Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
দুর্নীতির খপ্পড়ে ৬০ পড়ুয়া
Students

ক্লাস করেও দেওয়া হল না স্নাতক পরীক্ষা

স্নাতকের প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষার ঠিক আগে জানা গেল, তাঁদের ভর্তি প্রক্রিয়াটাই বৈধ নয়। বিপাকে পড়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৬০ জন! 

এই রসিদেই ভর্তি। নিজস্ব চিত্র

এই রসিদেই ভর্তি। নিজস্ব চিত্র

বরুণ দে
কেশপুর শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। ছ’মাস ক্লাসও করেছেন। কিন্তু পরীক্ষায় বসতে পারলেন না। স্নাতকের প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষার ঠিক আগে জানা গেল, তাঁদের ভর্তি প্রক্রিয়াটাই বৈধ নয়। বিপাকে পড়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৬০ জন!

পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর কলেজের এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। বিষয়টিতে নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপির। পরীক্ষায় বসতে না পারা ছাত্রছাত্রীদের অনেকের দাবি, টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক শেখ সানাউল্লা এবং তাঁর অনুগামীরা তাঁদের কলেজে ভর্তির বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন। এ জন্য টাকাও নিয়েছিলেন। পরিবর্তে দেওয়া হয়েছিল ভর্তির রসিদ। পরে তাঁরা জানতে পারেন, ওই রসিদ নকল। এ ক্ষেত্রে কলেজের সিলও নকল করেছে ওই দুষ্টচক্র। পরীক্ষায় বসতে না পারা ছাত্রছাত্রীরা ইতিমধ্যে কলেজ-কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সেখানে স্পষ্ট লেখা রয়েছে, ‘ভর্তির জন্য আমরা কলেজের প্রাক্তন জিএস শেখ সানাউল্লাকে ২ হাজার টাকা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে জানতে পারি কলেজের রেজিস্ট্রেশন কাগজে আমাদের নাম নেই।’

পরীক্ষায় বসতে পারেননি সুব্রত ঘোষ। এই ছাত্রের অভিযোগ ‘‘ভর্তি চলাকালীন কলেজে কয়েকজন খবরদারি করছিল। ওদের মধ্যে সানাউল্লাও ছিল। ওরা আমাদের কলেজে ভর্তির রসিদ দেয়। পরে আমরা বুঝেছি, ওই রসিদ নকল।’’

সুরাহা চেয়ে অভিযোগপত্র জমা দিলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করেননি বলে অভিযোগ। কেশপুর কলেজের অধ্যক্ষ দীপক ভুঁইয়া মানছেন, ‘‘কয়েকজন ছাত্রছাত্রী আমার কাছে এসেছিল। ওরা প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষায় বসতে পারেনি। ওরা অবৈধভাবে কলেজে ভর্তি হয়েছিল।’’ অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘ভর্তি প্রক্রিয়া চলাকালীন আমরা বারবার জানিয়েছিলাম, ভর্তি প্রক্রিয়া অনলাইনে চলছে। কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ কাউকে যেন টাকাপয়সা না দেয়। এরপরও কেউ কেউ যদি কোনও চক্রের খপ্পড়ে পড়ে, আমাদের কী করার আছে!’’ কলেজের রসিদ, সিল নকল হয়েছে। তাও কেন পুলিশে অভিযোগ জানাননি? অধ্যক্ষের জবাব, ‘‘এ বার অভিযোগ জানানো হবে।’’

কলেজে ভর্তিতে দুর্নীতি রুখতে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তোলাবাজি বন্ধে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, আবেদন থেকে ফি মেটানো- কলেজে স্নাতকস্তরে ভর্তির গোটা প্রক্রিয়াই অনলাইনে হবে। তাতেও যে দুর্নীতি আটকানো যায়নি, কেশপুরের ঘটনাই তার প্রমাণ। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কলেজও দুর্নীতিতে মদত দিয়েছে। না হলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে না।’’ এবিভিপির জেলা সভাপতি স্বরূপ মাইতির বক্তব্য, ‘‘কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নামে তোলাবাজি করেছে টিএমসিপি।’’

টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘কেশপুরে কয়েকজন প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষা দিতে পারেনি বলে শুনেছি। কেউ দুর্নীতির খপ্পরে পড়ে থাকলে পুলিশ- প্রশাসনে অভিযোগ জানাক।’’ অভিযোগ তো সানাউল্লাদের দিকেই? সদুত্তর এড়িয়ে সৌরভের জবাব, ‘‘কেউ দোষ করলে শাস্তি হবেই।’’

আর সানাউল্লা কী বলছেন?

মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে এ দিন ধরেও ফোন কেটে দিয়েছেন অভিযুক্ত এই টিএমসিপি নেতা। তবে সংগঠনের এক জেলা নেতার স্বীকারোক্তি, ‘‘ওঁর বিরুদ্ধে কলেজে তোলাবাজির একাধিক অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। আমরা দেখছি কী করা যায়!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Students Samester Admission
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy