রাজভবনের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদী। পিটিআই
গোটা কলকাতা শহর যখন ‘গো ব্যাক নরেন্দ্র মোদী’ স্লোগানে উত্তাল, ঠিক তখন রাজভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস, সিপিএম-সহ বিভিন্ন সংগঠন। মমতা নিজে রাজভবন থেকে বেরিয়ে বলেন, “আমার সাংবিধানিক দায়িত্ব তাঁকে স্বাগত জানানো। রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী এলে আমি দেখা করি।”
দেশে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), এনআরসি, এনপিআর বিরোধী আন্দোলনে একেবারে প্রথম সারির মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিএএ পাশ হওয়ার পর এই প্রথম কলকাতায় এলেন নরেন্দ্র মোদী। ঘটনাচক্রে তিনি এ শহরে আসার আগের দিনই নতুন নাগরিকত্ব আইন বিজ্ঞপ্তি জারি করে লাগু হয়েছে সরকারি ভাবে। মোদীর সফর উপলক্ষে গত কয়েক দিন ধরেই বিক্ষোভের প্রস্তুতি চলছিল শহরে। শনিবার দুপুরের আগেই দিকে দিকে রাস্তায় রাস্তায় শুরু হয় নানা রঙের নানা কায়দায় বিক্ষোভ। এ সবের মধ্যেই বিকেল চারটের কিছু আগে দমদম বিমানবন্দরে এসে পৌঁছয় প্রধানমন্ত্রীর বিমান। তাঁকে নিয়ে যখন কপ্টার উড়ল রেস কোর্সের দিকে, তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছে গিয়েছেন রাজভবনে।
রেস কোর্স থেকে মোদীর কনভয় রাজভবনে ঢোকার পথ আগে থেকেই জনশূন্য করে রেখেছিল পুলিশ। রাজভবনে মোদীকে স্বাগত জানান রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী। তার পর একান্তে বেশ কিছু ক্ষণ কথা বলেন দু’জনে। রাজভবন থেকে বেরোনোর পথে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন মমতা। সাংবাদিকদের বলেন, সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতেই তিনি রাজভবনে এসেছিলেন।
কী কথা হল দু’জনের? মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “কেন্দ্রের কাছে আমার ২৮ হাজার কোটি টাকা পাওনা আছে... এ ছাড়াও বুলবুলের জন্যে সাত হাজার কোটি টাকা পাওনা আছে। আমি সেই টাকা চাইতে এসেছি।’’
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়— এই বৈঠকে সিএএ-এনআরসি নিয়েও কথা হয়েছে। মমতা বলেন, ‘‘ওনাকে বলেছি, দেখুন আপনি এখানে এসেছেন, আমার বলা উচিত কিনা জানি না। এনআরসি-ক্যা-এনপিআরের বিরোধী আমরা। মানুষে মানুষে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমরা। কোনও মানুষের ওপরে যেন অত্যাচার না হয় সেটা দেখা উচিত। আমি চাই ক্যা, এনপিআর, এনআরসি প্রত্যাহার করা হোক, আপনারা বিষয়টা বিবেচনা করুন।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন— প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন, দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী গেলে এই নিয়ে কথা হবে।
প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক শেষ হওয়ার পর আরও সুর চড়িয়েছেন বিরোধীরা। সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমের কটাক্ষ, “আগে ছিল ক্য ক্যা ছি ছি, এখন হল কাছাকাছি।”
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মোদী-মমতা দেখা হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের। নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধে প্রথম পথে নেমেছিলেন মমতা। জাতীয় স্তরে জোট গড়ে তুলতে বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের চিঠিও দিয়েছিলেন তিনিই। সেই উদ্যোগেরই ফলাফল ১৩ জানুয়ারি বিরোধীদের বৈঠক। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মমতা ওই বৈঠকে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ধর্মঘটের প্রতিবাদে।
রাজভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে মমতা যান রানি রাসমণি রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ধর্নামঞ্চে। এ দিন প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন রাস্তায় নেমেছে কলকাতার রাস্তায় রাস্তায়। কিন্তু সেই তুলনায় টিএমসিপির এই ধর্নামঞ্চ দিনভরই ছিল বেশ নিষ্প্রভ। মমতা আসতেই অবশ্য চাঙ্গা হয় মঞ্চ। সেখানে মমতা বলেন, ‘‘এই বাংলা থেকেই শুরু হয়েছিল এনআরসি বিরোধিতা। আমি শেষ দিন পর্যন্ত এর বিরোধিতাই করে যাব। আমি সমস্ত পড়ুয়াদের আমার সমর্থন জানাচ্ছি। সবাই একসাথে লড়ুন। কেন্দ্রীয় সরকার যে নোটিফিকেশন জারি করেছে, তা কাগজে কলমেই থাকবে, আমরা লাগু করব না, এই আমার বিশ্বাস।’’
মমতা যখন টিএমসিপির ধর্নায়, মোদী তখন ওল্ড কারেন্সি বিল্ডিং-এর অনুষ্ঠানে পৌঁছন। সেখানে বক্তব্য শুরু করলেন ‘আমার সোনার বাংলা’ বলে। এর পর মিলেনিয়াম পার্কে যান তিনি। সেখানে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এর পর সেখান থেকে বেলুড় মঠে যান মোদী। আজ রাতে সেখানেই থাকবেন প্রধানমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy