শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র মাস্কে অনীহা। নিজস্ব চিত্র।
তেইশে তেইশ! গত এক মাসে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের করোনা বুলেটিনে সবক’টি জেলার নামের পাশেই রয়েছে লালকালির ঘেরাটোপে উদ্বেগের পরিসংখ্যান। সেপ্টেম্বরে রাজ্যের এমন একটি জেলা নেই যেখানে এক দিনও কোভিড আক্রান্তের হদিস মেলার ঘটনাক্রমে ছেদ পড়েছে। তবুও রক্ষাকবচে নাক-মুখ ঢাকতে অনীহা জনতার। শহর থেকে গ্রাম বাংলা— সর্বত্র এই প্রবণতার বাড়বাড়ন্ত দেখে প্রমাদ গুনছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় কোভিড নিয়ে সচেতনতা প্রচারে গিয়েছিলেন কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক (সিসিএন)-এর পাঁচ সদস্য। কলকাতা থেকে সাইকেলে পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া এবং বর্ধমানের একাধিক শহর-গ্রামে যান পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত এবং তাঁর চার সঙ্গী। সেই সফরেই মাস্ক পরা নিয়ে উদাসীনতা কোন পর্যায়ে রয়েছে তা টের পেলেন সিসিএনের সদস্যেরা। লোধাশুলি গ্রামের চায়ের দোকানে মাস্ক কেন নেই জানতে চাইলে দোকানদারের সটান জবাব, ‘‘কোভিড-টোভিড আমাদের হয় না। ও কয়েক জনের জ্বর হয়েছিল, সেরে গিয়েছে!’’
সাইকেলে সচেতনতা প্রচার কর্মসূচির আরও চার সদস্য ছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সিসিইউয়ে কর্মরত মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট সৌম্যদীপ মণ্ডল, পর্বতারোহী রুদ্রপ্রসাদ হালদার, সেচ দফতরের কর্মী অভীক মণ্ডল এবং মেঘনাদ সাহা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক অভিষেক তুঙ্গ। লোধাশুলি থেকে ঝাড়গ্রাম যাওয়ার পথে পরাডি গ্রামে ফুটবল মাঠের ছবি দেখে শিউরে ওঠেন তাঁরা। সৌম্যদীপের কথায়, ‘‘এক জনের মুখেও মাস্ক নেই! করোনা হওয়ার সম্ভাবনা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে!’’
আরও পড়ুন: বদলেছে কারবার, থেকে গিয়েছেন কর্তা
বাঘমুন্ডিতে পর্যটকদের আনোগোনা শুরু হয়েছে। অর্থনীতি রক্ষা করে ভাইরাসের হাত থেকে কী ভাবে বাঁচতে হবে, তা নিয়ে সেখানে প্রচার করেন সিসিএনের সদস্যেরা। পর্বতারোহী রুদ্রপ্রসাদ বলেন, ‘‘মাস্ক পরার কথা বললে বলছে, ছ’মাস তো পরলাম। আর কত দিন?’’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, গ্রামবাংলাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। কলকাতা এবং শহরতলিতেও জনতার বেপরোয়া মনোভাব প্রতি দিনই দেখা যাচ্ছে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত অফিসে উধাও সচেতনতা। মঙ্গলবার রাজারহাটের এসবিআইয়ের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক। তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসক, পুলিশের পাশাপাশি ব্যাঙ্কের বহু কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবুও ফাইলে নজর রাখতে গিয়ে নাকের ছিদ্রপথ মাঝেমধ্যেই উন্মুক্ত হয়ে থাকছে সেখানকার কর্মীদের। সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময়েও মাস্কের বালাই নেই।’’
আরও পড়ুন: পরীক্ষা কলেজে, দল বেঁধে মাঠে বা গাছতলাতেও
সম্প্রতি কোভিড নিয়ে একটি ওয়েবিনারে যোগ দিয়ে ‘লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন’-এর প্রফেসর হেইডি লারসন জানিয়েছিলেন, সারা বিশ্বে কোভিড নিয়ে অপপ্রচার চলছে। সেই অপপ্রচারের বক্তব্য হল, কোভিড নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করে মুনাফা লুটতে চাইছে। লারসনের কথায়, ‘‘এই ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। কোভিড কিন্তু সাধারণ নিউমোনিয়ার মতো সহজ রোগ নয়।’’ সংক্রামক রোগের চিকিৎসকদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষের উদাসীনতার পিছনে এই অপপ্রচারের বড় ভূমিকা রয়েছে। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের চিকিৎসক যোগীরাজ রায় বলেন, ‘‘কবে ভ্যাকসিন বের হবে তা কারও জানা নেই। মাস্কই এখন ভ্যাকসিন, এটা ভুললে চলবে না।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায় করোনা-আক্রান্ত, ভর্তি হাসপাতালে
সরকারি চিকিৎসক তথা রাজ্যের গ্লোবাল অ্যাডভাইজ়রি বোর্ডের সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী জানান, এই উদাসীনতার পিছনে মূলত দু’ধরনের মনোভাব কাজ করছে। তাঁর কথায়, ‘‘এক দল রয়েছেন যাঁরা বুঝতে পারছেন না পরিস্থিতি মার্চের থেকেও কত খারাপ। আর এক দল শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। দু’ধরনের মনোভাবই বিপজ্জনক।’’ এই পরিস্থিতিতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার প্রশ্নে প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy