এক নেপালি যুবতীকে আবাসনে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেল (ইএফআর)-এর এক আধিকারিকের বিরুদ্ধে। গত সোমবার রাতে খড়্গপুরের সালুয়ায় ইএফআর-এর প্রথম ব্যাটালিয়ানের ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডান্ট যুবতীকে মদ্যপান করিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। বিবাহিত ওই যুবতীর বাবাও ইএফআর জওয়ান। অভিযোগ, বাবার চাকরি চলে যাওয়ার ভয় দেখিয়েই যুবতীকে ধর্ষণ করা হয়।
ওই যুবতী প্রথমে ইএফআর কমান্ডান্টের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। বুধবার রাতে অভিযোগের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে খড়্গপুর গ্রামীণ থানায়। ধর্ষণের মামলা রুজু করে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। যুবতীর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার ওই যুবতী মেদিনীপুর আদালতে গোপন জবানবন্দিও দিয়েছেন। অভিযুক্ত তাঁর নিরাপত্তায় থাকা রাইফেলম্যান-কে দিয়ে গাড়ি পাঠিয়ে যুবতীকে ডেকে এনেছিলেন বলে অভিযোগ। হরি ছেত্রী নামে রাইফেল ম্যানকে ইতিমধ্যে সাসপেন্ড করা হয়েছে। অভিযুক্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডান্টের বিরুদ্ধেও শুরু হয়েছে বিভাগীয় তদন্ত। কমান্ডান্ট ফারহাত আব্বাস বলেন, “আমরা গোটা ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছি। ইতিমধ্যে রাইফেল ম্যানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আর অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডান্টের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র দফতরে জানিয়েছি।” খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্তের বক্তব্য, “ইএফআর -এর থেকে অভিযোগ পেয়ে ধর্ষণের মামলা রুজু করেছি। তদন্ত করে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হবে।”
ইএফআর ও স্থানীয় সূত্রে খবর, গত সোমবার রাত দু’টো নাগাদ বছর আঠাশের নেপালি ওই যুবতীর চিৎকার শুনে আশপাশের আবাসনের লোকজন ছুটে আসেন। আসেন সালুয়ায় কর্মরত জওয়ানরাও। তারপর ৫৮ বছরের ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডান্টের ঘর থেকে যুবতীকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। মঙ্গলবার ভোরে ঘটনাস্থলে যান ইএফআর মহিলা কল্যাণ সমিতির সদস্যরা। তাঁদের ওই সময় যুবতী জানান, বাবার চাকরি চলে যাবে বলে ভয় দেখিয়ে তাঁকে ডেকেছিলেন ইএফআরের ওই আধিকারিক। তাঁর নিরাপত্তায় থাকা ‘রাইফেলম্যান’ দিয়ে গাড়ি পাঠিয়ে যুবতীকে নিয়ে আসা হয়।
যুবতীর অভিযোগ, জোর করে তাঁকে মদ্যপানে বাধ্য করান ওই আধিকারিক। যুবতী বেহুঁশ হয়ে পড়েন। মাঝরাতে জ্ঞান ফিরলে তিনি দেখেন, ওই আধিকারিকের সঙ্গে বিছানায় তিনি বিবস্ত্র অবস্থায় রয়েছেন। এরপরই তিনি জানলা খুলে চিৎকার করতে থাকেন। মহিলা কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী নিলম তামাং বলেন, “ওই যুবতীর অভিযোগ, বেঁহুশ অবস্থায় তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে। শরীরে সেই চিহ্নও আমরা দেখেছি।” মহিলা সমিতির উদ্যোগেই যুবতীকে সালুয়ার ইএফআর কমান্ডান্টের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে সরব হন মহিলারা। পরে যুবতীর কথা শোনেন কমান্ডান্ট ফারহাত আব্বাস। বিভাগীয় তদন্তের আশ্বাস দেন। বুধবার সকালে মহিলা কল্যাণ সমিতি ফের অভিযুক্তকে গ্রেফতার ও বরখাস্তের দাবি তোলে। তারপরই রাইফেল ম্যান হরি ছেত্রীকে বরখাস্ত করা হয়। আর বুধবার রাতে যুবতীর অভিযোগপত্র খড়্গপুর গ্রামীণ থানায় পাঠানো হয়।
অভিযোগকারিণী বিবাহিত। তবে স্বামী কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। দুই সন্তানকে নিয়ে ওই যুবতী খড়্গপুর শহরের আয়মা এলাকায় থাকেন। যুবতীর বাবাও সালুয়ায় ইএফআর জওয়ান পদে কর্মরত। তাই সালুয়ায় যাতায়াত রয়েছে যুবতীর। মাস দু’য়েক হল অসুস্থতার কারণে যুবতীর বাবা নিয়মিত কাজে যেতে পারছিলেন না। যুবতীর দাবি, এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডান্ট মাস দুয়েক আগে তাঁকে ও বাড়ি লোকদের ডেকে পাঠিয়েছিলেন। সেই থেকে তিনবার তিনি মা বা ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডান্টের সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু গত সোমবার ওই যুবতীকে একাই ডেকে পাঠানো হয় বলে অভিযোগ। যুবতীর কথায়, “সোমবার সন্ধ্যায় গাড়ি পাঠিয়ে আমাকে একাই নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডান্ট জোর করে আমাকে মদ্যপান করান। আমি বেহুঁশ হয়ে যাই। আমার ধারণা তারপর আমাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।”
অভিযোগ মানতে নারাজ অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডান্ট। তাঁর বক্তব্য, “একজন মারা যাওয়ায় পরিবারে দু’জনের ইএফআর-এ চাকরি পাওয়া, সমবায়ের টাকা তছরুপের মতো নানা বিষয়ে আমি তদন্ত করছি বলে অনেকের ক্ষোভ রয়েছে। ওই যুবতী তাঁর বাবার এটিএম কার্ড বন্ধক রেখে কারও থেকে টাকা নিয়েছিলেন। সেই কার্ড ফেরত পেতে সাহায্য চেয়ে তিনি সোমবার সন্ধ্যায় আমার কাছে এসেছিলেন। পরে চলেও যান। রাতে কেউ ষড়যন্ত্র করে তাঁকে আমার ঘরে ঢুকিয়ে এ সব মিথ্যে অভিযোগ করছে।” ওই যুবতী কেন জোর করে মদ্যপান করানোর সময় চিৎকার করলেন না, সে কথা ভাবাচ্ছে পুলিশকেও। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy