দুপুরে সুনসান দিঘার সমুদ্রসৈকত। ছবি: প্রচেতা পাঁজা।
গল্পে পড়েছেন, সিনেমাতেও দেখেছেন। ইচ্ছা ছিল নিজের চোখে ঝড়ের সময় সমুদ্রের অশান্ত রূপ দেখবেন। বাবা-মা খানিক বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু শোনেননি। ঘূর্ণিঝড় ‘ডেনা’ ডেনা বাঁধার আগেই এক বন্ধুকে নিয়ে দিঘা চলে এসেছিলেন বছর ত্রিশের শঙ্কর মুখোপাধ্যায়। সোমবার ওঠেন ওল্ড দিঘার একটি হোটেলে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বুকিং ছিল। কিন্তু সব ‘অ্যাডভেঞ্চার’ জলে গেল। জেলা প্রশাসনের আবেদনে মনখারাপ নিয়ে হোটেল ছাড়লেন হুগলির ওই যুবক। বস্তুত, ‘ডেনা’র প্রভাবের আশঙ্কায় শুক্রবার পর্যন্ত দিঘার হোটেলগুলির বুকিং বাতিল করা হচ্ছে।
শঙ্করের মতোই শয়ে শয়ে লোক বুধবার দিঘা ছাড়ছেন মুখ ব্যাজার করে। বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড়ের সময় সমুদ্র দেখা তো দূরের কথা, বুধবার মেঘলা আকাশে টুপটাপ বৃষ্টি মেখে যাঁরা সমুদ্রস্নানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, সেই ইচ্ছাও অপূর্ণ থাকছে। জেলা প্রশাসন কোনও ঝুঁকি নিতেই রাজি নয়। বুধবার দুপুরে বাঁশের ব্যারিকেডে ঘিরে দেওয়া হয়েছে দিঘার বেলাভূমি। মন্দারমণি, শঙ্করপুরেও প্রশাসনিক নির্দেশ মেনে হোটেল খালি করে দিচ্ছেন মালিকেরা। শুক্রবার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আবার পর্যটকদের জন্য অবাধ করে দেওয়া হবে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ‘ডেনা’ ক্রমশ এগিয়ে আসছে। ল্যান্ডফল সম্ভবত ওড়িশায় হবে। তবে হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে চলেছে দিঘা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অংশে। বুধবার দুপুর থেকে জেলার আকাশের মুখভার। মঙ্গলবারই একটি নির্দেশিকা জারি করে প্রশাসন জানিয়েছিল পর্যটকদের হোটেল খালি করে দিতে হবে। তাঁদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এই উদ্যোগ। বুধবার আরও এক বার প্রশাসনের তরফে দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর, শঙ্করপুর থেকে পর্যটকদের বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক পর্যটক দিঘা, মন্দারমণি ছেড়ে বাড়ির পথ ধরেছেন। যদিও কিছু পর্যটক নাছোড়। রোমাঞ্চের আশায় দিঘা ছাড়তে নারাজ তাঁরা। তবে জেলা প্রশাসন বলেছে, তাঁদেরও ‘বুঝিয়ে-সুঝিয়ে’ বুধবারই বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। সে জন্য বিকেলে হোটেলগুলিতে অভিযান চালানো হবে।
দোকান-বাজার মোটামুটি খোলা রয়েছে দিঘায়। তবে দুপুরে বেলাভূমির দিকে যাওয়া রাস্তাগুলোকে বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের বিদায়ের পর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তবেই ওই ব্যারিকেড সরানো হবে বলে জানা যাচ্ছে। কেউ যাতে না-যান, সে জন্য কিছু কিছু জায়গা দড়ি দিয়ে ঘেরা হয়েছে। আপাতত পর্যটকদের কোনও ভাবেই সমুদ্রের আশপাশে ঘেঁষতে দেওয়া হবে না। বুধবার দিঘার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে এলাকায় এলাকায় ঘুরেছেন জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় ব্লক এবং মহকুমা আধিকারিকেরা। দিঘায় হাজির পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। গোটা এলাকা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হচ্ছে।
দিঘা এবং অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রে আসা পর্যটকদের সুষ্ঠু ভাবে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া তাদের মূল লক্ষ্য বলে জানাচ্ছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। জেলাশাসক বলেন, ‘‘হোটেল খালি করে পর্যটকদের বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ করা হয়েছে। সপ্তাহান্তে শনিবার থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হলে পুনরায় দিঘায় পর্যটকরা আসতে পারবেন।’’ তিনি জানান, কোনও অত্যুৎসাহী পর্যটক এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে যাতে সমুদ্রে না চলে যান, সে জন্যই ব্যারিকেড করা হচ্ছে। তা ছাড়া, সমুদ্র তীরবর্তী গ্রামগুলি থেকে বাসিন্দাদের আপাতত আশ্রয়ের ফেলা জন্য প্রায় ছ’শো স্কুলে থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। অন্য দিকে, দুপুর থেকেই জেলার তমলুক, মহিষাদল, হলদিয়া ইত্যাদি জায়গায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy