আদিবাসী নেগাচারী কুড়মি সমাজের রাজ্য সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর অনুপ মাহাতো (ডান দিকে, গলায় মালা) অভিনন্দন জানাচ্ছেন নতুন রাজ্য সভাপতি ভক্তিপদ মাহাতোকে। রবিবার ঝাড়গ্রাম শহরের এক অতিথিশালায়।
লোকসভা ভোটে সামাজিক সংগঠন সমর্থিত নির্দল প্রার্থীর হারের দায় নিয়ে আদিবাসী নেগাচারী কুড়মি সমাজের রাজ্য সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলেন অনুপ মাহাতো। তাঁর এই পদত্যাগ নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। কারণ রবিবার পদত্যাগ করার পরই অনুপ বলছেন, ‘‘২১ জুলাই নতুন ভাবে পথচলা শুরু করব।’’ তাহলে কি তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন এই পোড়খাওয়া কুড়মি নেতা! অনুপ বলছেন, ‘‘এখনই কিছু বলার সময় আসেনি। ২১ জুলাই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে। তবে এটুকু বলছি আন্দোলনে থাকব।’’
এর আগে অনুপের বিরুদ্ধে তৃণমূল ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তুলেছিল একাধিক কুড়মি সামাজিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ঘাঘর ঘেরা আন্দোলন মঞ্চ। চলতি বছরের গোড়ায় কুড়মিদের ঘাঘর ঘেরা আন্দোলন মঞ্চ থেকে সরে এসেছিল অনুপের সংগঠন আদিবাসী নেগাচারী কুড়মি সমাজ। শাসকদলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তুলে ঘাঘর ঘেরা আন্দোলন মঞ্চের ‘দৌওদিয়াকে খৌওসিয়া’ কমিটির সম্পাদক পদ থেকে অনুপকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর কুড়মিদের জাতিসত্তার দাবিতে একক ভাবে কলকাতায় রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে অনুপের নেতৃত্বে জমায়েত করেন নেগাচারীরা। লোকসভা ভোটের আগে অজিতপ্রসাদ মাহাতোর নেতৃত্বাধীন আদিবাসী কুড়মি সমাজের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জনজাতি সংরক্ষিত ঝাড়গ্রাম আসনে যৌথ ভাবে একক প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেও পিছিয়ে আসেন অনুপ। পরে নেগাচারীদের সমর্থনে নির্দল প্রার্থী হন জনজাতি বেদিয়া সম্প্রদায়ের বরুণ মাহাতো। ভোটের ফল বরুণের জামানত জব্দ হয়। আদিবাসী কুড়মি সমাজ সমর্থিত প্রার্থী সূর্য সিং বেসরারও জামানত জব্দ হয়। ভোটের ফলপ্রকাশের ৪০ দিন পর হঠাৎ কেন নেগাচারী কুড়মি সমাজের রাজ্য সভাপতি পদ থেকে অনুপ ইস্তফা দিলেন সেটা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। কারণ, রাজ্য সভাপতির পদ ছাড়লেও মহামোড়ল পদে অনুপ আছেন। অনুপের যুক্তি, মহামোড়ল পদটি সাংগঠনিক পদ নয়। মহামোড়ল হল সামাজিক পদ।
এ দিন ঝাড়গ্রাম শহরের এক অতিথিশালায় সংগঠনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে ডেকেছিলেন অনুপ। আদিবাসী নেগাচারী কুড়মি সমাজের রাজ্য সম্পাদক নন্দন মাহাতোর হাতে ইস্তফাপত্র তুলে দেন তিনি। ইস্তফাপত্রে এ বার লোকসভা ভোটে সংগঠনের মনোনীত নির্দল প্রার্থীর হারের দায় নিয়ে অনুপ জানিয়েছেন, গত তিন বছর কুড়মিদের দাবি নিয়ে বিভিন্ন আন্দোলনে জনসমর্থন পাওয়া গেলেও লোকসভা ভোটে কুড়মি মানুষজনের কাছে আশাতীত সাড়া পাওয়া যায়নি। এর নৈতিক দায় তাঁর উপর বর্তায় বলে স্বীকার করে নিয়েছেন অনুপ। এ দিন রাজ্য কমিটির সভায় অনুপের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। এরপরই সর্বসম্মতিক্রমে নতুন রাজ্য সভাপতি নির্বাচিত হন ভক্তিপদ মাহাতো। আনুষ্ঠানিকভাবে ভক্তিপদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেন অনুপ। ভক্তিপদ বলেন, ‘‘কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্তি ও জাতিসত্তার দাবির আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনুপবাবু অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন। সদ্য এ বিষয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছেন তিনি। হাইকোর্ট কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে ছ’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা পেশ করতে বলেছে। জাতিসত্তার দাবি নিয়ে অনুপবাবু যে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, এই বিষয়টি বিভিন্ন এলাকায় দেওয়াল লিখনের মাধ্যমে কুড়মিদের জানানো হবে।’’
হাই কোর্টে মামলা দায়ের করার জন্য এ দিন সংগঠনের তরফে অনুপকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তবে নেগাচারীদের এক সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতিসত্তার দাবি নিয়ে জোরদার আন্দোলনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ভাবনা নিয়ে এগোচ্ছেন অনুপ। এ জন্য অন্যান্য কুড়মি সংগঠনের সঙ্গে কথাবার্তাও চালাতে চান তিনি। অন্যদিকে, তৃণমূলের এক সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যসভার এক তৃণমূল সাংসদের সঙ্গে অনুপের যথেষ্ট সুসম্পর্ক। ফলে অনুপ তৃণমূলে যোগ দিলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। যদিও ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি প্রসূন ষড়ঙ্গী বলছেন, ‘‘এ বিষয়ে রাজ্যস্তরে কোনও সিদ্ধান্ত হয়ে থাকলে সেটা আমাদের এখনও জানা নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy