বিলকুমারী গ্রামে আইটিবিপি কনস্টেবল মাসাদুল রহমানের বাড়িতে শোকার্ত পরিজনেরা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
টানা এক বছর বাড়ি আসেননি তিনি। সামনের মাসে আসার কথা ছিল। বিয়ের কথা ছিল। তা আর হল না।
বুধবার দুপুরে বিলকুমারী গ্রামে খবর এল, পাঁচ সহকর্মীকে গুলি করে মেরে আত্মঘাতী হয়েছেন আইটিবিপি কনস্টেবল মাসাদুল রহমান (৩২)। তার পর থেকে গ্রাম জুড়ে ঘুরছে শুধু একটাই প্রশ্ন: কী এমন হয়েছিল? কেন ঘটে গেল এত বড় অঘটন?
এ দিন দুপুরে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মারফত বাড়িতে প্রথম খবর আসে। পরে গাঁয়ের লোকজনও একে-একে জেনে যান। মাসাদুলের মা হানিফা বেগম বলেন, ‘‘খবর শুনে আমরা ছেলের মোবাইলে ফোন করি। ও পাশে কেউ ফোন ধরে বলে, ছেলে ডিউটিতে গিয়েছে। বিকেল ৫টার সময়ে ফিরবে। এখনও সেই আশায় ভর করে আছি...’’ বলতে-বলতেই ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন তিনি।
মাসাদুলেরা চার ভাই, তিন বোন। মাসাদুল সেজো ছেলে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, ছোট থেকেই খেলাধুলোয় দড় ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে আইটিবিপি-তে চাকরি পান। তাঁর বড় ভাই মনিরুল রহমান সৌদি আরবে সিভিক পুলিশে কাজ করতেন। মাস তিন-চারেক আগে বাড়ি এসেছেন। মেজো ভাই মিজান শেখ ব্যবসায়ী। তিন বোনেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বড় ও মেজো ভাইও বিবাহিত।
মাসাদুলের স্কুলের সহপাঠী তথা বাল্যবন্ধু রামিজ শেখ বলেন, ‘‘এ রকম কাজ ও করতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস হয় না।’’ শুধু তিনি নন, গ্রামের কেউই বিশ্বাস করতে পারছেন না। ছোট-বড় সকলের সঙ্গেই ভাব ছিল ছেলেটার! ছুটিতে গ্রামে এলে কত হইহই করত। তা হলে কেন সে এমন কিছু ঘটাবে?
মনোচিকিৎসক সুজিত সরখেলের মতে, অত্যধিক চাপের কাজে অনেক সময়ে কারও-কারও ‘কোপিং রিজার্ভ’ হয় অর্থাৎ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা চলে যায়। তখন তাঁর মনে এমন একটা আচমকা বিস্ফোরণ হয় যা তাঁর স্বভাবজাত নয়। এবং সেই অবস্থায় তিনি যা খুশি করে ফেলতে পারেন। এই অবস্থাকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ‘অ্যাকিউট স্ট্রেস ডিজ়র্ডার’-এর মধ্যেও ফেলা যেতে পারে। পুলিশ বা সেনাবাহিনীর লোকেদের ক্ষেত্রে এই রকম মানসিক অবস্থায় হাতের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকাটা আরও মারাত্মক হয়ে ওঠে।
মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালও মনে করছেন, পুলিশ বা সেনার কাজে অসম্ভব চাপ নিতে হয়। জনবিরল, বিপদঙ্কুল এলাকায় দিনের পর দিন কাটানো। মনোরঞ্জনের উপকরণ নেই, ছুটি নেই, পরিজনদের দেখা নেই। এই ভাবে থাকতে থাকতে ক্ষণিকের জন্য অনেকের ‘সিচুয়েশনাল সাইকোসিস’ হয়। মুহূর্তের জন্য তিনি চূড়ান্ত অস্থির ও ধৈর্যহীন হয়ে পড়তে পারেন। তখন নিজের উপরে তাঁর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কী যে করে ফেলবেন, নিজেও তা এক সেকেন্ড আগে বুঝতে পারেন না।
হয়তো এমনই কিছু হয়েছিল মাসাদুলের, হয়তো... কে জানে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy