Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Pradhan Mantri Awas Yojana

মেলেনি বাড়ি, সুখীর সংসার গাছতলাতেই

পাঁশকুড়ার মাইশোরা এলাকার শ্যামসুন্দরপুর পাটনা গ্রামের উত্তর পাড়ায় বাস বছর পঁয়ষট্টির সন্ন্যাসী সিং এবং তাঁর স্ত্রী সুখীর। বংশ পরম্পরায় সরকারি খাস জায়গায় বাস সন্ন্যাসীদের।

এই ছাউনিতেই থাকেন সুখী সিং ও তাঁর পরিবার।

এই ছাউনিতেই থাকেন সুখী সিং ও তাঁর পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।

দিগন্ত মান্না
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৫৭
Share: Save:

মাটির বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে বাঁকুড়ায় শিশু এবং বৃদ্ধ মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। আবাস যোজনায় কেন তাঁরা পাকা বাড়ি পাননি সে নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক। সেই বাঁকুড়া জেলা থেকে শতাধিক কিলোমিটার দূরে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় এক আদিবাসী পরিবারের আবাস যোজনায় বাড়ি না পাওয়ায় সরব বিরোধী। পাকা বাড়ি তো দূর অস্ত, মাইশোরার ওই পরিবারের কাছে নেই মাটির বাড়ির বাড়িও। প্রায় ২০ বছর ধরে ওই পরিবারের দিন কাটছে গাছতলায় ত্রিপলের ছাউনির নীচে। বৃষ্টি এলে ফুট দু'য়েক উচ্চতার ওই ত্রিপলের ছাউনির মধ্যে ঢুকে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। বাকি সময় ঠাঁই গাছ তলাতেই। অসুস্থ স্বামী এবং এক ছেলেকে নিয়ে দু’দশক ধরে এভাবেই সংসার করছেন সুখী সিং।

পাঁশকুড়ার মাইশোরা এলাকার শ্যামসুন্দরপুর পাটনা গ্রামের উত্তর পাড়ায় বাস বছর পঁয়ষট্টির সন্ন্যাসী সিং এবং তাঁর স্ত্রী সুখীর। বংশ পরম্পরায় সরকারি খাস জায়গায় বাস সন্ন্যাসীদের। সন্ন্যাসীর নামে ওই জায়গার সরকারি পাট্টাও রয়েছে বলে দাবি। বাম আমলে একটি সংস্থা সন্ন্যাসীদের সিমেন্টের খুঁটি এবং অ্যাসবেস্টরের ছাউনি দেওয়া একটি বাড়ি তৈরি করে দিয়েছিল। বছর কুড়ি আগে এক ঝড়ে সেই বাড়িটি পড়ে যায়। টাকার অভাবে সেই থেকে আর বাড়ি তৈরি করতে পারেননি সন্ন্যাসী-সুখীরা। তাঁদের দাবি, বাড়ি তৈরির জন্য সরকারি ভাবে তাঁরা আবেদন করেছিলেন প্রশাসনে। কিন্তু বাড়ি মেলেনি। সুখীর কথায়, ‘‘রেশনের চাল পাই। স্বামী মাসে এক হাজার টাকা বার্ধক্য ভাতা পান। ওতেই কোনওক্রমে বেঁচে আছি। এত বছরের স্থানীয় প্রশাসনের কেউই আমাদের দিকে ঘুরে তাকাননি।’’ সন্ন্যাসী বলেন, "আমি হাঁটা চলা করতে পারি না। যখন সুস্থ ছিলাম তখন পঞ্চায়েতে বাড়ির জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু পাইনি। বাধ্য হয়ে ছেলে বউকে নিয়ে গাছতলাতেই দিন কাটাচ্ছি।’’

সুখীর দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে বাবা-মায়ের কাছে থাকে না। ছোট ছেলে বাবা মায়ের সাথে থাকে। তার বয়স এখন আঠারো বছর। সে দিনমজুরি করে। বাড়ি তৈরির টাকা জোগাড়ের সামর্থ তাঁর নেই। কয়েক বছর আগে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী সন্ন্যাসী। বর্ষা আর শীত থেকে রক্ষা পেতে মা এবং ছেলে মিলে দু'টি ছোট ছোট ত্রিপলের ছাউনি তৈরি করেছেন। সেই ছাউনির মধ্যে ঢুকতে গেলে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হয়। বর্ষা ও শীত বাদে বছরের বাকি সময় পরিবারের তিনজন সদস্য দিন রাত গাছতলাতেই থাকেন।

২০১৩ থেকে টাকা ১০ বছর মাইশোরা গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে ছিল। এবার মাইশোরা গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি জিতেছে। সুখীদের বাড়ি তৈরির আবেদন প্রসঙ্গে সে সময়েরই পঞ্চায়েতের সদস্য রুমা পাত্র বলছেন, ‘‘সন্ন্যাসী সিংয়ের নাম আবাসের তালিকায় রয়েছে।কিন্তু উনি বন্ডের সময় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিতে পারেননি। তাই বাড়ি তৈরির টাকা পাননি।’’ যদিও সন্ন্যাসীর দাবি তিনি নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই বার্ধক্য ভাতার টাকা পান।বিজেপির পাঁশকুড়া পশ্চিম-৪ নম্বর মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক অরুণ কিশোর পাল বলেন, ‘‘তৃণমূলের বহু নেতা পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আবাসের টাকা পেয়েছেন। আবাস যোজনায় তৃণমূল এত পরিমাণ দুর্নীতি করেছে তার ফলে প্রকৃত উপভোক্তারা বঞ্চিত হয়েছে।’’ তৃণমূলের পাঁশকুড়া ব্লক সভাপতি সুজিত রায় বলেন,"কেন্দ্রীয় সরকার আবাসের টাকা দিলে তালিকায় নাম থাকা প্রত্যেকেই বাড়ি তৈরির টাকা পাবেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Panskura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy