Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Doctors

Medical College Hospitals: আকাল সরকারি কর্নিয়া সার্জনের, শুরু প্রশিক্ষণ

২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে রাজ্যে সাতটি মেডিক্যাল কলেজে চক্ষু ব্যাঙ্ক চালু হওয়ার কথা ছিল। চালু করা গিয়েছে মাত্র দু’টি কলেজে।

প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২২ ০৬:৫৯
Share: Save:

জেলায় জেলায় পরের পর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল গড়ে উঠলেও বাংলায় দীর্ঘ কালের চিকিৎসক-ঘাটতি যেন পূরণ হওয়ার নয়! সেই অভাব, বিশেষত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সার্জন কত কম, স্বাস্থ্য দফতরের এক জিজ্ঞাসার জবাবে সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। রাজ্যে সরকারি ক্ষেত্রে চোখের সার্জনের সংখ্যা কমবেশি ৩০০। তাঁদের মধ্যে ‘কর্নিয়া গ্রাফটিং’ বা ‘কেরাটোপ্লাস্টি’ অপারেশন কে কে করতে পারেন, সম্প্রতি বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের কাছে তা জানতে চেয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্যকর্তাদের অস্বস্তিতে ফেলে ৩০০ চক্ষু শল্যচিকিৎসকের মধ্যে এক জনও স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এগিয়ে এসে জানাননি যে, তিনি কেরাটোপ্লাস্টি জানেন। অর্থাৎ ধরে নিতে হচ্ছে, এই মুহূর্তে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে কর্নিয়া গ্রাফটিং জানা কোনও সার্জনই নেই!

২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে রাজ্যে সাতটি মেডিক্যাল কলেজে চক্ষু ব্যাঙ্ক চালু হওয়ার কথা ছিল। চালু করা গিয়েছে মাত্র দু’টি কলেজে। ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে আরও চার জায়গায় চক্ষু ব্যাঙ্ক শুরু হওয়ার কথা। সেগুলিও পড়ে রয়েছে বিশ বাঁও জলে। কারণ, কর্নিয়া সার্জন ও অপটোমেট্রিস্টের অভাব। সেই জন্যই কোন কোন সার্জন কর্নিয়া গ্রাফটিং করতে পারেন, তা জানার দরকার ছিল। কিন্তু এক জনও নিজেকে কর্নিয়া সার্জন বলে চিহ্নিত করতে না-চাওয়ায় অশনি সঙ্কেত দেখছে স্বাস্থ্য দফতর। দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে না-চাওয়া ও ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতাই এর জন্য দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।

জিজ্ঞাসার জবাবে এমন বিবর্ণ ছবি উঠে আসার পরেই নির্দেশ জারি করে আটটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে বাধ্যতামূলক ভাবে দু’জন করে অর্থাৎ মোট ১৬ জন আই সার্জনের নাম পাঠাতে বলা হয়। জানানো হয়, প্রথম দু’দফায় আট জন করে এই ১৬ জনকে কেরাটোপ্লাস্টি অস্ত্রোপচারের দু’সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। দফায় দফায় আরও প্রশিক্ষণ চলবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনও সার্জন বলতে না-পারেন যে, তিনি কর্নিয়া গ্রাফটিং জানেন না। তাতে আটকে থাকা চক্ষু ব্যাঙ্কগুলি চালু করার প্রক্রিয়াও গতি পাবে। আপাতত আট জন সার্জনের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে।

২০১৬ থেকে ২০২২-এর মধ্যে বাঁকুড়া, বর্ধমান, উত্তরবঙ্গ, মেদিনীপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও এসএসকেএমে চক্ষু ব্যাঙ্ক চালু করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ২০২১ সালে মুর্শিদাবাদ ও চলতি বছরে এসএসকেএম ছাড়া কোনও কলেজে তা করা যায়নি। পুরনো যে-দু’টি চক্ষু ব্যাঙ্ক রয়েছে, সেই নীলরতন মেডিক্যাল কলেজের অতুলবল্লভ চক্ষু ব্যাঙ্ক ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে ‘রিজিয়নাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি’ (আরআইও)-তেও গত কয়েক বছরে কর্নিয়া গ্রাফটিংয়ের দশা তথৈবচ। অতুলবল্লভে তো কর্নিয়া গ্রাফটিং কার্যত বন্ধের মুখে। ২০২৪-এর মধ্যে ন্যাশনাল, কল্যাণী জেএনএম, আরজি কর ও কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজে চক্ষু ব্যাঙ্ক খোলার কথা।

রাজ্যে বছরে অন্তত ১২ হাজার কর্নিয়া প্রয়োজন হয়। কিন্তু ২০২১-২২ সালে সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্র মিলিয়ে সারা বাংলায় কর্নিয়া সংগৃহীত হয়েছে মাত্র ২১৬৬টি। তার মধ্যে ১৩৯২টি কাজে লাগানো গিয়েছে। অর্থাৎ ব্যবহৃত হয়েছে মোট কর্নিয়ার মাত্র ৬৪ শতাংশ।

রাজ্যে নতুন চক্ষু ব্যাঙ্কগুলি চালু করতে নোডাল অফিসার নিযুক্ত হয়েছেন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিভাগ ও চক্ষু ব্যাঙ্কের প্রধান অনিল ঘাটা। তিনি প্রস্তাবিত চক্ষু ব্যাঙ্কগুলির জায়গা পরিদর্শন করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘২০১৫ সালের আগেও নীলরতনের আই ব্যাঙ্কে বছরে ১৫০-২০০টি কর্নিয়া সংগৃহীত হত। ইদানীং সেটা কার্যত তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে ছিল। আরআইও-র মতো রাজ্যের প্রধান চক্ষু হাসপাতালে পরিদর্শনে গিয়ে জানতে চাইলাম, সেখানে ক’জন কর্নিয়া সার্জন আছেন? উত্তর এল, ‘কেউ নেই’!’’

নোডাল অফিসার জানাচ্ছেন, বাধ্য হয় খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জোর করে আটটি হাসপাতাল থেকে ১৬ জন আই সার্জনের নাম জোগাড় করে তাঁদের কর্নিয়া গ্রাফটিংয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করা হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Doctors Shortage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy