আশার ছেলে অর্ক বলছেন, ‘‘বাবার মৃত্যুর পর মায়ের এমন হওয়ায় ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। মা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরায় দুশ্চিন্তা কেটেছে।’’ সঙ্গীতা জানালেন, একতলা বাড়ির প্রতিটি ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজেও সাপটির আর হদিশ মেলেনি। তাই আশেপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে কার্বোলিক অ্যাসিড ও ব্লিচিং ছড়ানো হয়েছে।
ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সুস্মিতা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সর্পদষ্ট ওই প্রৌঢ়াকে অতি দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসার ফলে উপযুক্ত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তিনি সুস্থও হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।’’ অধ্যক্ষা জানাচ্ছেন, ওঝা বা হাতুড়ের কাছে না গিয়ে আক্রান্তকে যত দ্রুত সম্ভব নিকটবর্তী সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাণে বাঁচানো সম্ভব।
সর্প বিশেষজ্ঞ তথা কেশপুর কলেজের প্রাণিবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান সুমন প্রতিহারেরও বক্তব্য, ‘‘সাপের ছোবল খাওয়ার একশো মিনিটের মধ্যে দষ্ট ব্যক্তিকে একশো এমএল অ্যান্টি ভেনাম দেওয়া হলে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা একশো শতাংশ। একেই ‘রুল অফ হানড্রেড’ বলে। এই ঘটনা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।"
সুমন জানাচ্ছেন, খাদ্যাভ্যাস ও আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে ভারতে সাপেদের স্বভাবচরিত্র ও বিষের গুণগত মান বদলেছে। মূলত, ঊষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় সাপেরা সক্রিয় থাকে। সাপেরা শীতঘুমে যায় না। এটি একেবারে ভ্রান্ত ধারণা। তাপমাত্রা শীতল হতে শুরু করলে সাপেরা ‘ব্রুমেট’ করে। এই সময় সাপের বিপাকীয় হার কমে যায়, খাদ্যগ্রহণ করে না। চলাফেরাও নিয়ন্ত্রিত থাকে। মূলত, গর্তের মধ্যে অথবা কোনও অন্ধকার কোণে সাপেরা আশ্রয় নেয়। এই সময় বিষধর সাপের বিষ তৈরির ক্ষমতা ও বিষের পরিমাণও কম থাকে। তবে ব্রুমেট অবস্থায় বিষধর সাপ ছোবল মারলে সময়মতো আক্রান্তের চিকিৎসা না হলে মৃত্যুও হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy