মালঞ্চের সেনচক এলাকায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও অভিনেত্রী কাঞ্চনা মৈত্র। খড়্গপুরের মাঠপাড়া এলাকায় অভিনেত্রী-সাংসদ মিমি চক্রবর্তী। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
রেলের ঠিকাদারি থেকে ছাঁট লোহার কারবার, মাফিয়ারাজে একটা সময় ত্রস্ত ছিল রেলশহর। রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছিল এই মাফিয়ারা।
রামবাবু, শ্রীনু নায়ডুর মতো মাফিয়ার শহর খড়্গপুর গত পুরসভা ও বিধানসভা নির্বাচনেও দুষ্কৃতী যোগের অভিযোগে তপ্ত হয়েছিল। পুরবোর্ড গঠনে তো সরাসরি দুষ্কৃতী দিয়ে বিরোধী ভাঙানোর অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেই ‘অন্ধকার-পর্বে’র শেষে শহর জুড়ে আলো জ্বালিয়েছেন তৃণমূল পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার। তিনিই এ বার বিধানসভা উপ-নির্বাচনের তৃণমূল প্রার্থী। কিন্তু মাফিয়ারাজের শহর কতটা ‘অন্ধকারমুক্ত’ ভোটে তার হিসেবও হবে। ইতিমধ্যে মাফিয়া যোগের অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধীরা। তৃণমূলের পাল্টা স্লোগান, ‘হিংসা দ্বেষের অন্ধকারে, দিদির প্রদীপ ঘরে ঘরে!’
তৃণমূল বলছে, পুরসভ যে ভাবে শহর জুড়ে পথবাতি বসিয়েছে তাতেই বিদায় নিয়েছে মাফিয়া রাজে ‘অন্ধকার’। খড্গপুরবাসীও মানছেন, গত সাড়ে চার বছরে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড রেল-সহ গোটা শহর পথবাতিতে মুড়ে দিয়েছে। বিভিন্ন মোড়ে পুরসভা সিসিটিভি ক্যামেরাও বসিয়েছে। তৃণমূল প্রার্থীর ইস্তাহারেও অপরাধ কমাতে পথবাতির পরিকাঠামো উন্নয়ম ও সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর অঙ্গীকার করা হয়েছে।
কিন্তু সত্যি কি তাতেই ঘুচবে দুষ্কৃতী-রাজের আঁধার— প্রশ্ন ঘুরছে শহরবাসীর মনে। ২০১৫ সালে পুরবোর্ড গঠনে বিরোধী কাউন্সিলর ভাঙাতে তৃণমূলের বিরুদ্ধেই মাফিয়া-পুলিশ যোগের অভিযোগ উঠেছিল। দলের পাঁচ কাউন্সিলর ভাঙানোর ‘বদলা’ নিতে ২০১৬ সালে বিধানসভায় প্রার্থী হয়েছিলেন খোদ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সে বার নিউ সেটেলমেন্টে বিজেপির পথসভায় মাফিয়া হামলার অভিযোগ তুলে রাতভর থানায় অবস্থানও করেছিলেন দিলীপ। পরে দুষ্কৃতী দাপট ফের বাড়ে। ২০১৭ সালে নিউ সেটলমেন্টে তৃণমূল কার্যালয়ে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান রেলমাফিয়া শ্রীনুকে। সেই ঘটনায় একদা খড়্গপুরের ‘ত্রাস’ আরেক রেলমাফিয়া বাসব রামবাবু জেলবন্দি। গত লোকসভায় মাফিয়া যোগের অভিযোগ সেভাবে শোনা যায়নি। শহরকে তিনিই শান্তি দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন দিলীপ।
অবশ্য শহরে গুলি শব্দ থামেনি। গত সেপ্টেম্বরেই পনেরো দিনের ব্যবধানে তিন বার গুলি চলার অভিযোগ উঠেছে। উপ-নির্বাচনের আগে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মাফিয়াদের মদত দেওয়ার অভিযোগও তুলেছেন দিলীপ। দলীয় প্রার্থী প্রেমচাঁদ ঝার সমর্থনে প্রচারে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলছেন, “তৃণমূল এখানে গুন্ডারাজের জনক। ওদের প্রার্থী মাফিয়া নিয়ে ঘুরছেন। এখানে পুলিশ এলেও ওদের জন্য মাফিয়া হয়ে যায়।” একই অভিযোগ বাম-কংগ্রেস জোটের। কংগ্রেস প্রার্থী চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের হয়ে প্রচারে এসে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেছেন, “এই শহরে একসময়ে আমাদের পুরপ্রধান ছিলেন। সেই পুরপ্রধান-সহ ৫জন কাউন্সিলরকে জোর করে বন্দুক দেখিয়ে তৃণমূলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।” এ সবের পিছনে তৎকালীন জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের ভূমিকা মনে করিয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “এখানকার পুরসভার দখলদারির যিনি নেত্রী ছিলেন সেই পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ
এখন বিজেপিতে। তাই তৃণমূলকে ঠেকাতে বিজেপি কখনও বিকল্প হতে পারে না।”
তৃণমূলও বিজেপি প্রার্থীকে ‘দুষ্কৃতী’ বলে খোঁচা দিচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে জমি হস্তান্তর সংক্রান্ত জামিন অযোগ্য প্রতারণা মামলায় জড়িয়েছেন বিজেপি প্রার্থী প্রেমচাঁদ। সে প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলছেন, “আমাদের সঙ্গে কোনও মাফিয়া নেই। বরং বিজেপি মাফিয়ারাজ কায়েম করতে প্রেমচাঁদ ঝা মতো একজন মাফিয়াকে প্রার্থী করেছে। আর সেই মাফিয়াকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন দিলীপ ঘোষ।”
এই চাপানউতোরে সঠিক পথ হাতড়াচ্ছেন শহরবাসী। ইন্দার বাসিন্দা খড়্গপুর কলেজের শিক্ষিকা সোমালি নন্দী বলছেন, “সবাই একে-অপরকে মাফিয়া বলছে। তাই কাকে ভোট দিতে চলেছি সেটাই ভাবছি। প্রার্থীর সঙ্গে মাফিয়া-যোগ থাকলে শহরের অপরাধ প্রবণতা কাটবে কীভাবে!”
ভোট শেষে কার ঘরে আলো জ্বলবে, তার জবাব মিলবে ২৮ নভেম্বর। রেলশহরের একটাই দাবি, মাফিয়া-রাজের অন্ধকার ঘুচে সত্যি আলোকিত হোক খড়্গপুর। (শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy