বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিধানসভায় হাজির হয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
‘‘আমাকে পলিটিক্যালি গবেট ভাবতেই পারেন। আমার কিছু করার নেই।’’ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিধানসভায় নিজের বক্তব্যের মাঝে এমনটাই বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কেন এমন বললেন? ওই কথার আগে বা পরে অবশ্য এ সংক্রান্ত কোনও কথাই বলেননি মমতা। তাই জল্পনা তৈরি হয়েছে নিজের সম্পর্কে মমতার এহেন মন্তব্য নিয়ে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজভবনে গিয়েছিলেন মমতা। এর পরে যখন বিধানসভায় আসেন তখন অধিবেশন প্রায় শেষের পথে। আসার পরে পরেই খাদ্য বাজেট নিয়ে বক্তৃতা করেন তিনি। তার মাঝেই ‘পলিটিক্যালি গবেট’ প্রসঙ্গ আনেন তিনি। নিজের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্প ও কেন্দ্রের কাছে তার দাবি নিয়ে কথা বলছিলেন। সে সবের মধ্যেই তিনি বলেন, ‘‘আমাকে পলিটিক্যালি গবেট ভাবতেই পারেন। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। রাজনীতিতে সবাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এমন তো কথা নেই।’’
সাড়ে তিন দশকের বামফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরে টানা তিন বার তৃণমূল সরকারের মুখ্যমন্ত্রী তিনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাতেও থেকেছেন। তাঁর চরম বিরোধীরাও রাজনৈতিক বিষয়ে মমতার বুদ্ধিমত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবেন না। অথচ তিনিই নিজের সম্পর্কে এমন প্রশ্ন তুললেন কেন? অনেকে বলছেন, তাঁর সরকারের যে কোনও কাজ বা প্রকল্প নিয়ে বিধানসভায় বিরোধী দল বিজেপি যে ভাবে লাগাতার আক্রমণ করে তারই জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে।
বৃহস্পতিবার তাঁর বক্তৃতায় রাজ্যের খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি, উৎপাদন ইত্যাদি নিয়ে রাজ্যের প্রকল্পের বিররণ দেন মমতা। কোথায় কী ভাবে সাধারণ মানুষকে বিনা পয়সায় খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে তার বিবরণও দেন তিনি। সেই সঙ্গে বাংলাকে কেন্দ্র কেন পোস্ত চাষের অনুমতি দেবে না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। একই সঙ্গে জানান, ডায়মন্ড হারবারে ইলিশ গবেষণা কেন্দ্র গড়ার কথা।
মমতার রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা যে কতটা তার উদাহরণ বৃহস্পতিবার বিধানসভাতেই মিলেছে বলে দাবি করেছেন এক তৃণমূল বিধায়ক। তিনি বলেন, ‘‘পোস্ত এবং ইলিশ। দু’টিই বাঙালির কাছে জনপ্রিয়। আর সেই দু’টি নিয়ে বিধানসভায় বক্তব্যের মধ্যেও মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর প্রকল্প, তাঁর উদ্যোগ মানেই মানুষের কথা। তাই তাঁকে নিয়ে যে যতই সমালোচনা করুক, আসলে তিনি যে রাজনীতিক হিসাবে খুবই সুচারু সেটা তাঁর যাবতীয় কর্মকাণ্ডেই দেখা যায়।’’
মমতার রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা নিয়ে প্রশ্ন অবশ্য কম ওঠেনি। বামেদের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলনের সময়ে তাঁকে আড়ালে এবং প্রকাশ্যে ‘পাগল’ সম্বোধন করতেও দেখা গিয়েছে। কিন্তু বাংলার রাজনীতি জানে, সেই সমালোচকরা হারিয়ে গিয়েছেন মমতা নয়। কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে নতুন দল গড়া নিয়েও সমালোচনা শুনতে হয়েছে। কিন্তু সে দিন যাঁদের সঙ্গে বিবাদে তিনি মূল কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল গড়েছিলেন, তাঁদের পরবর্তী কালে মমতার আশ্রয় নিতে হয়েছে। জাতীয় রাজনীতিতে কিংবা রাজ্যে তিনি যখন বিভিন্ন দলকে নিয়ে জোট গড়েছে তখনও তাঁর রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী কালে দেখা গিয়েছে, সঠিক সময়ে সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন মমতা। এ কথা স্বীকার করতে হয় তাঁর চরম বিরোধীদেরও। তৃণমূল শিবিরের দাবি, যিনি বার বার নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন তিনিই এমন মন্তব্য করতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy