খড়্গপুরের মালঞ্চ রোডের একটি ব্যাঙ্কে টাকা তোলার লাইন। নিজস্ব চিত্র।
বাজার থেকে বিদায় নিচ্ছে পুরনো পাঁচশো-হাজার টাকার নোট। পরিবর্তে মিলছে নতুন দু’হাজার টাকার নোট। কিন্তু খুচরো ১০০, ২০০, ৫০ কই?
খুচরোর অভাবে বেসামাল রেলশহর খড়্গপুর। মুদিখানা, বাজার, দোকান— যেখানেই ক্রেতা দু’হাজারের নোট দিচ্ছেন, হাতজোড় করছেন বিক্রেতা। ফলে, দোকানপাটে ভিড় কমছে। সাধারণ মানুষ খুচরোর আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা এটিএমে বা ব্যাঙ্কে লাইন দিচ্ছেন। কিন্তু ফিরতে হচ্ছে দু’হাজারের নোট নিয়েই। কোনও কোনও এটিএম থেকে যাঁরা কিছু খুচরো পাচ্ছেন, তাঁরা ভাগ্যবান বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। সমস্যা সমাধানে অবিলম্বে একশো টাকার নোট বেশি করে আনা হোক এবং দ্রুত ৫০০ টাকার নতুন নোট বিলি করা হোক, এমন দাবিও উঠেছে।
সোমবার শহরের মালঞ্চ এলাকার বাসিন্দা ওমপ্রকাশ শর্মা টাকা তুলতে হন্যে হয়ে ঘুরছিলেন একের পর এক এটিএমে। কোথাও টাকা না পেয়ে শেষে দাঁড়িয়ে পড়েন স্টেট ব্যাঙ্কের মালঞ্চ শাখার এটিএমের লাইনে। দীর্ঘক্ষণ পরে এটিএম থেকে হাতে আসে দু’হাজার টাকার নোটই। সেই নোট ওমপ্রকাশ ব্যাঙ্কে গিয়ে জমা দিয়ে দেন। কেন? ওমপ্রকাশের কথায়, ‘‘আমার খুচরো টাকার প্রয়োজন। দু’হাজার টাকার নোট নিয়ে কী করব? তাই জমা দিলাম।’’
ট্রেনে খড়্গপুর স্টেশনে এসেছিলেন মাদপুরের লাল্টু সিংহ। স্টেশন সংলগ্ন তিনটি এটিএমের দু’টিতে টাকা ছিল না। কাছের আর একটি এটিএমে লাইন দেখে তিনিও দাঁড়িয়ে পড়েন। ‘একশোর নোট পাওয়া যাচ্ছে’, শুনে স্বস্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু লাল্টুবাবুর কপাল খারাপ। লাইন কিছুটা এগোতেই একশোর নোট শেষ। লাইন ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। লাল্টুবাবুর কথায়, ‘‘মাদপুরে একশো টাকার নোট বাজারে প্রায় নেই। তাই খড়্গপুরে এসেছিলাম টাকা তুলতে। কিন্তু এখানেও দু’হাজার টাকার নোট! এই নোট নিয়ে মাদপুরে গেলে কেউ খুচরো দেবে না। তাই তুললাম না।’’
কোনও বিচ্ছিন্ন উদাহরণ নয়। সোমবার রেলশহরে এটিএমগুলির সামনে এমন দুর্ভোগের বহু ছবি ধরা পড়েছে। তার উপরে অনেক এটিএম অচল থাকায় গ্রাহকদের বিপত্তি আরও বেড়েছে। সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন স্টেট ব্যাঙ্কের রিজিওনাল ম্যানেজার (খড়্গপুর) মনমোহন রথ। তিনি বলেন, “এটা ঠিক দু’হাজার টাকার নোটে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। এখনও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে আমাদের হাতে ৫০০ টাকার নোট আসেনি। ওই নোট এলে সমস্যা মিটে যাবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে মনে হয়।”
খুচরোর অভাব ধাক্কা দিয়েছে রেলশহরের বাজারেও। এ দিন দু’হাজার টাকার নোট নিয়ে শহরের গোলবাজারে এসেছিলেন শৈবাল চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু ৪০ মিনিট ধরে ঘুরেও খুচরো পাননি। সেখানকার সব্জি ব্যবসায়ী রাজু রক্ষিত বলেন, ‘‘একজন ক্রেতা দু’শো টাকার সব্জি কিনে যদি দু’হাজার টাকার নোট দেন, কী ভাবে ১৮০০ টাকা ফেরত দেব? সকলের হাতে দু’হাজার টাকার নোট! বিক্রি বন্ধ করে বসে রয়েছি।”
নোটের চোটে ভুগছে পড়ুয়ারাও। খড়্গপুরের বাসিন্দা রিমি দত্ত কলকাতার একটি বেসরকারি সায়েন্স ও ম্যানেজমেন্ট কলেজের ছাত্রী। সোমবার ছিল তাঁর হস্টেলের টাকা জমা দেওয়ার দিন। কিন্তু রবিবার পর্যন্ত ব্যাঙ্ক ও এটিএম ঘুরেও ১৫ হাজার টাকা পাননি। সোমবার আইআইটি স্টেট ব্যাঙ্ক শাখায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন। টাকা তুলতে পেরেছেন। কিন্তু দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না। রিমি বলেন, ‘‘মঙ্গলবারের আগে তো এই টাকা জমা দিতে পারব না। কলেজে গিয়ে কী বলব জানি না।” অবস্থার উন্নতি কবে হবে এখন সেই উত্তর খুঁজছে রেলশহর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy