Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Duare Tran

দুয়ারে ত্রাণের আবেদনপত্র লিখতে টাকা, অভিযোগ

অভিযোগ ঘিরে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।

এভাবেই আবেদন লিখে দিয়ে টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।

এভাবেই আবেদন লিখে দিয়ে টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
খেজুরি শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২১ ০৬:৫৩
Share: Save:

সপ্তাহ খানেক আগে তাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে ইয়াস। কারও ঘর নেই। কেউ দুবেলা কী খাবেন সেই অন্ন সংস্থান নেই। ইয়াস দুর্গতদের ক্ষতিপূর দিতে ‘দুয়ারে ত্রাণ’ কর্মসূচি চালু করেছে রাজ্য সরকার। ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের আবেদন নেওয়াও শুরু হয়েছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণের সেই আবেদন করতে গিয়ে টাকা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল দুর্গতদের কাছ থেকে। আবেদনপত্র বিলি এবং ফর্ম পূরণের বিনিময়ে টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। খেজুরি-২ ব্লকের নিচকসবা গ্রাম-পঞ্চায়েত এলাকায় এমন অভিযোগ ঘিরে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।

পাচুড়িয়া এলাকার বাসিন্দা পেশায় মৎস্যজীবী ঝড়ুচরণ মালির একতলা পাকা বাড়ির দেওয়াল জুড়ে একাধিক জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ইয়াসের পর পাকাবাড়ির মেঝে বসে গিয়েছে অনেক খানি। রবিবার সেই ক্ষয়ক্ষতির ছবি নিয়ে আবেদন জানাতে গিয়েছিলেন পঞ্চায়েত অফিসে। ঝড়ুচরণের দাবি, ‘‘দুয়ারে ত্রাণ কর্মসূচির আবেদনপত্র পূরণ করার জন্য পঁচিশ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।’’ একই অভিযোগ ওই গ্রামেরই সুশান্ত পাত্রর। মাটির ঘরের পুরোটাই ধসে গিয়েছে জলোচ্ছ্বাসে। কাদা মাখানো মেঝেতে ভাঙাচোরা একটা খাট আর তার উপরে রাখা ত্রাণের মুড়ি-বিস্কুট। সে সব দেখিয়ে সুশান্ত বলেন, ‘‘ঘুরে দাঁড়ানোর মতো কিছুই নেই। রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে যেটুকু ত্রাণ পাই তাতে চার জনে এক বেলা খেয়ে কোনওমতে বাঁচছি। রবিবার পঞ্চায়েত অফিসে আবেদন করতে গিয়েছিলাম। দেখি আবেদনের ফর্ম পূরণ করে দেওয়ার জন্য কুড়ি টাকা করে নিচ্ছে। প্রতিবেশী একজনের কাছ থেকে ধার করে সেই টাকা দিয়ে আবেদন জানিয়েছি।’’

ইয়াসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে খেজুরির নিচকসবা অন্যতম। এখানে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। কয়েক হাজার মাছের ভেড়ি ভেসে গিয়েছে। রাধাপুর, পাচুড়িয়া, থানাবেড়িয়া, কাদিরাবাড়চর এলাকায় বহু মানুষ এখন আয়লা কেন্দ্রে রয়েছেন। অনেকের রাস্তার উপরেই তাঁবুতে দিন কাটছে। সেখানেই তাদের খাবার রান্না করে খাওয়াচ্ছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এমন অসহায় সব মানুষেরা গত কয়েকদিন ধরে পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে ‘দুয়ারে ত্রাণ’ কর্মসূচির জন্য লাইন দিয়ে আবেদন জমা দিচ্ছেন। সেখানে আবেদনপত্র লেখার নামে ইচ্ছেমত দুর্গতদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠায় শোরগোল পড়েছে।

জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাদা কাগজে ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন করতে বলা হয়েছে। যাঁরা সেই আবেদনটুকু করতে পারবেন না তাঁদের জন্য যেখানে দুয়ারে ত্রাণ কর্মসূচির শিবির হচ্ছে সেখানেই সহায়তা করার জন্য প্রশাসনের লোকরা রয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তরা সরাসরি তাদের কাছে যাবেন।’’

আবেদন লেখার জন্য টাকা নেওয়া এক ব্যক্তির অবশ্য যুক্তি, যারা আবেদন করতে আসছেন তারাই খুশি হয়ে চা খাওয়ার জন্য দশ টাকা করে দিয়ে যাচ্ছেন। ‘দুয়ারে ত্রাণ’ কর্মসূচির যাতে সঠিক রূপায়ণ হয় তার জন্য পঞ্চায়েত অফিসগুলিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অথচ তাদের সামনেই আবেদনকারীদের কাছ থেকে এভাবে টাকা নেওয়ায় প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। বিজেপি বিধায়ক শান্তনু প্রামাণিক বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। বহু ক্ষতিগ্রস্তকে আবেদন করতে গিয়ে টাকা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সব হারানো লোকগুলোর পাশে যখন দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে এসে দাঁড়াচ্ছেন, সে সময় বিপদগ্রস্ত মানুষদের পাশে থাকার পরিবর্তে স্থানীয়দের একাংশের এমন অমানবিক কাজ খুবই নিন্দনীয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ভূমিকাও হতাশজনক।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি কথা সেচ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুয়ারে ত্রাণ কর্মসূচি নিয়ে প্রশাসনকে কঠোর অবস্থান নিতে বলেছেন। তার পরেও এমন ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। ওই এলাকার প্রশাসনিক আধিকারিকদের বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলব।’’ খেজুরি-২ এর বিডিও ত্রিভুবন নাথ বলেন, ‘‘আবেদনের জন্য নির্দিষ্ট কোনও ছাপানো ফরম্যাট দেওয়া হয়নি। ব্লক থেকে বার বার মাইকে এ ব্যাপারে প্রচার করা হয়েছিল। তার পরেও কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

নিজস্ব চিত্র

অন্য বিষয়গুলি:

Duare Tran
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy