বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআইয়ের উল্লাস। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
এ বারও দুই মেদিনীপুরের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে একচ্ছত্র দাপট রইল টিএমসিপি-র। গত বছর পশ্চিম মেদিনীপুরের ৩টি কলেজ বিরোধীদের দখলে ছিল। চাঁইপাট কলেজ ছিল এসএফআইয়ের দখলে। কমার্স এবং সবং কলেজ ছিল ছাত্র পরিষদের দখলে। এ বার ছাত্র পরিষদের হাত থেকে কমার্স কলেজ গিয়েছে টিএমসিপি-র হাতে। অন্য কলেজেও তাদেরই জয়জয়কার।
অথচ, বৃহস্পতিবার সকালেও ছবিটাও ছিল অন্য রকম। ভোটের আগে বহু আসনে জয় পেলেও চিন্তা যাচ্ছিল না তৃণমূল শিবিরের। স্বস্তিতে ছিলেন না শাসক দলের নেতারাও। চিন্তা ছিল মূলত জঙ্গলমহল এলাকার তিন কলেজ নিয়ে নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর এবং গোয়ালতোড়। এই তিন কলেজেই যে টিএমসিপির প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। চিন্তা ছিল খড়্গপুরের মতো কিছু কলেজ নিয়েও। এ দিন সকালেই খড়্গপুরে ছুটে গিয়েছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। গোয়ালতোড়ে যান টিএমসিপির জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি। দিনের শেষে অবশ্য এঁদের সকলের মুখেই চওড়া হাসি!
চাঁইপাট কলেজ দখলে রাখতে পেরেছে এসএফআই। সবং কলেজ দখলে রাখতে পেরেছে ছাত্র পরিষদ। পশ্চিম মেদিনীপুরের ২৬টি কলেজের মধ্যে বাকি ২৪টি কলেজের ছাত্র সংসদেই থাকছে টিএমসিপি। টিএমসিপি-র জয়ের তালিকায় এ বার যোগ হয়েছে কমার্স কলেজ।
টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদের কথায়, “প্রথম থেকেই বলে আসছি, আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। সব কলেজে সুষ্ঠু ভাবে ভোট হয়েছে। তাই এই ফল।”
তবে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ভোটে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে টিএমসিপি। কেমন? এ দিন এখানে ২৯টি আসনে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হয়। এর মধ্যে ১৫টি আসনে প্রার্থী ছিল এসএফআইয়ের। তারা জিতেছে ১২টি আসনে। ১০টি আসনে প্রার্থী ছিল ডিএসও’র। তারা জিতেছে ৬টি আসনে। বাকি ১১টি আসনে জয়ী হয়েছে টিএমসিপি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটে যে ধাক্কা খেতে হতে পারে, তার ইঙ্গিত শাসক দলে ছিলই। তাই ছাত্র সংগঠনের বিবাদমান দুই গোষ্ঠীর নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। তাও সব সমস্যার সমাধান হয়নি।
এসএফআইয়ের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ভোটে তাদেরই নৈতিক জয় হয়েছে। সংগঠনের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডা বলেন, “এখানে চাপ দিয়ে আমাদের দু’টি মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা ভোটে জোরজুলুমের যোগ্য জবাব দিয়েছেন।” তাঁর কথায়, “যেখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশে ভোট হবে, সেখানেই টিএমসিপি খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে।” একই দাবি ডিএসও’র জেলা সম্পাদক মণিশঙ্কর পট্টনায়েকেরও। কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটে কিছুটা ধাক্কা খেতে হল টিএমসিপিকে? সদুত্তর এড়িয়ে সংগঠনের জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ বলছেন, “আমরা ফলাফলের পর্যালোচনা করব।”
পুলিশি নিরাপত্তায় তমলুক কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। —নিজস্ব চিত্র।
সম্প্রতি জঙ্গলমহলের আরেক জেলা পুরুলিয়ার দুই কলেজের ভোটে পদ্মফুল ফোটে। ছাত্রভোটের আগে আগে এ জেলার কয়েক’টি কলেজেও মাথা তোলে এবিভিপি। মনোনয়নপর্বেও তারা দাগ কেটেছিল। ইউনিট গড়ে না গড়েই গোপীবল্লভপুর, গোয়ালতোড়, নয়াগ্রামের মতো কলেজে প্রার্থী দিয়ে টিএমসিপিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিল তারা। বেলদা, হিজলি, খড়্গপুরের মতো কলেজেও তারা মনোনয়ন দেয়। কেন ভোটের ফলে দাগ কাটা গেল না?
এবিভিপি’র দুই মেদিনীপুরের পর্যবেক্ষক অসীম মিশ্র বলেন, “সর্বত্র জোলজুলুম চলেছে। টিএমসিপি সন্ত্রাস করেছে। গোয়ালতোড়, নয়াগ্রামের মতো কলেজে সুষ্ঠু ভাবে ভোট হলে যে হার নিশ্চিত, তা ওরা বুঝে গিয়েছিল। সায়েন্টিফিক রিগিং হয়েছে। ভোটারদের বিভ্রান্ত করা হয়েছে।” তাঁর দাবি, “গণতান্ত্রিক পরিবেশে ভোট হলে ফল অন্য হত।” অসীম বলেন, “নয়াগ্রাম কলেজের সামনে এ দিন সকাল থেকে টিএমসিপি জমায়েত করে। পুলিশকে জানিয়েও সুরাহা হয়নি। ব্যারিকেড করে রাখা হয়। ফলে, আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা কলেজে ঢুকতেই পারেননি।” এবিভিপি’র জেলা সভাপতি স্বরূপ মাইতির বক্তব্য: “ছাত্রভোটে আমরা হারিনি। আমাদের হারানো হয়েছে।”
খড়্গপুর কলেজে টিএমসিপি-র জয়োল্লাস।
জেলার ২৬টি কলেজের মধ্যে ১৫টি কলেজে ভোটাভুটি হয়নি। এই সব কলেজে বিনা লড়াইয়ে জেতে টিএমসিপি। কলেজগুলোয় শুধুমাত্র টিএমসিপি-র প্রার্থী ছিল। বৃহস্পতিবার ভোটাভুটি হয় বাকি ১১টি কলেজে। এর মধ্যে গোপ কলেজ-সহ কয়েকটি কলেজের সংসদ টিএমসিপির দখলে চলে গিয়েছিল। কারণ, কলেজগুলোয় নামমাত্র আসনে বিরোধী প্রার্থী ছিল। মেদিনীপুর কমার্স, সবং, বেলদা, খড়্গপুর, নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর, গোয়ালতোড়, চাঁইপাটে টিএমসিপিকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়।
ভোটের ফল বলছে, ছাত্রভোটে সার্বিক ভাবে টিএমসিপি-র দাপটই অব্যাহত। কারণ, আগে থেকে দখলে থাকা কলেজগুলো তো দখলে রয়েছেই, উল্টে মেদিনীপুর কমার্স কলেজের ছাত্র সংসদ ছাত্র পরিষদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে টিএমসিপি। রাজ্যে পালাবদলের পর বহু চেষ্টা করেও যে কলেজের সংসদের পায়নি টিএমসিপি। কমার্স কলেজে ৩০টি আসনের টিএমসিপি এ বার পেয়েছে ২১টি। ছাত্র পরিষদের ঝুলিতে গিয়েছে ৯টি। গত বছর সংখ্যাটা ছিল ছাত্র পরিষদ ২০, টিএমসিপি ৯ এবং এসফএফআই এক।
কমার্স কলেজ হাতছাড়া হওয়ার কারণ কী? ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুল বলছেন, “বহু ভোটারকে ভোট দিতে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। আমরা ছাত্রছাত্রীদের পাশে ছিলাম। আছি। আগামী দিনেও থাকব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy