Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Jhargram Hospital

পরিকাঠামোর ঘাটতিতেই

জেলা সুপার স্পেশালিটি ও করোনা হাসপাতালে পর্যায়ক্রমে পরিষেবা দিতে গিয়ে কালঘাম ছুটছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। সূত্রের খবর, ৭৫ শয্যার করোনা হাসপাতালের ৮ জন চিকিৎসকের কেউই মেডিসিন এবং অ্যানাস্থেশিয়ার বিশেষজ্ঞ নন। সেখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই ও সাকশন সিস্টেম নেই।

সরব: মারধরের প্রতিবাদে হাসপাতালের সামনে ধর্না চিকিৎসকদের। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

সরব: মারধরের প্রতিবাদে হাসপাতালের সামনে ধর্না চিকিৎসকদের। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:৫০
Share: Save:

ঝাড়গ্রাম জেলা করোনা হাসপাতালে কার্যত ঢাল-তরোয়াল বিহীন নিধিরাম সর্দার হয়ে পরিষেবা দিতে হচ্ছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। এমনই অভিযোগ চিকিৎসক সংগঠনগুলির।শুক্রবার রাতে করোনা হাসপাতালে মৃত্যু হয় শহরের বাছুরডোবার হরিতকীতলার ভবেশ গিরি (৮৪) ও উত্তর বামদার সত্যনারায়ণ দাস (৩২)-এর। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে সত্যনারায়ণের পরিজনেরা রাতেই হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখান। মার খান ওই হাসপাতালের এক কর্মী। শনিবার সকালেও তাঁরা বিক্ষোভ দেখান। দফায় দফায় ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া রাজ্য সড়ক অবরোধ হয়। শুরুতে সিপিএমের জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কে, সিপিআই নেতা গুরুপদ মণ্ডল অবরোধে নেতৃত্ব দিলেও পরে মৃতের পরিজনেদের পাশাপাশি তৃণমূল ও বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের অবরোধে দেখা যায়। পরিস্থিতি সামলাতে আসেন তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিত মাহাতো। অজিতকে নিয়ে সুপারের সঙ্গে দেখা করতে যান সত্যনারায়ণের পরিজনেরা। তখন সুপার স্পেশালিটির চিকিৎসক অর্ণাশিস হোতাকে সামনে পেয়ে তাঁরা মারধর করেন বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে করোনা হাসপাতাল থেকে ৫০ মিটার দূরে সুপার স্পেশালিটির সামনে ধর্নায় বসে যান সুপার, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। ভবেশের দুই ছেলে বাবাকে দূর থেকে শেষবারের মতো দেখতে চাইলেও অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। ছোট ছেলে শাশ্বতের প্রশ্ন, ‘‘আমরা তো দূর থেকে বাবাকে দেখতে চেয়েছিলাম। সেই অনুমতিও পেলাম না। সরকারি বিধিতে তো দেহ দেখতে দেওয়া হয়।’’

এই ঘটনায় সামনে এসেছে করোনা হাসপাতালের বেহাল পরিকাঠামোর কথা। জেলা সুপার স্পেশালিটির চিকিৎসক ও কর্মীদের দিয়েই চলছে করোনা হাসপাতাল। জেলা সুপার স্পেশালিটির সুপার ইন্দ্রনীল সরকারই করোনা হাসপাতালের দায়িত্বে। জেলা সুপার স্পেশালিটি ও করোনা হাসপাতালে পর্যায়ক্রমে পরিষেবা দিতে গিয়ে কালঘাম ছুটছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। সূত্রের খবর, ৭৫ শয্যার করোনা হাসপাতালের ৮ জন চিকিৎসকের কেউই মেডিসিন এবং অ্যানাস্থেশিয়ার বিশেষজ্ঞ নন। সেখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই ও সাকশন সিস্টেম নেই। নেই ডায়ালিসিস কিংবা হাই রেজোলেশন সিটিস্ক্যান অফ থোরাক্সের ব্যবস্থা। করোনা আক্রান্তের ফুসফুসের পরিস্থিতি জানতে এই সিটিস্ক্যান করানো খুবই প্রয়োজন। এ ছাড়া রক্তের ডি-ডাইমার, সিআরপি, ফেরিটিন, এলডিএইচ পরীক্ষার ব্যবস্থাও নেই। কোভিড সংক্রমিত রোগী চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন কি-না বুঝতে রক্তের এই চারটি পরীক্ষা করানো জরুরি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ভেন্টিলেটরে রোগীকে রাখার আগে ‘হাই ফ্লো নেজ্যাল ক্যানুলা’ ও ‘নন রিব্রিদিং মাস্ক’ দেওয়া প্রয়োজন। এই দু’টি সরঞ্জামও করোনা হাসপাতালে নেই। মাত্র তিনটি ভেন্টিলেটর রয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, ওয়েস্টবেঙ্গল-এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটার অভিযোগ, ‘‘পরিকাঠামোহীন করোনা হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। সাধারণ মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়ছেন চিকিৎসকেরা।’’ শনিবার রাতেও হাসপাতালে এক করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

করোনা হাসপাতালের দায়িত্বে রয়েছে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এ দিন সন্ধ্যায় মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা সুপারের ঘরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলে চলে যান। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি হয়ে চিকিৎসকদের কাছে আসেন প্রাক্তন সাংসদ উমা সরেন। তিনি ধর্নাস্থল থেকে মোবাইলের লাউড স্পিকার চালু করে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে ফোন করলে প্রকাশ জানান, চিকিৎসকেরা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাননি। পরে উমার আবেদনে সাড়া দিয়ে চিকিৎসকেরা কাজে ফিরেছেন। তবে সোমবারের মধ্যে মারধরে অভিযুক্তদের গ্রেফতার, পরিকাঠামোর উন্নয়ন-সহ নানা শর্ত রেখেছেন তাঁরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Jhargram Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE