প্রতীকী ছবি।
মৎস্যজীবীদের আর্থিক সহায়তায় রাজ্যের সঙ্গে সহযোগিতায় প্রকল্প চালু করেছিল কেন্দ্র। সেই প্রকল্পেই কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠল। দুর্নীতির বিষয় জানাজানি হতে জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরাম।
মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, উপকূল অঞ্চলে মৎস্যজীবীদের সহায়তায় ‘বেহুন্দি’ এবং ‘ইন্টিগ্রেটেড মেরিন ফিশারিজ ডেভলেপমেন্ট’ প্রকল্প চালু করেছে কেন্দ্র। ‘বেহুন্দি’ প্রকল্পে মাছ ধরার জাল কেনার জন্য এবং ‘ইন্টিগ্রেটেড মেরিন ফিসারিজ ডেভলেপমেন্ট প্রজেক্ট’-এ নৌকা এবং তার ইঞ্জিন কেনার জন্য ঋণ দেওয়া হয়। কেন্দ্রের অধীনস্থ ‘ন্যাশন্যাল কো-অপারেটিভ ডেভলেপমেন্ট কর্পোরেশন’-এর মাধ্যমে প্রতিটি রাজ্যে পৌঁছে যায় ওই প্রকল্পের টাকা। এ রাজ্যে মৎস্য দফতরের অধীনস্থ ‘বেনফিশ’ ওই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছে। তাদের মারফৎ ওই টাকা পৌঁছে যেত স্থানীয় স্তরে প্রাথমিক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিগুলির হাতে। ওই সব সমবায় সমিতির মাধ্যমে মৎস্যজীবীরা প্রকল্পের সুযোগ পেতেন।
কী ভাবে এই দুর্নীতি হয়েছে?
ধকা যাক, কোনও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির কাছে জাল-নৌকা কেনার জন্য ঋণ নিয়েছেন। প্রকল্পের নিয়মে, ওই মৎস্যজীবী ওই ঋণ শোধ করলে কেন্দ্রের ভর্তুকির টাকা পাবেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর অনেকটা সাশ্রয় হবে। আর এখানেই দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে, ভুয়ো ঋণ দেখিয়ে এবং তা শোধও হয়ে গিয়েছে দেখিয়ে ওই সব ঋণ বাবদ ভর্তুকির টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, ‘বেহুন্দি’ প্রকল্পে ২০১৬-’১৭ আর্থিক বছরে ২০৪. ৬৮ লক্ষ এবং ২০১৭-’১৮ আর্থিক বছরে ৬১৮.৮ লক্ষ টাকা ভর্তুকি বাবদ তুলে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, ‘আইএমএফডিপি’ প্রকল্পে ২০১৬-’১৭ এবং ২০১৭-’১৮ আর্থিক বছরে ৪৯১.৪ লক্ষ টাকা ভর্তুকি বাবদ তুলে নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ।
রামনগর-২ ব্লকের দাদনপাত্রবাড়ের বাসিন্দা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা মৎস্যজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত দাস বলেন, ‘‘আবেদনের পর কত টাকার ঋণ পেয়েছি তা জানতে পারিনি। তবে সাদা কাগজে সই করিয়ে ভর্তুকি বাবদ ২ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা আমাকে দেওয়া হয়। কত টাকার ঋণ মঞ্জুর হয়েছিল, তা জানতে জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।’’
২০১৭ সালে কাঁথি-১ ব্লকের এক বাসিন্দা তথ্য জানার অধিকার আইনে এই বিষয়ে জানতে চেয়ে ‘বেনফিশ’ -এর কাছে আবেদন জানান। সেখান থেকে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিগুলি শুধুমাত্র ভর্তুকি দিয়েছে। কিন্তু কোনও ঋণ দেখায়নি। যেখানে প্রকল্পে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, আগে ঋণ শোধ করতে হবে এবং তারপরে ভর্তুকি বাবদ টাকা মিলবে। এ ক্ষেত্রে উপভোক্তাদের ঋণ না দিয়ে সরাসরি ভর্তুকির টাকা কী ভাবে মঞ্জুর করল বেনফিশ, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
কাঁথি মহকুমা খটি মৎস্যজীবী সংগঠনের সম্পাদক তথা মৈতনা গ্রাপঞ্চায়েতের উপপ্রধান তমালতরু দাস মহাপাত্র বলেন, ‘‘এ ধরনের একাধিক ঘটনা জানতে পেরেছি। তবে ঋণ না নিয়ে উপভোক্তাদের ভর্তুকি দেওয়া উচিত নয়।’’ যদিও আর এক মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা লক্ষ্মীকান্ত জানার দাবি, ‘‘অতীতে মৎস্যজীবীরা ঋণ নিয়ে শোধ দিতে পারতেন না। তাই, প্রাথমিক সমিতিগুলি উপভোক্তাদের ওই ঋণ শোধ দিয়েছে এবং সে জন্য তারা ভর্তুকি পেয়েছে।’’ যদিও, বেনফিশ এখনও ঋণ শোধ সংক্রান্ত কোনও নথি দেখাতে পারেনি বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের সংস্থা বেনফিশের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য ফোন করা হয়েছিল চেয়ারম্যান বিধান চন্দ্র রায় কে। কিন্তু তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। এই অবস্থায় মৎস্যজীবীদের জন্য সরকারি প্রকল্পে বড়সড় আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে বেনফিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মৎস্যজীবী সংগঠনগুলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy