বৃহস্পতিবার আঁধারিয়ার সিংপুরে উদ্ধার হওয়া পোস্টার। নিজস্ব চিত্র।
শান্তির জঙ্গলমহলে অতীত উস্কে দিয়ে মাঝে মধ্যেই মাওবাদীদের নামে পোস্টার পড়ছে। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ঝাড়গ্রাম জেলার ১০টি জায়গায় মাওবাদী-নামাঙ্কিত পোস্টার এবং দু’টি জায়গায় স্টিলের ক্যান উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
গত বৃহস্পতিবার সকালেও বিনপুরের আঁধারিয়া অঞ্চলের সিংপুরের রাস্তায় ফের মাওবাদী-নামাঙ্কিত কিছু পোস্টার পাওয়া গিয়েছে। রাজ্য পুলিশের দাবি, এলাকায় মাওবাদীদের অস্তিত্ব নেই। সবই ভুয়ো পোস্টার। কিন্তু কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একাংশ মাওবাদীদের ‘টিসিওসি’-র (ট্যাকটিক্যাল কাউন্টার অফেনসিভ ক্যাম্পেন) বিষয়টি মনে করিয়ে দিচ্ছেন। অর্থাৎ ‘কৌশলগত পাল্টা আক্রমণাত্মক অভিযান’।
এক সময়ে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় পর পর নকল মাইন রেখে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের বিভ্রান্ত করত মাওবাদীরা। পরে অসতর্ক মুহূর্তে মাইন নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে বা উদ্ধার করতে গিয়ে বিস্ফোরণে পুলিশ কর্মীদের মৃত্যুও হয়েছে। বাম আমলে লালগড়ে এক সিপিএম নেতাকে খুনের পরে এলাকায় ছড়িয়ে যাওয়া পোস্টারের সঙ্গে বিস্ফোরক চিটিয়ে দিয়েছিল মাওবাদীরা। দেহ উদ্ধারে যাওয়া পুলিশের দলটি অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিল। তাই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, পর পর উদ্ধার হওয়া পোস্টারগুলিকে অতি সরলীকরণ করে নকল বলার আগে প্রতিটি ক্ষেত্রে ‘মিসিং লিঙ্ক’ খুঁজে দেখা উচিত।
রাজ্যে তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর জামবনির বুড়িশোলের জঙ্গলে যৌথবাহিনীর গুলিতে মাওবাদী শীর্ষ নেতা কিষেনজির মৃত্যু হয়। একের পর এক মাওবাদী স্কোয়াড সদস্যরা আত্মসমর্পণ করেন। দু’টি পঞ্চায়েত ভোট, তিনটি বিধানসভা ভোট ও দু’টি লোকসভা ভোট পার করে বদলে যাওয়া জঙ্গলমহলে এখনও বঞ্চনার অভিযোগে সরব একাংশ বাসিন্দা। পঞ্চায়েতের পরিষেবা, মাওবাদী প্যাকেজ অথবা মাওবাদী হানায় নিহত পরিবারের প্যাকেজ, শিক্ষক নিয়োগ, চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের অপ্রাপ্তির মতো নানা বিষয় নিয়ে ক্ষোভ-অভিযোগ রয়েছে। জেলা পুলিশের একটি মহল বলছে, একেবারেই স্থানীয়ভাবে কিছু লোকজন নিজেদের স্বার্থে মাওবাদীদের নামে পোস্টার দিয়ে অপরপক্ষকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন। ওই সব পোস্টারের সঙ্গে মাওবাদীদের কোনও যোগসূত্র নেই।
পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঝাড়গ্রাম জেলার ৯টি জায়গায় মাওবাদী-নামাঙ্কিত পোস্টার মিলেছে। দু’টি জায়গায় টিফিন বাক্স মিলেছে। ১২ ফেব্রুয়ারি বিনপুরের মহুলবনি গ্রামে দিলীপ ঘোষ সহ ৬ বিজেপি নেতাকে খুনের হুমকি দেওয়া পোস্টার পাওয়া গিয়েছিল। জেলা পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলছেন, ‘‘জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তিগত আক্রোশে কেউ বা কারা ভুয়ো পোস্টার
দিচ্ছেন। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার জন্য তদন্ত চলছে।’’
এই পর্বে উদ্ধার হওয়া মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টারে কোথাও শুধু তৃণমূলকে, কোথাও তৃণমূল-বিজেপিকে একযোগে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধেও রয়েছে বক্তব্য। আর আদিবাসীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সমর্থন করা হয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবনাথ হাঁসদার অবশ্য মত, ‘‘জঙ্গলমহলে অভূতপূর্ব উন্নয়নে রাজনৈতিক ভাবে যাঁরা কোণঠাসা হয়ে গিয়েছেন, তাঁরাই মাওবাদীদের নাম করে ভুয়ো হুমকি পোস্টার দিচ্ছেন।’’ বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক অবনী ঘোষের পাল্টা ব্যাখ্যা, ‘‘ক্ষমতা ধরে রাখতে রাজ্যের শাসকদলই মাওবাদী জুজু তৈরি করছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কে আবার বলছেন, ‘‘যে সব প্রাক্তন মাওবাদী সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাননি তাঁরাই এখন ক্ষোভে পোস্টার দিচ্ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy